ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

নবীন ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত শুরু, ছাত্রলীগের অভিযুক্তরা ‘আত্মগোপনে’

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের গণরুমে নবীন শিক্ষার্থীকে নগ্ন করে নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রম আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এর আগেই হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আল-ফিকহ এবং লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী। গত ০৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে ১৩৬নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার ৫ দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি জানাজানি হলে প্রথম গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মুদাচ্ছির খান কাফি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ সাগর। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়ের অনুসারী বলে ক্যাম্পাসে পরিচিত। থাকতেন হলের ১৩৬নং কক্ষে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, আমরা শনিবার কমিটির সবাই মিলে বসব। তারপর ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব নথি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সংগ্রহ করে তদন্তের পরবর্তী রূপরেখা তৈরি করব।

আরও পড়ুন: র‍্যাগিংয়ের নামে নবীন ছাত্রকে উলঙ্গ করে রাতভর নির্যাতন ছাত্রলীগের

হল প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিক পরামর্শ করেছি। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তথ্য সংগ্রহের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। যেখানে যে কেউ ওই ঘটনার সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত আমাদের পরিচয় গোপন রেখে জানাতে পারবেন। এর পরবর্তী সময়ে আমরা কমিটির সবাই বসে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।

ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ১৩৬নং কক্ষে কিছু সিনিয়র পরিচয় পর্বের নামে তাকে ডাক দেন অভিযুক্তরা। এসময় ভুক্তভোগীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন তারা। পরে ভুক্তভোগীকে নানা কুরুচিপূর্ণ আচরণ করতে বললে, সে অস্বীকৃতি জানায়। এতে তাকে বার বার রড দিয়ে আঘাত করতে থাকেন অভিযুক্তরা।

পরে তারা জোরপূর্বক উলঙ্গ করে টেবিলের উপর দাড় করিয়ে রাখে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে। তাকে নাকে খত দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় এসব নির্যাতন চালানো হয়। এছাড়াও ভয় দেখিয়ে তারা বার বার বিছানাপত্র বাইরে ফেলে দেন বলে জানান ভুক্তভোগী।

‘আত্মগোপনে’ অভিযুক্তরা

এদিকে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি র‌্যাগিংয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকে অভিযুক্ত দুজনকে হল বা ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি। হলের আবাসিক শিক্ষক ও নিরাপত্তাকর্মীরা হলে গিয়ে সন্ধান করলেও তাদের খুঁজে পায়নি। হলের ‘বড় ভাইদের’ নির্দেশনায় তারা ক্যাম্পাস ছেড়ে ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ছাত্রলীগ কর্মী হওয়ায় নেতারা তাদেরকে ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এরপর তারা মোবাইল ফোন বন্ধ রেখে গা-ঢাকা দেন।

অবশ্য এই একই কক্ষে এমন নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। গত বছরের জুন মাসে একই হলের এ কক্ষে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে র‍্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিচার চেয়ে প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তাকে পুনরায় মারধর করা হয়। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে লিখিত অভিযোগটি উঠিয়ে নিতে বাধ্য করা হলে লিখিত অভিযোগ উঠিয়ে নেন তিনি।

অভিযুক্তদের বিচার চেয়েছে ছাত্রলীগ

র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়েছে শাখা ছাত্রলীগ। অভিযুক্তরা ছাত্রলীগকর্মী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত হলেও ‘অপরাধীর কোনো সাংগঠনিক পরিচয় নেই, অপরাধীর বড় পরিচয় সে অপরাধী’ উল্লেখ করে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। এতে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কোনো অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে বিচারের আওতায় আনা হোক। 


সর্বশেষ সংবাদ