ওসমান হাদি ও দিপু হত্যার প্রতিবাদ ইবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

বিশ্ববিদ্যালয়ের  বটতলা চত্বরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা চত্বরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ  © টিডিসি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি ও ময়মনসিংহের ভালুকায় পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলা চত্বরে সমবেত হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাস বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনের ভবনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছোট্ট আয়েশাকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান।

বিক্ষোভে পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পংকজ রায়সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। 

বিক্ষোভ মিছিল তারা ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনিরা কেন বাইরে’, ‘হাদী ভাইয়ের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’, ‘দীপু দাসের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’ এবং ‘ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

বক্তারা বলেন, ‘আবু সাঈদ, আবরার ফাহাদ ও ওসমান হাদি—যারা ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাদেরই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ। এদিকে র‍্যাব গতকাল জানিয়েছে, এ ঘটনায় ধর্ম অবমাননার কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। দিপু দাস ছিলেন ওই কারখানার একজন সচেতন ও অধিকার আদায়ে সোচ্চার কর্মী। সম্প্রতি তার পদোন্নতি হওয়ায় সহকর্মীদের ঈর্ষা থেকেই পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমরা এসব হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং জড়িত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।’

ল অ্যান্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের খোকন বর্মন বলেন, ‘অপরাধীকে কোনো ধর্মীয় বা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। অপরাধী মানেই অপরাধী। আমরা এখানে কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে আসিনি, বরং হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে এসেছি। ১৮ ডিসেম্বর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একজন মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যার সঙ্গে জড়িত তথাকথিত তোহিদী জনতার বিচার চাই। আমরা চাই এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার আগে শতবার চিন্তা করে।’

পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পংকজ রায় বলেন, ‘শরিফ ওসমান হাদির মতো একজন মানুষকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে খুনি সেদিনই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়—এটি প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা। এতগুলো গোয়েন্দা সংস্থা থাকার পরও কীভাবে একজন খুনি নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়, সে প্রশ্ন আজ সবার। একইভাবে ময়মনসিংহের ভালুকায় যে নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, সেটাও ব্যর্থ প্রশাসনেরই ফল। আমরা অবিলম্বে সব হত্যাকারীর গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপরাধ করার সাহস না পায়।’

উল্লেখ্য, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীর বিজয়নগরে গণসংযোগকালে চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন। পরে ঢাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকায় পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানায় ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাশকে হত্যা করা হয়। প্রথমে তাকে কারখানার বাইরে মারধর করা হয়, পরে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ধর্ম অবমাননার প্রমাণ পায়নি উল্লেখ করে সন্দেহভাজন ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!