বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

বধ্যভূমি নাকি গাছের গুড়ির ব্যবসাকেন্দ্র?

স্বাধীনতার পর ৪৮ বছর কেটে গেলেও এখনও চিহ্নিত হয়নি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র বধ্যভূমি। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের দমদমায় অবস্থিত বধ্যভূমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পর ৮ বছর পার হয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর উদাসীনতার কারনে বেদখল হয়ে যাচ্ছে। অস্তিত্ব সংকটেও পড়েছে এটি। মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র স্থানটি গাছের গুঁড়ির ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। যাদের রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এই লাল সবুজের পতাকা সেই বীর শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ না করায় বধ্যভূমির যথাযথ মর্যাদাও রক্ষা পাচ্ছে না। 

জানা যায়, বেরোবি প্রশাসন বধ্যভূমিটির দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় আট বছরেও নির্ধারণ হয়নি এর সীমানা প্রাচীর। ফলে বধ্যভূমির অনেক জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটির সংরক্ষণ না করায় নতুন প্রজন্মের কাছে অজানাই রয়ে গেছে ঐতিহাসিক এ স্থান।

সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বধ্যভূমিটি অরক্ষিত থাকার পর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর কারমাইকেল কলেজ শিক্ষক পরিষদ সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করে। দীর্ঘদিন অযত্ন, অনাদরে আর অবহেলায় পড়ে থাকায় এবং সীমানা প্রাচীর না থাকায় সেখানে ব্যবসায়ীরা কাঠের গুঁড়ি রেখে ব্যবসা করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। সেখানে অবাধে বিচরণ করছে গরু-ছাগল। এতে একদিকে যেমন পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে বধ্যভূমির জায়গা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অধীনে চলে যাচ্ছে।

বধ্যভূমির জায়গায় ব্যবসা পরিচালনা কয়েকজন ব্যক্তি। তারা গত চার বছর ধরে বধ্যভূমির জায়গায় গাছের গুঁড়ি রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদেরকে কখনো বাধাও দেওয়া হয়নি। শুধু বছরে দুই-একবার যখন ফুল দিতে আসে তখন শুধু ফুল দেওয়ার সামনের জায়গাটুকু পরিষ্কার করে দেওয়ার কথা বলা হয় এসব ব্যবসায়ীদের। ফুল দিয়ে চলে গেলে আবার জায়গাটি তাদের দখলে থাকে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা নিজেরাই। 

রংপুর মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের দমদমা ব্রিজের কাছে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কারমাইকেল কলেজের ছয় শিক্ষকসহ শত শত মানুষকে ধরে এনে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে ফেলে চলে যায়। সেই শহীদদের লাশ সেখানেই রয়ে যায়।

২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ ও বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রথমদিকে কিছু মাটি কেটে সাইনবোর্ড টাঙানো হলেও দায়িত্ব নেওয়ার প্রায় আট বছর পরেও সেটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না করায় পবিত্র স্থানটি আজ পরিণত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে।
সর্বশেষ গত বছরের ১৪ জুন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ যোগদানের কিছু দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড টাঙানো হয়। তবে সীমানা নির্ধারণ কিংবা গবেষণার জন্য সংরক্ষণের বিষয়ে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে একাধিকবার ফোনকল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


সর্বশেষ সংবাদ