বেরোবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি অভিযোগ, স্ক্রিনশট ফাঁস

অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলাম
অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলাম  © সংগৃহীত

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তার এক ছাত্রীকে যৌন হয়রারির অভিযোগ উঠেছে। মেসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশটগুলো প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পেজ এবং গ্রুপে শিক্ষক রশীদুল ইসলাম এবং ওই ছাত্রীর  মেসেঞ্জারে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ফাঁস হয়েছে। ভুক্তভোগী তার নাম-পরিচয় গোপন করে এসব স্ক্রিনশট প্রকাশ করেন।

স্ক্রিনশটের লেখাগুলোয় দেখা যায়, শিক্ষক রশীদুল ইসলাম বলেন, ‘মিষ্টি মেয়ে একটা!’ উত্তরে ছাত্রী বলেন, ‘থ্যাংক ইউ স্যার, আপনি খুব ভালো মনের মানুষ।’ এবার শিক্ষক বলেন, ‘তোমাকে কী যেন করতে বলেছিলাম?’ ‘শিক্ষার্থী উত্তরে বলেন, ‘বাসায় যেতে! আর আপনার বাসায় গেলে কেউ যদি দেখে ফেলে, কি না কি হবে।’

বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস লেখেন। পরে সেটি বিভিন্ন পেজে ছড়িয়ে পড়ে।

পোস্টে শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে ছাত্রী বলেন, ‘আমি পরিসংখ্যান নবম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী। আমি আমার ডিপার্টমেন্টের রশীদুল স্যারের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি। শুরুতেই আমি ডিপার্টমেন্টে তার নজরে আসি আমার মুখের হাসির (উনার ভাষ্যমতে) জন্য। আমার সাথে এভাবেই উনি কমপ্লিমেন্ট দিয়ে কথা বলা শুরু করে। তারপর ইনবক্সে নক দিয়ে নানাভাবে পড়ালেখার খোঁজখবর নেন এবং আমি সরল মনে বিশ্বাস করি আমি অনেক দূর থেকে এসেছি, তাই এভাবে খোঁজ নিচ্ছে। এভাবে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের ডিপার্টমেন্টের পিকনিক হয়, সেখানে তার বউয়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর একদিন তার বউ আমাকে নক দিয়ে বলেন, আমাদের এলাকায় কী কী খাবার (যেটা ফেমাস) পাওয়া যায়, যেটা উনি খেতে চান আর আমিও বাসায় গিয়ে তাকে দিয়ে আসি (যেহেতু সরাসরি চেয়েছে)। এভাবেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয় তার সাথে আমার।’

আরও পড়ুন : ছাত্রদলের দাবি প্রসঙ্গে যা বলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

‘এরপর আমি আমার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারের সাথে তার রুমে যাই। দু-একবার উনি আমাকে বলেছিলেন ক্লাসের লেকচার না বুঝলে তার কাছ থেকে গিয়ে বুঝায় নিতে। এটাও আমি খুব সরল মনে বিশ্বাস করি কারণ আমার সাথে থাকা বান্ধবীরা প্রায়ই যেত তার কাছে। আমিও তাদের সাথেই যেতাম। এভাবে এভাবে চলতে চলতে উনি ইনবক্সে কথা বলা বাড়িয়ে দেন এবং এক পর্যায়ে আমার শাড়ি পরা ছবি চান। ব্যাপারটা ইমিডিয়েটলি আমি আমার কাছের এক বান্ধবীকে জানাই যে স্যার আমার কাছে এভাবে শাড়ি পরা ছবি চেয়েছে আমি কি দিব? সে আমাকে বলে, স্যার আমার কাছেও চেয়েছিল। আমি স্যারকে বলি, স্যার, আমার শাড়ি পরা কোনো ছবি আপাতত নেই।’

ছাত্রী লেখেন, ‘কিছুদিন পর আমাদের ভাইবা হয় আর আমি সেখানে শাড়ি পরি। আর এ সময় উনি আমার কাছাকাছি এসে বারবার ছবি তোলেন। বিষয়টা অনেক বেশি অকওয়ার্ড হলেও আমি সবার সামনে কিছু বলতে পারি না। এরপর আমি কিছুটা ইগনোর করা শুরু করলে উনি আমাকে নক দিয়ে ওনার চেম্বারে যেতে বলেন। আমি তখনো ভাবিনি এত এত লোকের ভিড়ে উনি কিছু বলবেন বা কিছু করার সাহস পাবেন। এতটুকু ভরসা নিয়ে আমি তার রুমে যাই। উনি তখন শুরুতে আমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল শুরু করে বলেন, “তুমি এত দূর থেকে পড়াশোনা করতে এসেছ, কোনোভাবে যদি তোমার রেজাল্ট খারাপ হয় বাবা-মায়ের কাছে কী জবাব দেবে?” এরপর উনি আমাকে বলেন, “তোমার কোনো আইডিয়া আছে একজন ভার্সিটি টিচার সম্পর্কে? তোমার পাস-ফেল সবকিছুই আমার হাতে। আমি যেভাবে বলব, তোমাকে সেভাবেই শুনতে হবে। এভাবে তোমার সিনিয়ররাও পাস করে গেছে।”’

‘এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর করোনা চলে আসে। আমিও বাসায় চলে যাই আর আমার আইডি ডিলিট করে দিই। কিছুদিন পর অন্য একটি আইডি খুললে উনি আমাকে খুঁজে খুঁজে আবার রিকোয়েস্ট দেয় আর মেসেজ দিয়ে বলেন, “তুমি কি আমাকে ব্লক করে দিয়েছ?” আমি তাকে বলি, আমার আইডি নষ্ট হয়ে গেছে। পড়ানোর সময় সবকিছু আনসার টেন থাকার কারণে আমি ভাবছি যা হওয়ার হবে, তাই তার সাথে ওই সময় কোনো যোগাযোগ রাখিনি। কিন্তু বিপত্তিটা করোনা-পরবর্তী সময়ে ঘটল।’

আরও পড়ুন : ‘নীলফামারীতে নির্মাণ হবে চীন সরকারের হাসপাতাল’

ছাত্রী বলেন, ‘ডিপার্টমেন্টে আবার ব্যাক করার পর তিনি তার বউয়ের আইডি থেকে নক করতেন। শুরুতে আমি ব্যাপারটা ধরতে পারিনি। এরপর আমাদের অনার্সের প্রজেক্টের সময় চলে আসে, আমার রোল ডিপার্টমেন্টের অন্য একজন শিক্ষকের আন্ডারে আসে কিন্তু উনি আমাকে ফোর্স করে অ্যাপ্লিকেশন দেওয়ায় তার গ্রুপে আসার জন্য এত কষ্ট করে এতদিন পড়াশোনা করে আসলাম, এখন তিনটা কোর্সে তিনি যেন ফেল করায় দিতে বাধ্য না হন। এসব ভয়ে আমি অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়ে তার গ্রুপে আসি। এভাবে প্রজেক্টের কাজে একদিন আমার বান্ধবীসহ তার রুমে গেলে প্রজেক্ট নিয়ে নানা আলোচনা করার পর তিনি আমার বান্ধবীকে বলেন, “তুমি সিঁড়ির কাছে একটু যাও, তোমার বান্ধবীর সাথে আমার একটু কথা আছে। আমি তো বাঘ না ওকে খেয়ে ফেলব।” পরে উনি সরাসরি আমাকে বলেন, “তুমি কি জানো ক্লাসে যখন পড়াই, আমার পড়ানো থেকে তোমার দিকে মনোযোগ বেশি থাকে? তোমাকে দেখলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না।” এর থেকেও আরও অনেক নোংরা নোংরা সেনসিটিভ কথা বলেন তিনি, যা আমি পাবলিকলি বলতে পারব না।

‘পরে আমি ওখানে কান্না করে দিলে উনি আমার ফোন নেন এবং লক খুলতে বলেন। তারপর ওনার লিস্টে ঢুকে ওনার চ্যাট ডিলিট করেন আর বলেন, “তুমি এসবের কোনো রেকর্ড রাখো নাই তো?” পরে ওই মুহূর্তে আমার বান্ধবী চলে আসলে আমি ওখান থেকে বের হয়ে চলে আসি। এরপর একদম প্রজেক্ট শেষ করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার দিনে আমি যাই। সেদিনও উনি আমাকে একা অপেক্ষা করতে বলেন। আমি আমার বান্ধবীকে বলি যে তুই প্লিজ থাক, আমি একা একা ভয় পাচ্ছি। আমার বান্ধবী বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে, উনি কথা বলতে বলতে একসময় এসে আমাকে ব্যাড টাচ করার চেষ্টা করেন। তখন আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে বের হয়ে আসি।’

‘আমি যখন কান্না করতে করতে হলের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন আমার এক বান্ধবী আমার দেখা পেয়ে কথা বলে আমার সাথে। আমার কাছে জানতে চায় আমার কী হয়েছে। আমি তার সাথে ভরসা পাই শেয়ার করার। তাই তাকে সব খুলে বলি। আমার সেই বান্ধবী এবং আরো একজন বন্ধু আমাকে সাজেস্ট করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার সময় যে ছবিগুলো তোলা হয়, আমার ফোন থেকে সেগুলো তিনি চাওয়ার জন্য নক দিলে আমি যেন এমনভাবে কথা বলি তার সাথে, যেন তিনি যে আমাকে নোংরা প্রস্তাব দিয়েছেন, তার কোনো প্রমাণ রাখতে পারি। ওদের কথামতো আমি তার সাথে সেভাবেই কথা বলি। আর রাতের মধ্যেই সব কিছু গোছগাছ করে হল ত্যাগ করে বাসায় চলে আসি। নিচে আমার সেই প্রমাণস্বরূপ কনভারসেশন এর স্ক্রিনশট দেওয়া হলো।’

আরও পড়ুন : ‘পারভেজকে হত্যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত ও ছাত্রদলকে নেতৃত্বশূন্য করা’

পরিশেষে ছাত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমার ফোন নিয়ে তার সাথে আমার সমস্ত কনভারশেসন ডিলিট করে দেয়, সেহেতু আমি তাকে আমার ক্লাসমেট বন্ধুর কথামতো হানি ট্রাপে ফেলে শেষে এই কথাটুকু বের করে সোর্স রেখে দিছি। যে কারণে আমি তার সাথে তাল মিলিয়ে কথা বলতেছিলাম।’

এর আগে গত ১৭ এপ্রিল অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিং এবং হুমকি দেওয়ার বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়  শৃঙ্খলা বোর্ডের সদস্য সচিব প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো ফেরদৌস রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি এবং কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে আমার পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence