হস্তান্তরের আগেই যবিপ্রবির শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামে ফাটল

হস্তান্তরের আগেই যবিপ্রবির শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামে তৈরি হওয়া ফাটল
হস্তান্তরের আগেই যবিপ্রবির শেখ রাসেল জিমনেসিয়ামে তৈরি হওয়া ফাটল  © টিডিসি ফটো

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শেখ রাসেল জিমনেসিয়াম আকারে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। জিমনেসিয়ামটি গত বছরের ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তরের আগেই এর মেঝে ও দেওয়ালের প্লাস্টারে ফাটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও টয়লেটে নিম্নমানের কমোড, ফ্লাশ ও দরজা, টয়লেট পশ্চিমমুখী করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য মতে, মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের পর এটিই দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ জিমনেশিয়াম। ২২ হাজার ২৮০ বগফুটের আন্তর্জাতিক মানের এই জিমনেশিয়ামটি তৈরির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে। কাজ শেষ করে হস্তান্তরের সময় নির্ধারিত ছিল ২০২০ সালের জুন মাসে। কিন্তু জিমনেশিয়ামটির ঠিকাদারির প্রতিষ্ঠান মেসার্স কপোতাক্ষ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শামিম চাকলাদার এন্টারপ্রাইজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারায় হস্তান্তরের সময় গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ায়।

পরবর্তীতে এসব সমস্যার সমাধানের জন্য কুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারদের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল নিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে ৯টি কাজ শেষ করে তা গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। কাজ গুলো হল- মেঝের ক্র্যাক মেরামত (ইনডোর খেলার জায়গায়),সমস্ত মেঝে এবং সিঁড়ি পরষ্কিার করা, টয়লটের ব্লক মেরামত, দরজার শাটার পলিশিং, জানালার সিল মেরামত, র্শীষ তলার অতিরিক্ত পুনর্বিন্যাস কাটা ,র্শীষ ফ্লোরের সিঁড়ি ও আরও কয়েকটি জায়গার কিছু টাইলস পরির্বতন, ক্যাট দরজা ইত্যাদি।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির প্রোজেক্ট সাইট ইঞ্জিনিয়ার জহির বলেন, ‘আমাদের সকল কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদ ইমাম ও ইঞ্জিনিয়ার শফিউল আলমের তদারকি ও নির্দেশনায় হয়েছে। মেঝে ও দেওয়ালের ফাটলের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, তারাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টয়লেটের বিষয়টি আমাদের বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের ১০ ফেব্রুয়ারির আগেই জিমনেশিয়ামটি হস্তান্তর করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে আমি এটা ঠিক করে দিতে পারব না, আমাকে আলাদা করে সময় দিতে হবে। কুয়েট থেকে যেসব ইঞ্জিনিয়াররা এসেছিলেন তারা আমাদের যেসব কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে, আমরা এখন সেগুলো নিয়ে কাজ করছি।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদ ইমাম বলেন, ‘এখনো জিমনেশিয়াটি হস্তান্তর করা হয়নি। বিল্ডিংটি আন্ডার কনস্ট্রাকশনে আছে। মেঝেতে যে ফাটল দেখা দিয়েছে ওটা প্যাটেনস্টোন ফিনিশিং দেওয়া যায় না, লেবেলটা সমান করার জন্য করা হয়। ফাটল দেখা দেওয়ার পরে আমরা কুয়েট থেকে একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল এনেছিলাম। তারা বলেছেন কনস্ট্রাকশনের জয়েন্টের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে। এটাকে মেরামত করার জন্য তারা পরামর্শ দিয়েছেন, সে অনুযায়ী ঠিকাদাররা কাজ করছেন।’

তিনি বলেনম ‘প্লাস্টারের যে ফাটল দেখা দিয়েছে সেটা স্ট্রাকচারের না, এগুলো মেরামত করার জন্য তাদের বলা হয়েছে। এছাড়াও উপরে গ্যালারিতে যে রেলিংটা করা হয়েছে সেটাকে শক্তিশালী করার জন্য আলাদা সাপোর্ট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’ এসময় টয়লেটর সমস্যাকে তিনি ডিজাইনিং সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এ সমস্যা দেখার পর আমরা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করেছি।’

জিমনেসিয়ামটির স্থায়িত্বের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যে ফাটলগুলো দেখা দিয়েছে, এগুলো মূলত প্লাস্টারের ফাটল স্ট্রাকচারের ফাটল নয়। এমন ফাটল যে কোন বিল্ডিংয়ে আসতে পারে। তিনি এই ত্রুটি গুলোর জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, এর কারণে ঠিকাদারির প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দেড় কোটি টাকা আটকে রাখা হয়েছে। এই বিল্ডিং এখনো বুঝে নেওয়া হয়নি, সমাধানের পরেই এই টাকা দেওয়া হবে।’

টয়লেটের কমোড, ফ্লাশ, দরজাগুলায় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা বলেছে এগুলো পরিবর্তন করে দেবে। এজন্য তাদের বিল আমরা আটকে রেখেছি। যখন এগুলো লাগানো হয়েছে, তখন তদারকি কমিটি ও সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী দায়িত্বে ছিলেন। আগে তার সাথে আলোচনা করে কাজগুলো করা হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রতি ঠিকাদারের প্রতিনিধি ইঞ্জিনিয়ার জহিরের অভিযোগকে তিনি নাকচ করে বলেন, ‘এই ভুল-ত্রুটির দায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। ঢালাইয়ের সময় জহির এখানে ছিলেন না, ঠিকাদার প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মিলন। এখানে শুধু আমরাই দেখাশোনা করি না, তদারকি কমিটির সবার পরামর্শে কাজ হয়ে থাকে।’


সর্বশেষ সংবাদ