নাম পরিবর্তনের দাবিতে বন্ধ গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, গুচ্ছ পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা

নাম পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা
নাম পরিবর্তনের দাবিতে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা  © টিডিসি ফটো

গাজীপুরে কালিয়াকৈরে অবস্থিত বিশেষায়িত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’র নাম পরিবর্তনের দাবিতে টানা আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এখনো তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় সব ভবনে তালা মেরে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ক্লাস পরীক্ষা ও একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আসন্ন গুচ্ছভিত্তিক ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নামে প্রকাশিত সরকারি গেজেট প্রত্যাখ্যান করে নতুন নামকরণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেন এবং মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলনসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেন। এর পূর্ব নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ।

তবে যথাযথ আশ্বাস না পেয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা রেল অবরোধ করতে বাধ্য হন। সেদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আক্তার তিন সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দেন। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় ৮ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউনের ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন : ডাকসু নির্বাচনের আগে প্রশাসনে থাকা আওয়ামী সমর্থকদের বিচার চায় ছাত্রদল

এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ‘গাজীপুর’ থাকবে না এবং ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নামটিও মৌলিকভাবে ভুল ধারণার প্রতিফলন। তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা থেকে সরে এসে নতুন ও যথার্থ নামকরণের ইঙ্গিত দেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা শাটডাউন সাময়িকভাবে শিথিল করলেও দীর্ঘ তিন সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু নাম পরিবর্তনের কোনো আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এতে তারা পুনরায় হতাশ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টারনেট অব থিঙ্ক অ্যান্ড রোবটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইওটি) বিভাগের ফখরুল হাসান ফয়সাল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনের সূচনা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি। শিক্ষার্থীরা ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’র নাম প্রত্যাখ্যান করে নতুন নাম বাস্তবায়নের জন্য ইউজিসিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আমরা কোনো কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া না পেয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি রেল ব্লকেড করি। সেখানে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আকতার ম্যাম আমাদের তিন সপ্তাহের মধ্যে এর সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু সময় ফেরিয়ে গেলেও কিছুই করেননি তারা।’

আরও পড়ুন : সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি শুরু

তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান সংকট নিরসনের যথাযথ ব্যবস্থা চাই এবং যদি অতি দ্রুত আমাদের দাবি মানা না হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে এবং আমাদের অবস্থান কর্মসূচিও চলমান থাকবে।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে আন্দোলনকারী ফখরুল হাসান বলেন, ‘১৩ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদের আশ্বাসে এবং চলমান শাটডাউন শিথিল করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা যথাযথভাবে অব্যাহত রাখার অনুরোধ ‘সি’ এবং ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বাস্তবায়নের ফোরামের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু আমাদের দাবির কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় আসন্ন ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে দেব না।’

ফখরুল হাসান বলেন, ‘আজ মঙ্গলবার বেলা ২টা থেকে আবারও অবস্থান কর্মসূচিতে বসবে শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি অনির্দিষ্টকালের জন্য চলবে। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের দাবি আদায় করে ছাড়ব। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

সাইবার সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিক ইমরোজ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা চাই দ্রুত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হোক। যদি তা করা হয়, তাহলে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করে ছাড়ব।

উল্লেখ্য, আগামী শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সারা দেশে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির ৩০০০-এর অবেশি শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

আরও পড়ুন : এবার কুয়েট শিক্ষকদের আন্দোলন তুঙ্গে, ৫ দফা দাবিতে আল্টিমেটাম

তবে এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

উপাচার্য অধ্যাপক আবু ইউসুফ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি ছাত্রদের নাম পরিবর্তনের দাবির বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ প্রশাসনের সব জায়গায় কথা বলেছি। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে এর একটা সমাধান আসবে। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছি। শিক্ষকদের সঙ্গে এ নিয়ে মিটিং চালিয়ে যাচ্ছি।

‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, পরীক্ষা সময়মতো অনুষ্ঠিত হবে। আশা করি শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সহযোগতিা করবে। তাদের সঙ্গে আমরা আরও কথা বলব এবং সব দাবি পূরণে আমরা সচেষ্ট আছি। ইনশাআল্লাহ একটা সমাধান হয়ে যাবে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence