সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে থাকবে এইচএসসি, হাইব্রিড পাঠদান ও ল্যাপটপসহ যত উদ্যোগ

ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজ নিয়ে চার ধাপে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় চালুর প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন হবে। বিষয়টি নিয়ে সোমবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা। এ সময় জানানো হয়, পাঁচটি কলেজে বিদ্যমান এইচএসসি পর্যায়ের পড়াশোনাও অব্যাহত রাখা হবে। থাকছে হাইব্রিড পদ্ধতিতে পাঠদান, ল্যাপটপ ও কম খরচে ইন্টারনেটের মতো নানান ব্যবস্থা। পুরোনো শিক্ষার্থীরা আগের অ্যাকাডেমিক কাঠামোতে তাদের পড়াশোনা শেষ করবেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে ধাপে। খসড়া আইন অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারির পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর হচ্ছে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে উপাচার্য নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলবে।

এ সময় জানানো হয়, সবার জন্য সুবিধাজনক স্থানে প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস নির্ধারণ করা হবে। বিরাজমান বাস্তবতা এবং সীমাবদ্ধতাকে বিবেচনায় নিয়ে নতুন ধরণের কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে। স্কুলগুলোর পরিচয় হবে কলেজভিত্তিক।

সাতটি কলেজ চারটি স্কুলে School of Sciences, School of Arts and Humanities, School of Business Studies, School of Law and Justice বিভক্ত করে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

সাত কলেজের পাঁচটিতে পূর্বের ন্যায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় চালু থাকবে। স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা টাইম, স্পেস ও রিসোর্স শেয়ারিং পদ্ধতিতে একই ক্যাম্পাস ব্যবহার করবে। বিভিন্ন পর্যায়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা পূর্বের বিদ্যমান অ্যাকাডেমিক কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করবেন। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া, রেজাল্ট দ্রুত প্রকাশ করা, সেশনজট কমাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা হবে ইন্টারডিসিপ্লিনারি (Interdisciplinary) ও হাইব্রিড ধরনের, যেখানে ৪০ শতাংশ অনলাইন ও ৬০ শতাংশ অফলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। সব ধরনের পরীক্ষাসমূহ সশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। ইন্টারডিসিপ্লিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব শিক্ষার্থী প্রথম চারটি সেমিস্টার নন-মেজর কোর্স অধ্যয়ন করবে। পরবর্তী চার সেমিস্টার ডিসিপ্লিন অনুযায়ী মেজর কোর্স অধ্যয়ন করবে। 

পঞ্চম সেমিস্টারে শর্তপূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ইচ্ছানুযায়ী ডিসিপ্লিন পরিবর্তন করতে পারবে। তবে ক্যাম্পাস পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিচালিত হবে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, সিনেট ও সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে। একজন প্রক্টর থাকবেন। এছাড়া প্রতিটি কলেজে একজন পুরুষ এবং একজন নারী ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন। অর্থাৎ সাত কলেজে ১৪ জন ডেপুটি প্রক্টর থাকবেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং কলেজসমূহের প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগকৃতদের বণ্টন করা হবে। বাজেট গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। প্রতিটি কলেজে থাকবে আধুনিক মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন ব্যবস্থা।

কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া পরিচালিত হবে। প্রতি ডিসিপ্লিনে যৌক্তিকভাবে ছাত্র সংখ্যা নির্ধারণ করবে কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে প্রথম বর্ষেই ল্যাপটপ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী প্রদান করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সেবা প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে। প্রশাসনিক কার্যক্রম (ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন, আবেদন) আইটি বেজড ডিজিটাল সিস্টেমে সম্পাদিত হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের যেকোনো ধরনের অনুসন্ধান আইটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে করতে পারবে।

আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা কলেজ শিক্ষার্থীরা পাবেন কিনা প্রশ্নের জবাবে যা পাওয়া গেল

উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করে মহানগরের সাত কলেজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমকক্ষ একটি স্বতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রূপরেখার প্রস্তাবসম্বলিত একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কলেজগুলো হলো, ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ। এগুলো দেশের সব সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাথে ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোয় অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক নানা জটিল সংকটের সৃষ্টি হলে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিদ্যমান সংকট নিরসনের নিমিত্ত ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। এখানেও অধিভূক্তির পর সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সংকট আরো ঘনিভূত হওয়ায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নতুন স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে কলেজগুলোকে পরিচালনার দাবি জানায়।


সর্বশেষ সংবাদ