গ্রেপ্তারের ১ বছর

আমার মেয়ে কি দোষ করেছে—জিজ্ঞাসা খাদিজার মায়ের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা  © ফাইল ছবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কারাবন্দি খাদিজাতুল কুবরার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৮ আগস্ট) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল হয়।

অবস্থান কর্মসূচিতে মুঠোফোনে যুক্ত হন খাদিজার মা। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ে কি দোষ করেছে? আজ ৩৬৫ দিন হচ্ছে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে ঘুমাতে পারি না। প্রতিটি রাত আমার জন্য কালরাতের মতো মনে হয়। আমার মেয়ে বিনা বিচারে এক বছর যাবত জেলখানায় পড়ে আছে। 

‘আমার মেয়ের কিডনিতে সমস্যা ধরা পড়েছিলো ২০২০ সালে, এখন পর্যন্ত কারা কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। আমার মেয়েকে জীবিত ফেরত চাই, এই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিল চাই। যেন আমার মতো আর কারো মায়ের বুকে এমন যন্ত্রণা সহ্য করা না লাগে।’ 

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বিনা বিচারে ৩৬৫ দিন জামিন না দিয়ে খাদিজাতুল কুবরাকে কারাগারে আটক রাখা স্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। খাদিজার আটকের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে সরকার। এ ভয়ের সংস্কৃতি এতটাই প্রখর হয়েছে যে তার কারণে খাদিজার উপর চলমান অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকেরা মুখ বন্ধ করে আছে। এটা চলতে পারে না।  

ভাস্কর্য চত্বরে জবি শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল

সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের কারও কারও হাতে ছিল পোস্টার, তাতে লেখা ‘ফ্রি খাদিজাতুল কুবরা’, ‘৩৬৫ দিনের অবিচারের মুক্তি হোক’ , ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা  আইন নয়, জানমাল রক্ষায় সুষ্ঠু আইন চায়’,  ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চায়, আমাদের কথা বলার স্বাধীনতা চায়’। 

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইভান তাহসীব বলেন, একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রত্যেকটি জনগণের স্বাধীনতা আছে তার মতামত প্রকাশ করার। অনুষ্ঠানে খাদিজা সেসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে। তা আমাদের সকল সাধারণ নাগরিকের জিজ্ঞাসা। এখানে সরকার এবং রাষ্ট্রকে বর্তমান সরকারের প্রশাসন এক করে ফেলেছে কিন্তু সরকার এবং রাষ্ট্র যে দুটি ভিন্ন সত্তা এটা আমাদের প্রশাসন বুঝেও না বুঝার ভান ধরে আছে। 

খাদিজার সহপাঠী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসলিমা জাহান মুন বলেন, বাকস্বাধীনতা বলে আমাদের যে একটি সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে সেটার সুফল আমরা আজ কোথায় পাচ্ছি? আজ দেশে যদি বাকস্বাধীনতা থাকতো তাহলে আমার সহপাঠীকে বিনা বিচারে এক বছর কারাগারে থাকতে হতো না। আমরা যদি বাকস্বাধীনতার সুফল না পেয়ে থাকি তাহলে সংবিধান থেকে বাকস্বাধীনতার বিষয়টি তুলে দিতে পারেন। 

খাদিজার বোন সিরাজুম মনিরা বলেন, আমার বোন কী অপরাধ করেছে, আজকে এক বছর ধরে জেলে আছে। জেলে দেখা করতে গেলে জিজ্ঞাসা করে, কেন আমি এতদিন কারাগারে। তখন আমাদের কাছে কোন উত্তর থাকে না। আমার বোন কেন কারাগারে? সে কী এমন অপরাধ করেছে! এতদিন তাকে বিনা বিচারে আটক রাখতে হবে। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মিনহাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, আমি শিক্ষকদের প্রতিনিধি হয়ে নয়, নিজের তাড়না থেকে আজকের মানববন্ধনে উপস্থিত হয়েছি। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী এভাবে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে পারে না। আমি কিছুদিন আগে তাকে নিয়ে একটা কলাম লিখেছিলাম। তখন আমি জানার চেষ্টা করেছিলাম, আসলে তার অপরাধটি কি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে ক্ষমা দেওয়া উচিত।

প্রসঙ্গত, অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর কলাবাগান ও নিউমার্কেট থানায় দুটি মামলা করে পুলিশ।

খাদিজাতুল কুবরার নামে ২০২০ সালে যখন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় তখন তার বয়স ১৭ বছর। অথচ, তাকে প্রাপ্তবয়স্ক দেখিয়ে মামলাটি করা হয় এবং সেই মামলায় আজ ৩৬৫ দিন ধরে খাদিজা কারাগারে দিনাতিপাত করছে। তবে তিনি যে মামলায় গ্রেফতার আছেন, সেই মামলার বিচার শুরু হয়নি এখনো। 

এদিকে গত জুলাইয়ে আপিল বিভাগের এক আদেশে আগামী ১০ নভেম্বর পর্যন্ত (৪ মাস) তার জামিনসংক্রান্ত আবেদনের শুনানি স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এতে ধারণা করা হচ্ছে, এর আগে তার জামিনসংক্রান্ত আবেদন শুনানির সুযোগ নেই।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence