আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতি গঠনের শেকড় শিক্ষকের হাতে

০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৩৩ AM
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রকিবুল হাছান রিয়াদ, মুনিয়া আফরোজ ও উম্মে জান্নাত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রকিবুল হাছান রিয়াদ, মুনিয়া আফরোজ ও উম্মে জান্নাত © টিডিসি সম্পাদিত

বিশ্ব শিক্ষক দিবস প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবার ভিন্ন ভিন্ন দিনেও উদযাপিত হয়। বিংশ শতাব্দী থেকে এটি পালিত হয়ে আসছে। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’। এই দিনটি শিক্ষকদের শিক্ষা ও উন্নয়নে অসামান্য ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০টি দেশে এটি উদযাপন করা হয়। দিবসটি পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে।

২০২৫ সালে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘শিক্ষকতাকে একটি সহযোগী পেশা হিসেবে পুনর্গঠন’। এই প্রতিপাদ্যের মূল ধারণা ছিল শিক্ষকদের জন্য এমন একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করা, যা শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষকদের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় 'বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন নীতিমালা ২০২৫' প্রকাশ করে এবং উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে র‍্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে দিবসটি উদযাপন করে। 

যিনি জ্ঞানের আলো সূর্যের মতো চতুর্দিকে বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সবকিছু আলোকিত করে নতুন দিবসের উন্মেষ ঘঁটান, তিনিই শিক্ষক। সুতরাং হৃদয়কে আলোকিত করার জন্য অবশ্যই একজন শিক্ষকের প্রয়োজন। শিক্ষক ব্যতীত কোনো মানবসন্তান নিজেকে কখনো আলোকিত করতে পারেনি কিংবা পারে না। শিক্ষকরা সমাজ পরিবর্তনে এবং শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণে ও তাদের মধ্যে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ভিত তৈরিতে বাতিঘর হিসেবে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘শিক্ষক হচ্ছে মোমবাতির ন্যায়, নিজে জ্বলে অন্যকে আলো দেয়। শিক্ষকগণকে প্রতিনিয়ত জ্ঞানার্জন করতে হবে, তবেই না শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক, বিশ্লেষণধর্মী ও মূল্যায়নমূলক শিক্ষা বিতরণ করবে।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রকিবুল হাছান রিয়াদ বলেন, আমার দাদা ছিলেন প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। দাদাকে চোখে দেখিনি। কিন্তু মাঝে মধ্যে দাদার প্রাক্তন স্টুডেন্টদের মুখে দাদার গল্প শুনলে গর্বে বুক ভরে যেত। আমার বাবাও প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক। বাবার স্কুলে পড়ার সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখেছি ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক। এখনও বাবার অনেক প্রাক্তন ছাত্র আমাদের বাড়ি এসে বাবার সঙ্গে দেখা করে যান। আর বাবাই আমার প্রথম শিক্ষক। সেটা হোক প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা পারিবারিক। তাই শিক্ষক দিবস বলতে আমি আমার বাবাকেই বুঝি।

লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মুনিয়া আফরোজ বলেন, প্রতিটা শিক্ষার্থীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন শিক্ষক। ভালো শিক্ষকের ছায়ায় থেকে শিক্ষার্থীরা যে কেবল পাঠ্য বইয়ের শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তা নয় বরং নিজেদের সৎ এবং সাহসী করে গড়ে তুলতে পারে, নিজেদের নিয়ে যেতে পারে স্বপ্নের সর্বোচ্চ চূড়ায়। শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ঠিকভাবে পালন না করলে এবং শিক্ষার্থীদের সঠিক পথ না দেখালে একজন শিক্ষার্থী কখনোই পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে না। মানুষ গড়ার কারিগর তথা শিক্ষকদের দিন আজ। এই মহান দিনে আমাদের চাওয়া ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল শিক্ষক। তাদের হাত ধরেই গড়ে উঠুক একের পর এক সভ্য, সুন্দর এবং শিক্ষিত প্রজন্ম।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে জান্নাত বলেন, শিক্ষক শব্দের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেখানে একটি মাত্র শব্দ আরও কতগুলো শব্দকে ধারণ করে। আলোকিত, জ্ঞানী–গুণী ও বুদ্ধিদীপ্ত পণ্ডিত ব্যক্তি, যিনি শিক্ষা দিতে নিবেদিত প্রাণ এবং উত্তম চরিত্রের অধিকারী। শিক্ষা যদি হয় জাতির মেরুদণ্ড সেখানে শিক্ষক একজন কারিগর, যিনি একটি সুন্দর ও শিক্ষিত জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখেন। যিনি দায়িত্বসম্পন্ন ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে অনুকরণীয়। একজন আদর্শ শিক্ষক সবসময়ই তার কাজের প্রতি যত্নশীল। শিক্ষক দিবসে স্বরণ করছি সকল শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের।
শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য একজন শিক্ষকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রয়োজন। শিক্ষকতা পেশার গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষকদের সম্মানজনক বেতন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন খুবই সামান্য যা শিক্ষকদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় ফেলে। শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বপ্রথম শিক্ষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষার বিরাট একটা অংশ জুড়ে আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত একটা চিত্র যদি চিন্তা করি - সেখানে অধিকাংশ শিক্ষক রুটিনমাফিক ক্লাস নেন না, কোর্স সঠিক সময়ে শেষ করেন না বা কোর্সের অনেক বিষয়ই পড়ান না- এতে শিক্ষার্থীরা পড়ে বিপাকে, পরীক্ষার খাতায় নাম্বার টেম্পারিংসহ অসংখ্য অভিযোগ নিয়মিত চোখে পড়ে। শিক্ষকদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করা একজন শিক্ষকের অন্যতম দায়িত্ব এবং কর্তব্য। পাশাপাশি উত্তম চরিত্র ধারণ করা, কথা ও কাজের মিল রাখা একজন শিক্ষকের সম্মান অনন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। প্রত্যাশা করি, আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরা উপরোক্ত বিষয়গুলো যথাযথভাবে খেয়াল করবেন এবং শিক্ষার্থীদের নতুন কিছু শেখার সুযোগ করে দেবেন। কারণ আপনারাই পারেন একজন মানুষকে আলোর পথ দেখাতে, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে। সবশেষে সকল শিক্ষককে জানাই শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা।

‘ম্যাচ জেতানো মানুষ হতে চাই, বাংলাদেশে অতিথিপরায়ণতাও দারুণ’
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
নিষিদ্ধ হিযবুত তাহরীরের পোস্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্…
  • ০১ জানুয়ারি ২০২৬
পদত্যাগের আগেই এনসিপির গ্রুপ থেকে বের করে দেয়া হয় তাসনিম জা…
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
‘এর চেয়ে বিকট আওয়াজ আর আগুন তোমাকে দিশেহারা করার অপেক্ষায়’
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
বছর শেষে দুঃসংবাদ পেলেন এমবাপে
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
মেট্রো স্টেশনের প্লাটফর্মেও খালেদা জিয়ার জানাজা আদায় করলেন …
  • ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫