ছাত্রীদের নির্যাতনের পর বাবা-মাকেও জানাতেন ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নির্যাতনের শিকার সেই ছাত্রীকে নিরাপত্তার আশ্বাসে আজ শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পাসে ডেকেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা ও তাবাসসুম ক্যাম্পাস ছাড়ার পর আরও অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে।

শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ও বাবা-মায়ের কাছে কুৎসা রটানোরও অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের এই নেত্রীর বিরুদ্ধে। তবে ভয়ে এতদিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এখন বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় তাঁরা গণমাধ্যমকে নিজেদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা জানাচ্ছেন।

গত বৃহস্পতিবার এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের বিষয়টি সামনে আসার পর তিন সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ সময় ছাত্রলীগের দুই নেত্রীকে ক্যাম্পাস ছাড়তে বলা হয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তদন্ত কমিটি হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। 

জানা গেছে, গত বছরের ৩১ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে সহসভাপতি পদ পান সানজিদা। তিনি সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাতের অনুসারী। এরপর থেকে হলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু করেন তিনি।

আবাসিক এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে হলের গেস্টরুম বন্ধুদের ডেকে অপমান করেন সানজিদা। বাড়িতে মায়ের কাছে ফোন করে কুৎসা রটান। হলের যে কক্ষে থাকেন, সেখানকার বারান্দায় যাওয়াও নিষেধ। মাথা নিচু করে না থাকলে অপদস্থ হতে হয়। 

সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করা এক শিক্ষার্থী বলেন, মাস তিনেক আগে সানজিদার সঙ্গে তাঁর তর্ক হয়েছিল। তখন তিনি তাঁকে বলেন, তাঁর কাছে ব্যক্তিগত অডিও-ভিডিও রয়েছে ওই ছাত্রীর। সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি।  

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর গত সোমবার গভীর রাতে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করেন সানজিদা। এরপর নিজের পক্ষে তাদের দিয়ে কর্মসূচি পালন করান তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে সানজিদার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে তিনি দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকীর বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার ভুক্তভোগী ছাত্রীকে ডেকেছে। ছাত্রী বলেন, মামা ও বাবার সঙ্গে আজ ক্যাম্পাসে আসব। প্রথমে উপাচার্য ও পরে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলবেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি। তারপরও ক্যাম্পাসে যাব।

হলের প্রভোস্ট ড. শামসুল আলম বলেন, আমাদের হল প্রশাসনের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভিকটিমকে ডাকা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ নির্দেশনার এ বিষয়ে আশ্বাস্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ভুক্তভোগী ছাত্রী বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে ইবি থানার পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি নিরাপত্তা দেবে। ক্যাম্পাস এলাকায় ভুক্তভোগীকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

ভর্তির কয়েক দিনের মাথায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা ও তাঁর অনুসারী তাবাসসুমসহ কয়েকজনের নির্যাতনের শিকার হন এক ছাত্রী। নেত্রীদের কথা না শোনার অভিযোগ তুলে তাঁর ওপর সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে নির্যাত চলে। এ সময় গালাগাল, মারধর ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।


সর্বশেষ সংবাদ