রমজানে হলে কেমন সময় কাটে রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থীদের
- রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪২ AM , আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪২ PM
বছর ঘুরে আবারও এসেছে পবিত্র রমজান মাস। আরবি মাসগুলোর মধ্যে অন্যতম বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ। ইসলামি স্তম্ভ ৫টি। তার মধ্যে তৃতীয় ও তাৎপর্যবহ হলো সিয়াম সাধনা। আত্মসংযম ও আত্মার পরিশুদ্ধির মাস রমজান। কারণ এই মাসে নফসের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করি। সব খারাপ দোষ বাদ দেওয়া ছাড়াও রাগ, হিংসা, গিবত, মিথ্যা, সন্দেহ, বিদ্বেষ, অহংকারসহ যেগুলো আমাদের খারাপ কাজে আকৃষ্ট করে তা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।
এই রমজান মাস নিয়ে রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন বিভাগ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ‘রমজান অনুভূতি’ তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের রাজশাহী কলেজ প্রতিনিধি এস আলী দূর্জয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আফসানা আফরোজ খুশি বলেন, এ রমজান মাসই সিয়াম ও কিয়াম এবং তেলাওয়াতের মাস, পাপমোচন ও ক্ষমা প্রাপ্তির মাস, দয়া ও সদকার মাস। এ মাসেই জান্নাতের দরোজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। দ্বিগুণ করে দেওয়া হয় পুণ্যের মান। রমজান নাম শুনলে মনে এক উৎসবের প্রশান্তি অনুভব হয়, অন্তরে লাগে খুশির হাওয়া। আবু বকর আল বাখলী বলেছেন, "রজব মাস হলো বীজ বপণের মাস, সাবান মাস হলো খেতে সেচ প্রদানের মাস ও রমজান মাস হলো ফসল তোলার মাস।
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রমজান মাস এসেছে কি না তা আমরা রসুলুল্লাহকে (স) দেখে বুঝতে পারতাম। অর্থাৎ অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে তার ইবাদত বন্দেগি বেড়ে যেত। যার ফলে অন্যরা তাকে দেখে বুঝতেন যে, এখন রমজান চলছে। রমজান অত্যন্ত বরকত নিয়ে আসে। তাই রমজান পালনের পর আমরা যেন নতুন এক আলোকিত মানুষে রূপান্তরিত হতে পারি এই প্রাথর্ন পরম করুণাময়ের দরবারে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আব্দুল আলিম বলেন, ইবাদতের মৌসুমের মাস রমজান। কল্যাণের জন্য ভালো কাজের সেরা মৌসুম রমজান। বান্দার জন্য মহান রবের সেরা উপহারও এটি। রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজান এলেই জান্নাতের দরোজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, আর জাহান্নামের দরোজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শেকলবদ্ধ করা হয়।’ (মুসলিম : ২৫২৯)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, রমজানের প্রথম রাতেই শয়তান ও জিনকে আটকে ফেলা হয়। জান্নাতের দরোজাগুলো উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর কোনো দরোজা বন্ধ করা হয় না। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং আর খোলা হয় না। তাই রমজানে সালাত, সদকা, কোরআন পাঠ, গরিব-মিসকিনদের প্রতি সদাচরণসহ নানা প্রকারের কল্যাণমূলক কাজ মাধ্যমে এ মাসকে মহিমান্বিত করে তোলা।
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মেহেরিন নেছা মিম বলেন, নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস রমজান। সিয়াম সাধনা ও সংযমের মাস পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জন ও কৃপ্রবৃত্তি দমনের মহাসুযোগ আসে। মহান আল্লাহতায়ালা রমজান মাসে ইবাদতের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। তাই রোজা রাখার পাশাপাশি নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত বিশেষভাবে পালন করছি। পুরো মাস চেষ্টা করি ইচ্ছা-অনিচ্ছা সব ধরনের গোনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে। এ মাসের পবিত্রতা বজায় রাখা মুসলিমণ্ডঅমুসলিম সবার নৈতিক দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: গৌরব-ঐতিহ্যের ১৫১ বছরে রাজশাহী কলেজ
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ফয়সাল আহমেদ বলেন, রমজানে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। রমজান হলো রহমত, বরকত, মাগফিরাত আর নাজাতের পবিত্র মাস। পবিত্র এ মাসে আত্মসংযমের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে ও সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, নৈকট্যলাভ এবং ক্ষমা লাভের অপূর্ব সুযোগ হয়। রমজানে সিয়াম সাধনার মাসে ধনী-গরিব সবার মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা পালন করে। একসাথে সেহরি, একসাথে উপবাস, একসাথে জামাতে নামাজ ও একসাথে ইফতার পুরো মুসলিম জাতিকে একসূত্রে গেঁথে দেয়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের জান্নাতুল খাতুন বলেন, রমজানে অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খুব ভালো কাটছে রমজান মাস। ছোট বেলা থেকেই রোজা রেখে আসছি। এবারো সবগুলো করবো। ইনশাআল্লাহ। সবার জন্যই দোয়া থাকবে যেন রমজান মাসটা সবার ভালো কাটে। আর পবিত্র রমজান মাসে আমাদের উচিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো । এতে করে তাদের দোয়া পাওয়া যাবে, আবার তাদের রোজার সমপরিমাণ সওয়াবও পাওয়া যাবে। পবিত্র রমজানে আমরা সকলে ব্যয় ও খাবারেও সংযত হয়ে আমাদের আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের পাশে দাঁড়াই, হয়তো মহান আল্লাহ এর উসিলায় আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেবেন।
ইতিহাস বিভাগের আব্দুর রাজ্জাক রনি বলেন, পবিত্র রমজান মাস চলছে। মুমিনের ঘরে নুরের আলো জ্বলুক। কিন্তু আমি পড়ে আছি, আপনজনদের থেকে অনেক দূরে পদ্মা পাড়ের শহর রাজশাহীতে। কারন কয়েকমাস পরেই ফাইনাল পরিক্ষা। এছাড়াও চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি সবকিছু মিলিয়ে রমজান মাসে বাসায় যাওয়া হয় নাই। বরাবরই রমজানে পরিবারের লোকদের সঙ্গে ইফতার-সাহরি করার আনন্দ মিস করি। তবে মেস ও কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে ভালোই কাটে রমজানের সারাবেলা। রমজান প্রতিটি মুমিনের ঘরে নুরের আলো জ্বালিয়ে দিক- এই প্রত্যাশা রাখি।