জীবন যুদ্ধে হার না মানা সৈনিক তিতুমীর কলেজের ইসমাইল

ইসমাইল
ইসমাইল  © টিডিসি ফটো

ইসমাইলের প্রতিটা দিন শুরু হয় গাজীপুর থেকে ঢাকার মহাখালীতে সরকারি তিতুমীর কলেজে ক্লাস করতে আসার মাধ্যমে। দুই পায়ে শক্তি না থাকলেও হৃদয়ে আছে অদম্য শক্তি। দুবেলা দুমুঠো খাবার না জুটলেও পড়াশুনার প্রতি আছে তার অদম্য স্পৃহা।

ময়মনসিংহ ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল। জন্ম থেকেই দুই পা ছোট এবং অস্বাভাবিক হওয়ায় কখনোই পায়ের পাতায় ভর দিয়ে হাটতে পারেন না তিনি। উপরন্ত জন্মের দুই বছর পরই হারান বাবাকে। সবাই ভেবে ছিলো বড় হয়ে ভিক্ষা করতে হবে ইসমাইলকে। কিন্ত ইসমাইল সব সময়ই চেয়েছেন পড়ালেখা করে সাবলম্বী হতে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে।

ইসমাইল জানান, দিনের পর দিন না খেয়ে থেকেছি কিন্তু পড়াশুনা ছেড়ে দেওয়ার কথা চিন্তাও করিনি কারণ জীবনে অনেক বড় কিছু হওয়ার সুযোগ না থাকলেও আমি চাইনি মানুষের কাছে হাত পাততে’ নামাজে তিনি ঠিক মতো সিজদাও দিতে পারেন না বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০ শিক্ষার্থীর নামে মামলা

নিজের শারীরিক এবং অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি এখন সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখার জন্য সর্বস্ব হারিয়েছেন ইসমাইল। ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাতে পরিবারের শেষ সম্বল তিন শতক জমি মাত্র চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয় তার পরিবার। সর্বস্ব হারিয়ে এখন ইসমাইলের পরিবারের ঠাই হয়েছে গাজীপুরের ভাড়া বস্তিতে। বর্তমানে রিকশা চালক ভাই ইদ্রিস আলী ও গার্মেন্টস কর্মী বোন খোদেজা বেগমের দয়ায় চলে ইসমাইলের পরিবার।

ছোটোবেলা থেকে এখন পর্যন্ত ইসমাইলের কপালে জোটেনি একটি হুইল চেয়ার। কলেজে প্রতিবন্ধীদের জন্য হলে থাকার সুব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন গাজীপুর থেকেই ক্লাস করতে হয় তাকে। মাঝে মধ্যে ভিক্ষুক মনে করে বাসে উঠতে দেওয়া হয় না তাকে। ইসমাইল কোনো সাহায্য চান না। প্রতিবন্ধকতার কারণে ছোটবেলা থেকেই ভিক্ষার কথা শুনতে হয়েছে তাই সাহায্য নিয়ে বেঁচে থাকা তার কাছে ঘৃণার ব্যাপার। পরবর্তী গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য ইসমাইল চান একটি ভালো কাজের সন্ধান।

ইসমাইলের মা জানান, জন্মের পর থেকেই মানুষ বিভিন্ন রকমের কথা বার্তা বলে হেও প্রতিপন্ন করতো ইসমাইলকে।

এলাকাবাসীর মতে ইসমাইলদের মতো মেধাবীদের পাশে এগিয়ে এলে বরং বোঝা নয় পরম সম্পদে পরিনত হবেন তারা।


সর্বশেষ সংবাদ