৪৭তম বিসিএস প্রিলিতে প্রার্থী কম টেকানোর কারণ জানাল পিএসসি

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন  © সংগৃহীত

৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৪৪ প্রার্থী। সবশেষ ৭ বিসিএসের পর্যালোচনা অনুযায়ী, এই বিসিএসে সবচেয়ে কম প্রার্থী টিকিয়েছে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি)। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর থেকেই প্রার্থীদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন—কেন এত কম প্রার্থী টেকানো হলো?

এ নিয়ে পিএসসির উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। তিনি বলেন, কাট মার্কস পয়েন্ট ফাইভ কমানো হলে হয়তো উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা আরও বেশি হতো। তবে এতে প্রার্থীদের খুব বেশি উপকার হতো বলে মনে হয় না। ভাইভা দিয়ে পাস করেও চাকরি না পেলে যে হতাশা কাজ করবে, প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ না হলে সেই হতাশা কিছুটা হলেও কম হবে। প্রার্থীরা পরের পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে। কম প্রার্থী টেকানোর মাধ্যমে প্রার্থীদের চাকরি পাওয়া সহজ হয়েছে। তবে কম প্রার্থী টেকানো হয়েছে এ কথাটি আসলে পুরোপুরি ঠিক নয়। ৪৬তম বিসিএসেও প্রথমে ১০ হাজারের মতো প্রার্থী টেকানো হয়েছিল, যদিও বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সংখ্যা দ্বিগুণ করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, পিএসসি চেষ্টা করছে এক বছরের মধ্যেই একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করার। বিসিএসে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে লিখিত পরীক্ষার খাতা দেখতে। কম প্রার্থী টেকানো হলে খাতা কম দেখতে হবে, ভাইভাও দ্রুত শেষ হবে। এতে করে আগে বিসিএসের ফল পেতে যে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেটি হবে না। 

এদিকে এক বছরের মধ্যেই একটি বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে পিএসসি। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের রূপান্তর: অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও সামনে এগোনোর পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পিএসসি চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, পরীক্ষাপদ্ধতির কালক্ষেপণ কমানোর লক্ষ্যে ‘সার্কুলার সিস্টেম অব ইভ্যালুয়েশন’  নামে একটি নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে কমিশন। এই পদ্ধতিতে প্রতি এক বছরেই একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব। তবে এতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কমিশনের প্রশাসনিক এবং আর্থিক স্বাধীনতা না থাকা।

৪০তম থেকে ৪৭তম বিসিএসের প্রিলির ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ৪০তম বিসিএসে ক্যাডার পদের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯০৩। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২০ হাজার ২৭৭ জন। পদের তুলনায় ১০ গুণের বেশি প্রার্থীকে টেকানো হয়। ৪১তম বিসিএসে ক্যাডার পদের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৩৫। প্রিলি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ২১ হাজার ৫৬ জন। পদের তুলনায় প্রায় ১০গুণ প্রার্থী টেকানো হয়।

এদিকে ৪৩তম ও ৪৪তম বিসিএসে পদের তুলনায় ৯ গুণ প্রার্থীকে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। ৪৩তম বিসিএসে ১ হাজার ৮১৪ পদের বিপরীতে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হন ১৫হাজার ২২৯ জন; ৪৪তম বিসিএসে ১ হাজার ৭১০ পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ৭০৮ জন। 

তবে ৪৫তম বিসিএসে বিগত বিসিএসগুলোর তুলনায় কম প্রার্থী টেকানো হয়। পদসংখ্যার তুলনায় সাড়ে ৫ গুণ প্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এই বিসিএসে ক্যাডার পদের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০৯; প্রিলিতে উত্তীর্ণ হন ১২ হাজার ৭৮৯ জন। 

অন্যদিকে ৪৬তম বিসিএসে দুই ধাপে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়। এতে মোট উত্তীর্ণ হয়েছেন ২১ হাজার ৩৯৭ জন। আগের ১০ হাজার ৬৩৮ জন প্রার্থীর সঙ্গে নতুন করে লিখিত পরীক্ষার সুযোগ পান ১০ হাজার ৭৫৯ জন প্রার্থী। এতে ক্যাডার পদের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৪০। দুই ধাপ মিলিয়ে পদসংখ্যার তুলনায় ৬ গুণের বেশি প্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

সবশেষ ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৮৭; নন-ক্যাডার পদ রয়েছে ২০১টি। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার মিলিয়ে মোট ৩ হাজার ৬৮৮ পদের বিপরীতে প্রিলিতে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে ১০ হাজার ৬৪৪ জনকে। এই বিসিএসে পদসংখ্যার তুলনায় মাত্র তিন গুণ প্রার্থীকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে।  

এত কম প্রার্থী টেকানোয় হতাশা ব্যক্ত করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের মতে পদসংখ্যার অন্তত ৫-৬ গুণ প্রার্থীকে টেকানো দরকার ছিল। শান্তা ইসলাম নামে একজন প্রার্থী বলেন, এই বিসিএসে প্রিলিতে যত প্রার্থী টেকানো হয়েছে, এর চেয়ে ৪১-৪৪ বিসিএসের ভাইভা প্রার্থী বেশি ছিল। অন্তত ১৫০০০ প্রার্থী টেকানো দরকার ছিল। এখন যে প্রার্থী টেকানো হয়েছে, তা থেকে প্রতি দুই জনে একজন নিয়োগ পাবেন। এর মাঝে আবার রিপিট ক্যাডারের বিষয়টিও থাকে। 

আলামিন নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, পিএসসি নিজেদের স্বার্থে, নিজেদের কাজ কমানোর জন্য শিক্ষার্থীদের সাথে এমন প্রহসন করছে। আগের প্রায় প্রতিটি বিসিএসে পদসংখ্যার তুলনায় কমপক্ষে ৫ গুণ প্রার্থী টেকানো হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ