ঢাকা কলেজে মানহীন খাবারের চড়া দাম, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ক্ষোভ
- ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৭ AM , আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৫ PM

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবারের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করে ক্যাম্পাসে থাকা বিভিন্ন হোটেল ও খাবারের দোকান। তবে এসব জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং নিম্নমানের খাবার অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। বার বার এ বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
দক্ষিণ হলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাহি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খাবার খাওয়া হয় দেহে শক্তি যোগাতে, মনকে প্রফুল্ল রাখতে। কিন্তু হোটেলগুলোয় যা বিক্রি হয়, তা যেন বিষ! না মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, না ঢেকে রাখা হচ্ছে খাবার। ডায়রিয়া, পেটের পীড়া আর ফুড পয়জনিং যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। তবুও হলগুলোতে খাবারে নিম্নমান এবং ক্লাস-পরীক্ষার চাপে এ খাবার খেতে হয়। দীর্ঘ সময় তা গ্রহণের ফলে বড় ধরনের শারীরিক জটিলতার সম্ভাবনাও রয়েছে। এসব বন্ধ করতে হলে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়াতে হবে।’
অস্বাস্থ্যকর প্লাস্টিকের পুরোনো বোতলে খোলা লাইনের পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পুরোনো পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করে সিংগারা, পুরি, মাছ, মাংস ও বড়া ভাজা হচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কালো পাতিলে রান্না করা হচ্ছে মাছ-মাংস।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ, তারা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দাম দিয়ে মানহীন খাবার গ্রহণ করছেন। বিভিন্ন সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিষয়ে অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কলেজ প্রশাসন, দাবি শিক্ষার্থীদের।
তারা বলছেন, প্রশাসনের পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে হোটেলে এবং দোকানের মালিক খাবারের মান ও মূল্য নিয়ে লাগামহীনভাবে অনিয়ম করে চলেছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির স্থায়ী কোনও সমাধান মিলছে না।
সরেজমিনে ক্যাম্পাসের ভুট্টোর হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, অস্বাস্থ্যকর প্লাস্টিকের পুরোনো বোতলে খোলা লাইনের পানি খেতে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পুরোনো পোড়া তেল বারবার ব্যবহার করে সিংগারা, পুরি, মাছ, মাংস ও বড়া ভাজা হচ্ছে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে কালো পাতিলে রান্না করা হচ্ছে মাছ-মাংস।
এসব সত্ত্বেও খাবারের দাম বাইরের হোটেল বা রেস্টুরেন্টের সমতুল্য।এছাড়া প্লেটগুলোও ব্যবহার শেষে ভালোভাবে না ধুয়ে, হালকা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আবার খাবার পরিবেশন করতে দেখা যায়। এ সময় ইলিয়াস হলের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান বলেন, ‘দাম অনেক বেশি, কিন্তু মান এতো খারাপ যে মুখে তোলার মতো না। বাইরেও একই দামে পাওয়া যায়। আবার মাঝে মাঝে পচা সবজি দিয়ে রান্না করে।’
উত্তর ছাত্রাবাসের আরেক এক শিক্ষার্থী মিজানুর রহমানের ভাষ্য, অন্য কোথাও ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে এখানে খেতে হচ্ছে। তারা যে পরিবেশে খাবার পরিবেশন করে, তার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
আরও পড়ুন: রাজধানীর ৬৩ শতাংশ স্কুলে নেই যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি
খাবারের মান ঠিক রেখে সবার সম্মতিক্রমে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা কলেজ শাখার ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন সিসিএসের সহ-সভাপতি জিহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ছাত্রদের পক্ষ থেকে নানান অভিযোগ এসেছে, তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি রাখে। এ নীতিমালার অবনতি হলে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি বিষয়টি।’
তিনি বলেন, ‘কলেজ প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, তারা এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেবে। তাদের মধ্যে ধীরগতি পরিলক্ষিত হলে আমরা একাধিকবার জানিয়েছি। কলেজ প্রশাসনকে অবগত করার পরও এটার কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তবে আমাদের সংগঠনের সক্রিয়তা এখনো বজায় আছে। কলেজ প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকার ক্ষেত্রে দুর্বলতা লক্ষ্য করছি।’
অভিযোগ অস্বীকার করে দোকানি মানিক ভুট্টো বলেন, ‘আমি সব সময় পরিষ্কার থাকার চেষ্টা করি। আপনারা যদি প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে ব্যবস্থা নিয়েন। স্যার যে মূল্য তালিকা দিয়ে গিয়েছিলেন, আমি তা মেনে চলি।’
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কে এম ইলিয়াস বলেন, ‘আমরা সিসিএসের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করে থাকি। আমরা কয়েকবার সতর্কও করেছি। পরবর্তীতে যদি আবার এমন করে, প্রমাণ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’