হকারের দখলে ঢাকা কলেজের ফটক, ফুটপাতে হয়রানির শিকার পথচারী

হকারের দখলে ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক
হকারের দখলে ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক  © টিডিসি ফটো

ঢাকা কলেজের দেয়ালে কাপড়ের দোকান বসিয়ে বিক্রি করতে ব্যস্ত ছিলেন মধ্যবয়সী এক হকার। এখানে দোকান বসানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, ‘আমরা পেটের দায়ে এখানে এসেছি। আমি জানি যে, ফুটপাতে দোকান দিলে মানুষের চলাচলে দুর্ভোগের তৈরি হয়। তবে আমি যদি চলে যাই, তাহলে এ জায়গা কেউ না কেউ দখল করবে। ফুটপাত থেকে সবাই উঠে গেলে আমিও উঠে যেতে প্রস্তুত। আমিও চাই না, আপনাদের চলাচলে দুর্ভোগ হোক।’ 

এ হকারের মতো অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী দখল করে রেখেছেন ঢাকা কলেজের সীমানাপ্রচীর। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সামনের অংশ পরিণত হয়েছে ব্যবসাকেন্দ্রে। ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে কলেজের দেয়াল দখল করে নিয়েছেন হকাররা। কলেজ সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাত, মূল ফটক ও নায়েমের গলিও এখন তাদের দখলে। ফলে নষ্ট হচ্ছে কলেজের পরিবেশ। 

এতে শিক্ষার পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি কলেজসংলগ্ন সড়কে দেখা দিচ্ছে তীব্র যানজট ও কোলাহল। ফুটপাত ও রাস্তায় হকারদের ঠেলে গন্তব্য যেতে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীও দোকান বসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিরপুর রোড সংলগ্ন ঢাকা কলেজের দেয়ালের পুরোটা অংশজুড়ে শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, গেঞ্জি, কসমেটিকস সামগ্রীসহ নানান পণ্যের দোকান নিয়ে বসেছেন হকার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। সড়কের অপর পাশের ফুটপাতেও সারি সারি করে বসানো হয়েছে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান রাফি বলেন, কলেজের সামনে ফুটপাতে শিক্ষার্থীদের দোকান ও বহিরাগত হকারদের অবস্থানের ফলে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ পথচারীদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। এতে এলাকায় যানজটের মাত্রা বেড়ে গিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়ছে। বিশেষ করে ব্যস্ত সময়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাফেরা বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। 

তিনি বলেন, শুধু যানজট নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে এমন অনিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির পরিবেশ ও শৃঙ্খলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটি শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছে। শিক্ষার্থীদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে। বহিরাগতদের অবাধ বিচরণে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে, যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। কর্তৃপক্ষের উচিত, দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর রোড সংলগ্ন ঢাকা কলেজের দেয়ালের পুরোটা অংশজুড়ে শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, গেঞ্জি, কসমেটিকস সামগ্রীসহ নানান পণ্যের দোকান নিয়ে বসেছেন হকার ও ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। সড়কের অপর পাশের ফুটপাতেও সারি সারি করে বসানো হয়েছে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকান।

ফুটপাতের দু’পাশের দোকানের মধ্যে দিয়ে পথচারীরা নারী-পুরুষের গাঁ ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাচল করতে হচ্ছে। কলেজের এ ফুটপাতে পাশাপাশি দুজন হাটার জায়গা পর্যন্ত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট থেকে শুরু করে ঢাকা কলেজসংলগ্ন নায়েমের গলি পর্যন্ত অবৈধভাবে ২৭৫টি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুন। তবে নায়েমের গলি ও টিচার্স ট্রেনিংয় কলেজের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসালেও আগে কখনও দেখা যায়নি, যা এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

গাউসিয়া মার্কেট থেকে শুরু করে ঢাকা কলেজসংলগ্ন নায়েমের গলি পর্যন্ত অবৈধভাবে ২৭৫টি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় দ্বিগুন। তবে নায়েমের গলি ও টিচার্স ট্রেনিংয় কলেজের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসালেও আগে কখনও দেখা যায়নি, যা এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

ব্যবসায়ী ও কলেজ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, একটি ছাত্র সংগঠনের কিছু নেতার ছত্রচ্ছায় কলেজসংলগ্ন এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ক্ষুদ্র ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা করছেন রমরমা ব্যবসা। রাজধানীর ব্যস্ততম এ এলাকা অবৈধভাবে দখল করে প্রতিনিয়ত চলছে দোকান বসানোর প্রতিযোগিতা। পথচারীরা অভিযোগ করছেন, ফুটপাত ব্যবহারে আগের মতোই হকারদের কাছে জিম্মি রয়েছেন তারা।

একাধিক হকার বলছেন, ঢাকা কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন। খোঁজ নিতে গিয়ে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে দোকান পাওয়া যায় কলেজের ২০২৩ -২৪ সেশনের শিক্ষার্থী আরেফিনের। ফুটপাত কলেজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন- স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এখন যদি ঢাকা কলেজের সামনে থেকে সব দোকান উঠিয়ে দিতে পারে, তাহলে আমিও এখানে আর দোকান দেব না।’

ঢাকা কলেজের ফুটপাত নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা চলছে জানিয়ে  শিক্ষার্থী শাহাদত শাহ বলেন, পুলিশ এসে ফুটপাত থেকে দোকান উঠিয়ে দেওয়ার ১০ মিনিট পরে আবারও তারা দোকান বসায়। দীর্ঘদিন যাবত এমনটাই হয়ে আসছে। এর সুষ্ঠু সমাধান হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। ফুটপাত সাধারণ মানুষের হেঁটে চলাচলের জন্য। এখানে হকার বা দোকান বসানোর কারণে হেঁটে চলাচলে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। 

তিনি বলেন, ফুটপাতে দোকানগুলো এতটা জনভোগান্তির সৃষ্টি করে যে, একজন মানুষ পায়ে হেঁটে যেখানে পাঁচ মিনিটে যেতে পারেন, সেখানে ২০ মিনিট থেকে আধা ঘন্টা সময় লাগে। ভোগান্তি নিরসনে এবং ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে বিশেষ করে আমাদের ক্যাম্পাসের সামনে থেকে ফুটপাতে সব ধরনের দোকান অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে।

আরো পড়ুন: পবিপ্রবি ইউনিভার্সিটি স্কয়ারে ফের স্থাপন হচ্ছে সেই এফ-৬ যুদ্ধবিমান

ছাত্রদের নিয়ে নামলে জায়গাটা খালি করতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগবে না জানিয়ে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন,  এটা করলে হাঙ্গামা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেটা কারও জন্য সুখকর হবে না। আমরা রমজানটা সময় দিচ্ছি। ঈদের পর কলেজের দেয়ালে কিছু রাখতে দেওয়া হবে না। ছাত্রদের দাবি ছিল, কলেজের মূল ফটক পরিষ্কার রাখতে হবে। তাদের দাবি বিবেচনা করে পরীক্ষামূলকভাবে মূল ফটকের সামনে চেইন দেওয়া হয়েছে। এখন আর কোনো যানবাহন মূল ফটকে রাখতে পারবে না। 

তিনি আরও বলেন, আমাদের কিছু পরিকল্পনা আছে, যেটা শিক্ষা প্রকৌশলের মাধ্যমে প্রস্তাবনা পাস করা হয়েছে। সেটা হল কলেজের সামনের বসার জায়গায় স্টেইনলেস স্টিল ব্যবহার করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হবে। এটা হলে সাইড থেকে বসতে পারবে কিন্তু কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবে না। দেয়ালটা উনুক্ত, এজন্য এখানে যেকেউ যততত্র ব্যবহার করছে। কলেজের উত্তর পাশের দেয়াল ভেঙে নতুন করে নির্মাণ হবে। দেয়াল থেকে মূল ফটক পর্যন্ত স্টেইনলেস স্টিলের গ্রিল দেওয়া হবে। এর ফলে এখানে কেউ যেন বসতে না পারে বা ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে।

নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার ( ট্রাফিক) তাওহা ইয়াসীন হোসাইন বলেন, ফুটপাতে চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী দোকান উচ্ছেদে আমরা এখন অভিযান চালাচ্ছি। আমাদের ক্রাইম ডিভিশন, পুলিশ সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। আসলে বিষয়টা এরকম যে, আমরা অভিযান চালাই, একটা সময় পর আবার দোকান বসায়। এ অভিযান কন্টিনিউয়াস প্রসেস, এ বিষয়ে আমাদের আন্তরিকতা আছে। এ পর্যন্ত আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করতে যে অভিযানগুলো করেছি, তাতে মনে হয় আগের থেকে উন্নতি হয়েছে। এর ফল আগামীতেও পাওয়া যাবে। 

তিনি আরও বলেন, ফুটপাতের দোকানগুলো চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এরপরেও জনসাধারণ ফুটপাত থেকে জিনিসপত্র কিনছে।এক্ষেত্রে জনসাধারণের সচেতন হতে হবে। আমার মনে হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সোশ্যাল সোসাইটি যদি প্রতিবাদ করত, তাহলে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার কাজটা অনেক সহজ হতো। শুধু পুলিশ নয়, সব পক্ষের প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence