কার্যকরী সমাধান না পেলে আবার রাজপথে নামবো: সাত কলেজ

সংবাদ সম্মেলনে 
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা
সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তি বাতিল করে স্বতন্ত্র স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা। তবে কার্যকরী কোনও সমাধান না পেলে আবারও রাজপথে নামবে বলে জানিয়েছেন সাত কলেজ আন্দোলনের মুখপাত্ররা। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন তারা।

বিতৃতিতে বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা কলেজে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে তাদের সংকট ও সমস্যার চিত্র তুলে ধরে। সমস্যা সমাধানে তারা ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করে সাত কলেজের সমন্বয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এরপর একই দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজকে স্মারকলিপি দেয়। একই স্মারকলিপি কলেজগুলোর অধ্যক্ষদেরও দেওয়া হয়।

‘শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সাত কলেজের ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করবেন। তবে অধিভুক্তি বাতিল হলেও সাত কলেজকে ফের পেছনে ফেরানো হবে না। বরং সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ তৈরি করা হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এ পরিচয় তৈরি করা সম্ভব, সেটা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ও একটি বিশেষজ্ঞ টিম নির্ধারণ করবে। এজন্য তিনি তাদের থেকে সময় চেয়েছেন।’

শিক্ষার্থীরা জানায়, এরপর থেকে তারা ধারাবাহিকভাবে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ তারা চলতি সপ্তাহে দাবি আদায়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা শুরু করেছেন। তাদের আন্দোলন যেভাবে চলমান ছিল, একইভাবে সংশ্লিষ্ট সব মহলে তারা আলোচনাও অব্যাহত রেখেছে।

সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথমবারের মতো গত ২৫ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের আন্দোলনের ন্যায্যতা সম্পর্কে সামনে তুলে ধরে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা অনুধাবন করে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে।

আরও পড়ুন: ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবির নেপথ্যে

গত বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাথে তারা সাক্ষাৎ করে। সভায় দুই উপদেষ্টা তাদের দাবি ও আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চান। এরপর তারা শিক্ষার্থীদের সাত কলেজের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাইরে পৃথক প্রশাসনিক ভবনে কার্যক্রম চালানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাওয়ায় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই এ সভা শেষ হয়।

এরপর সবশেষ গত মঙ্গলবার (০৫ নভেম্বর) শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আমন্ত্রণে সাত কলেজের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের দাবির যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ নিশ্চিতের উপযুক্ত আশ্বাস দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘আমরা সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলন শুরু করেছেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও একই দাবিতে তাদের ক্যাম্পাসে কর্মসূচি শুরু করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও এ অধিভুক্তি চান না। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরাসরি অধিভুক্তির বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার না করলেও একাধিক স্থানে অধিভুক্তি বাতিলের পক্ষে তাদের অবস্থানও পরিষ্কার হওয়া গেছে। দুপক্ষের শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় শিক্ষা উপদেষ্টা আমাদের এ আশ্বাস দিয়েছেন।’

তারা আরও জানান, ‘তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সাত কলেজের ঢাবি অধিভুক্তি বাতিল করবেন। তবে অধিভুক্তি বাতিল হলেও সাত কলেজকে ফের পেছনে ফেরানো হবে না। বরং সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন একটি ‘স্বতন্ত্র পরিচয়’ তৈরি করা হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এ পরিচয় তৈরি করা সম্ভব, সেটা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি ও একটি বিশেষজ্ঞ টিম নির্ধারণ করবে। এজন্য তিনি তাদের থেকে সময় চেয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি সাত কলেজের সবগুলো ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন। মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিতে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি যুক্ত করার বিষয়েও তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

আরও পড়ুন: ঢাবি অধিভুক্ত কলেজে ভর্তির আর কোনো বিষয় মনোনয়ন কি দেওয়া হবে?

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের আশ্বাসে সন্তুষ্ট। তাই আমরা আমাদের চলমান আন্দোলন-কর্মসূচি সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এখন থেকে সাত কলেজের দাবি নিয়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা শুরু থেকে রাস্তা অবরোধ কিংবা বিক্ষোভ-সমাবেশের মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের চেয়ে আলোচনার মাধ্যমে কূটনৈতিক পদ্ধতিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কিন্তু একটা পর্যায়ে আমরা কোনো ধরনের আশ্বাস না পেয়ে একপ্রকার বাধ্য হয়ে আন্দোলন শুরু করে। এখন আমাদের মনে হয়েছে, শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসের পর আর আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। আলোচনার দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমে দাবি আদায় করতে পারবো।’

শিক্ষার্থীরা জানায়, ‘এ সময়ের মধ্যে সাত কলেজের স্বাভাবিক ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলবে। শুধু তাই নয়, সাত কলেজের জন্য নতুন কাঠামো তৈরি হওয়া ও পরিচালনা কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ করা এবং সনদ প্রদান করার মতো নিয়মিত কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করবে। যাতে করে শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের পরিচয় সংকট তৈরি না হয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেরার পর যে যে ধরনের সংকট তৈরি হয়েছিল, সবগুলো সামনে রেখে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যাতে করে সে ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না হয়। এ সময়ের মধ্যে যদি ফলাফল বিপর্যয়ের মতো ঘটনা ঘটে, তাহলে বিশেষ ব্যবস্থায় খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ও যেন এ বিষয়টি তাদের পর্যবেক্ষণে রাখে, সে দাবি আমরা জানাচ্ছি।’

বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টার আশ্বাসে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করলেও  এই নয় যে তারা আন্দোলন থেকে একেবারে সরে এসেছে। উপদেষ্টা তাদের থেকে সময় চেয়েছেন। তার সম্মানে এবং দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে উপদেষ্টার আশ্বাসের পরও যদি তারা কোনো কার্যকরী সমাধান না পায় বা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যদি নতুন কোনো ধরনের ভিন্ন কোনো প্রহসন। তাহলে তারা আবার রাজপথে নামবে। আর রাজপথেই উদ্ভূত পরিস্থিতির ফয়সালা হবে বলেও জানা তারা।


সর্বশেষ সংবাদ