তীব্র তাপপ্রবাহ
বেশির ভাগ পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস
নিজেরাই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে: ইউজিসি
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৫ PM , আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৮ PM
সারা দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দেয়া হলেও অধিকাংশ এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ফলে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস চলবে। তবে দুয়েকদিনের মধ্যে আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা আসতে পারে বলে জানা গেছে।
আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্ব স্ব বডি সভা করে অনলাইন ক্লাস, প্রয়োজনে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বেশ কয়েকটি ছুটির সমন্বয়ে টানা বন্ধ ছিল দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব ছুটি শেষে রবিবার (২১ এপ্রিল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ ছিল। কিন্তু দেশের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। খোলার আগের দিন শনিবার (২০ এপ্রিল) তিন দিনের জন্য দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ জন্য সতর্কবার্তা বা হিট অ্যালার্টও জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ অবস্থায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে, চলমান তাপদাহের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস এবং পরীক্ষা সশরীরে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সারাদেশের কলেজে ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীরে চলবে ক্লাস-পরীক্ষা চলবে বলে জানানো হয়েছে।
ইউজিসির তথ্যমতে, দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে অর্ধশতেরও বেশি। সেই হিসেবে হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস হওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
রবিবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে এক জরুরি মিটিংয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা যথারীতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চলবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর প্রশাসক অধ্যাপক প্রনব কুমার পাণ্ডে বলেন, রাজশাহীর তাপমাত্রা এখনও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি আছে তা আগামী ৩ মে থেকেই শুরু হবে। তবে ২ মে শুধু ক্লাস বন্ধ থাকবে কিন্তু যে বিভাগগুলোর পরীক্ষা আছে তা যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে যেন ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকে।
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসে যাবে কিনা, এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহাবুব হোসেন বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। আমরা আবহাওয়ার দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অনলাইন বা অফলাইন যে মাধ্যমেই হোক না কেনো, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে আমরা সচেষ্ট আছি।
তবে এখনই অনলাইন ক্লাসে যাওয়ার প্রয়োজন কিনা সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। শিক্ষার্থীদের অনেকেই বাসা বা দিনাজপুর শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসেন। তারা জানান, এই তীব্র গরমে বাসে যাতায়াত করে নিয়মিত ক্লাসে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। যানজট ও অসহ্য গরমে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আরেক অংশ জানান, ক্লাস করার জন্যই তারা বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে এসেছেন। অনেক বিভাগে সেশনজট মাঝারি থেকে প্রকট আকার ধারণ করছে। তাদের মতে, দিনাজপুরে এখনও তেমন তীব্র গরম পরেনি। অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলছেন, এদিকে কিছুদিন পর ভালো গরম পরবে। তখন অনলাইনে ক্লাসের ব্যাপারে ভাবা যেতে পারে। তাছাড়া অনলাইন ক্লাসে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া ও পড়া বুঝা কঠিন।
ইউজিসির তথ্য মতে, দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে দেড়শরও বেশি। এরমধ্যে নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, এশিয়া প্যাসিফিকসহ ৮-১০টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দিয়েছে। তবে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
রবিবার রাতে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও উত্তরা ইউনিভার্সিটির দুজন কর্মকর্তা জানান, অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে আগামীকালের মধ্যে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে ইউজিসির ঊর্ধ্বতন কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানায়, এই ইস্যুতে ইউজিসির নির্দেশনা দেয়ার কিছু নেই। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব একাডেমিক কাউন্সিল কিংবা সিন্ডিকেট আছে, সেখানে আলোচনা করে এই ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এছাড়া কোভিডের সময় অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল, সেটিও অনুসরণ করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
তীব্র তাপদাহে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি যেই এলাকায় অবস্থিত সেখানকার তাপমাত্রা বিবেচনায় নিয়ে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা থাকবে না।