নিয়ম ভেঙে বিতর্ক পরিচালনায় ছাত্রলীগ নেতা, কুবির কালচারাল ফেস্ট স্থগিত
- শাহাদাত বিপ্লব, কুবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০১:২৩ PM , আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯, ০১:২৩ PM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শিক্ষক সমিতির আয়োজনে বিতর্ক ইভেন্ট নিয়ে তৈরি হওয়া ‘বিতর্ক’কে ঘিরে অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ফেস্ট স্থগিত করা হয়েছে। ফেস্টে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবোটিং সোসাইটিকে পাশ কাটিয়ে বিতর্ক পরিচালানার দায়িত্ব দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসাইনকে। বিতর্ক পরিচালনা ও বিচারকার্যে অসামঞ্জস্যতা এবং বিতর্কের নিয়ম না মানার অভিযোগে কয়েকটি বিভাগ বিতর্ক বর্জন করে।
এছাড়া ডিবেটিং সোসাইটির সদস্যদের তীব্র সমালোচনার মুখে এই ফেস্ট স্থগিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শামিমুল ইসলাম সাংবাদিকদের ফেস্ট স্থগিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, প্রতিবছর অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ফেস্টের বিতর্ক অংশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র সংগঠন ‘কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবোটিং সোসাইটি’কে। তবে এবার ডিবেটিং সোসাইটিকে না জানিয়ে বিতর্ক পরিচালানার দায়িত্ব দেয়া হয় ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসাইনকে। ইভেন্টের প্রথম রাউন্ড শুরু হয় গত শুক্রবার। প্রথম রাউন্ড শেষে স্বচ্ছতার অভিযোগে কয়েকটি বিভাগ বিতর্ক বর্জন করলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন আয়োজকরা।
এসময় বিচারকদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। বিতার্কিকদের অভিযোগ, বিচারকার্যে যাকে বিচারক হিসেবে রাখা হয়েছে সে অন্য আরেকটি বিভাগের বিতার্কিক হিসেবে প্রতিযোগিতা করছে। যা বিতর্কের এবং প্রতিযোগিতার নিয়ম পরিপন্থী। এছাড়াও বিতর্কের ম্যাচ-আপ কোন দলের সাথে কোন দলের তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সামনা-সামনি জানাতে হয়। কিন্তু এখানে তা হয়নি। এছাড়া বিতর্ক পরিচালনায় কোন শিক্ষককেও দেখা যায়নি।
এদিকে অনিয়ম, অসংগতির অভিযোগ এনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা বর্জন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক-তৃতীয়াংশ বিভাগ। এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে শিক্ষক সমিতি এবারের প্রতিযোগিতাটি স্থগিত করে।
অপরদিকে ছাত্রলীগ নেতা ইমনরান বিতর্ক সংগঠন কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবোটিং সোসাইটির অনুষ্ঠান বিষয়ক সম্পাদক। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সর্বত্র তোষামোদ করে নিজেকে স্বচ্ছ দাবী করে বিতর্ক সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানো, সংগঠনে প্রভাব বিস্তার, নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। এছাড়া কমিটিতে শীর্ষ পদ দেওয়ার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করেছেন ডিবেটিং সোসাইটির একাধিক সদস্য।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা ইমরান হোসাইন বলেন, ‘বিতর্ক পরিচালনা নিয়ে যে অভিযোগগুলো এসেছে সব ভিত্তিহীন। একটি মহল উদ্দেশ্য নিয়ে এমন বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’ বিতার্কিক দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বিতার্কিক উপস্থাপক হিসেবে ছিলেন।’ এছাড়া বিচারক হিসেবে শিক্ষক না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকরা ব্যস্ত থাকায় প্রথম পর্বে সময় দিতে পারেননি।’
অন্যদিকে কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি ডিবটিং সোসাইটির বিরুদ্ধে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বহাল রাখা, হলে অবস্থানরত তথা রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত বিতার্কিকদের বিতর্কের সুযোগ না দেওয়া এবং কমিটিতে পদ থেকে বঞ্চিত করা, হলগুলোতে বিতর্ক চালু করতে ব্যর্থ হওয়াসহ নানাবিধ অভিযোগ করেছেন শাখা ছাত্রলীগ নেতারা।
এসব বিষয়ে ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি আদনান কবির সৈকত বলেন, ‘ডিবেটিং সোসাইটি (ডিএস) গতবছর সফলতার সাথে অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কালচারাল ফেস্টের বিতর্ক অংশ পরিচালনা করেছে। এবারও আমরা তা করতে প্রস্তুত ছিলাম।
এসময় ডিএস’র বিরুদ্ধে অভিযোগকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা যোগ্যদের সবময়ই মূল্যায়ন করি। একজন বিতার্কিকের বিতর্ক ব্যতীত অন্য কোন পরিচয় আমাদের কাছে মুখ্য নয়। ইমরান নিজেও রাজনৈতিক দলের (ছাত্রলীগের নজরুল হল শাখার সভাপতি) সাথে সম্পৃক্ত এবং ডিএস এর অনুষ্ঠান পরিচালনা বিষয়ক সম্পাদক। ডিএস প্রতিবছরই ডিবেটর সার্চ প্রোগ্রাম, আন্তঃবিভাগ এবং আন্তঃহল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে।’
অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার সমন্বয়ক মেহেদী হাসান বলেন, ‘আয়োজকরা আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে আমি সে মোতাবেক কাজ করেছি। তাদের নির্দেশেই এখন স্থগিত রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে আমরা বিতর্ক ব্যতীত সব প্রতিযোগিতা প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছি।’
সার্বিক বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চেয়েছি একটা সফল আয়োজন হোক। কিন্তু একটা অনাকাঙ্খিত অবস্থা তৈরি হওয়ায় শিক্ষক সমিতির সভায় তা স্থগিতের সিদ্ধান্ত আসে এবং দু’একদিনের ভিতরে সব পক্ষের সাথে আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে।’