প্রস্তাবিত সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটির খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন

সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি
সেন্ট্রাল ইউনির্ভাসিটি  © টিডিসি সম্পাদিত

সাত কলেজের বিদ্যমান কাঠামো, স্বতন্ত্র সত্তা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে কলেজিয়েট মডেলে নতুন অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি ও প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ বাতিল চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানিয়েছেন সাত কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় বিজ্ঞাপনী কলামে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুসের বরাবর এই খোলা চিঠি দেওয়া হয়। এতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক প্রস্তাবিত স্কুলিং মডেলের অধ্যাদেশের বিপরীতে ৫টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি নির্ধারিত কার্যপরিধির বাইরে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ (১৮৪১), ইডেন (১৮৭৩), কবি নজরুল (১৮৭৪), বদরুন্নেসা (১৯৪৮), সোহরাওয়ার্দী (১৯৪৯), মিরপুর বাঙলা (১৯৬২) ও তিতুমীর (১৯৬৮) কলেজ বিলুপ্ত করে সাত কলেজের সব সম্পত্তি স্কুলিং মডেলে একটি একক হাইব্রিড বিশ্ববিদ্যালয় (অনলাইন ও অফলাইনে ক্লাস) ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’-এর নামে হস্তান্তরের প্রস্তাব করে। সাত কলেজের সম্পত্তি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা হলে কলেজের অস্তিত্ব থাকার সুযোগ নেই।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কোনো সমীক্ষা ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ছাড়াই ২০১৭ সালে ৭ কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তারা শিক্ষার কোনো মানোন্নয়নই করেনি; বরং ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি চরম অবহেলা ও বৈষম্য দেখায়। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ বিলম্বে তীব্র সেশনজট হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গ্রুপিং ও দলাদলিতে অতিষ্ঠ হয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে নতুন একটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করে।

প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠিতে আরও বলা হয়, ৭ কলেজের বিদ্যমান কাঠামো, স্বতন্ত্র সত্তা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে অধিভুক্তির জন্য আগের মতো কলেজিয়েট মডেলে নতুন একটি অ্যাফিলিয়েটিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি এবং পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগসহ শিক্ষার্থীদের আবাসন, পরিবহন, ল্যাব, লাইব্রেরি, শিক্ষা বৃত্তির সুযোগ বৃদ্ধি করা।

সাত কলেজের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদেরর ৫ দফা পর্যবেক্ষণসমূহ হলো:
>> ১৮৫ বছরই দেশসেরা ঢাকা কলেজসহ ৭ কলেজ বিলুপ্ত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিলুপ্ত হবে বা হুমকির মধ্যে পড়বে। এমনকি ঢাকা মহানগরীতে ভাল অবকাঠামো ও মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষার কোনো কলেজ থাকবে না।

>> একই ক্যাম্পাসে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় দুটো পৃথক প্রশাসনের অধীনে সময়, শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, লাইব্রেরি, ক্রীড়াকক্ষ, কো-কারিকুলার কার্যক্রম, হোস্টেল, ডাইনিং, ক্যান্টিন এসব শেয়ারিং অদ্ভুত ও বায়বসম্মত নয়। এতে কেবল সংকট ও নানান জটিলতা সৃষ্টি করবে।

>> দেশের নারী শিক্ষার পথিকৃৎ বা আলোকবর্তিকা ইডেন মহিলা কলেজ ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ক্যাম্পাসে ছেলেরা ক্লাস করবে, এটি কোনোভাবেই মানতে রাজি নয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ ছাড়া হোস্টেল, ডাইনিং, ক্যান্টিন শেয়ারিং কীভাবে হবে, এ ভয়েও তারা আতঙ্কিত!

>> প্রস্তাবিত খসড়া অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশকে ক্লাস ও পরীক্ষার জন্য মহাখালী, মিরপুর, নিউমার্কেট, আজিমপুর, বকশীবাজার, লক্ষ্মীবাজার ও সদরঘাটে অবস্থিত সাত ক্যাম্পাস মানে পুরো ঢাকা শহর ঘুরতে হবে। কারণ, বর্তমান সাত কলেজে সমান আবাসিক সুবিধা নেই এবং বৃদ্ধির সুযোগও সীমিত। যানযটে নাকাল ঢাকায় এটি সম্ভব নয়।

>> ৭ কলেজের প্রায় ২ লাখ শিক্ষার্থীর অধিকাংশ গ্রাম ও শহরের সাধারণ পরিবারের সন্তান। তারা মাসিক ২০/২২ টাকা বেতনে পড়াশোনা করে। ৭ কলেজ বিলুপ্ত করে প্রয়াবিত একক স্কুলিং মডেলে হাইব্রিড বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষার্থী সংখ্যা মোট ৮-১০ হাজারে নেমে আসবে। বাধ্য হয়ে তাদের অনেককে ১০-১৫ লক্ষ টাকায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হবে। অথচ ৭ কলেজের অনেক শিক্ষার্থী টিউশনি ও পার্টটাইম জব করে নিজের পড়াশোনার খরচ চালায়, এমনকি অনেকে পরিবারকেও সহযোগিতা করে। বিসিএস, ব্যাংক সহ বিভিন্ন চাকুরির প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার জন্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ পছন্দ ৭ কলেজ। তাই এসব কলেজ বিলুপ্ত হলে শিক্ষা সংকোচনের পাশাপাশি এতে নারী শিক্ষার অগ্রগতি বৃদ্ধ হবে। অনেকের ধারণা, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে সুযোগ করে দিতে এসবের পাঁয়তারা হচ্ছে।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!