ইফতারে প্রাণবন্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়

ইফতারে প্রাণবন্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়
ইফতারে প্রাণবন্ত গণ বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

পশ্চিমে সূর্যটা হেলে পড়তেই নতুন ব্যস্ততা শুরু। এবার আর শিক্ষা কেন্দ্রীক ব্যস্ততা নয়। ব্যস্ততা হচ্ছে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব, সম্পর্কের মেলবন্ধন, আতিথিয়েতা, বোঝাপড়া আর হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এক হয়ে যাওয়ার অন্যতম অনুষঙ্গ ইফতারে ব্যস্ততা। এটা মূলত মুসলিম সম্প্রদায়ের হলেও ধর্ম-বর্ণ, জাত-গোত্র সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে সব শ্রেণীর মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়।

কেউ বা ছোলা-মুড়ি, চপ মাখায়, কেউ বানায় শরবত, কেউ কেউ ফল কাটে, কেউ আবার খাবার পানি, প্লেট-গ্লাস সাজায়। ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজন নিয়ে এমনই ব্যস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সেরকম ব্যস্ততা দেখা যায় বংশী নদীর তীরে অবস্থিত সবুজে ঘেরা ৩২ একরের বিদ্যাপীঠ সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়েও।

সূর্যের বিদায় বেলায় রক্তিম লাল আলোর আবছা অন্ধকারে ধীরে ধীরে তৈরী হচ্ছে ইফতার আর আস্তে আস্তে জমতে শুরু করেছে দুষ্ট, ভদ্র, প্রিয় বন্ধুগুলো। সম্মানিত শিক্ষকরা এসে এক হচ্ছে আর তরুণ প্রাণগুলো পুলকিত হয়ে উঠছে। সূর্য যত বিদায় নিচ্ছে মাঠের চারপাশে শুভ্র উলু ফুলগুলো ঝলঝল করে জ্বলছে, মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে এভাবেই ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে ইফতার আয়োজন।

আরও পড়ুন: রমজান মাসে ফজিলত বাড়ানোর ‍উপায়

নিজ ব্যাচ, বিভাগ, অনুষদ ছাপিয়ে মাঠের প্রতিটা অংশে ভরে যায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী আর শুভাকাঙ্ক্ষীেদের বিচরণে। যার যার ক্লাস, অফিস, দায়িত্ব ছেড়ে সবাই এখন এক প্রাণে, এক বন্ধনে। এই সৌন্দর্য মস্ত বড় জাদুকরের তৈরী করা কোন এক বিস্ময়ের মতো!

গ্রীষ্মের তাপদাহে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীরা ভুলে যায় সকল কষ্ট, ভেদাভেদ ভুলে, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবক, সৃজনশীল, শৈল্পিক, শিল্পচেতনা মূলক সকল সংগঠন একত্রিত হয়। আড্ডায়, গল্পে, খোশমেজাজে তৈরী করে অন্য রকম আবেশ। শিক্ষকদের সাথে থাকা দূরত্বের অবসান আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলো আরো গাঢ় হয়, সকল কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্পর্কগুলোর দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। দূর দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার কেন্দ্রীক কষ্টগুলো ভুলে ডুবে যায় অন্যরকম এক ভালোবাসায়।

ক্যাম্পাসে হল কিংবা ক্যাফেটেরিয়া না থাকলেও সবুজ মাঠেই যেন প্রাণের স্পন্দন ঘটে। ক্যাম্পাসের আশেপাশের স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও তাদের পরিবার-পরিজন ছেড়ে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার করতে ছুটে আসেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাস হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। শিক্ষার্থীরা যে ক্যাম্পাসের প্রাণ সেটা প্রমাণ করে দেয় এসব প্রাণবন্ত মূহুর্তগুলোই।

ক্যাম্পাসে ইফতার নিয়ে আইন বিভাগের ২য় সেমিষ্টারের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন সোহাগ বলেন, পরিবারের বাইরে এভাবে কখনো ইফতার করা হয়নি। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ১ম সেমিষ্টার অনলাইনে গেছে। পরের সেমিষ্টারের ৫ মাস হয়ে গেছে এখনো সেভাবে কারো সাথে পরিচিত হয়ে উঠতে পারিনি। তবে, এই ইফতারে অংশ নিয়ে মনে হয়েছে সবাই আমার পরিচিত, সবাই আপন।

ইফতারের এতসব সৌন্দর্যের বাইরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার বেদনার গল্পও লুকিয়ে আছে। করোনা দুই বছর কেড়ে নেওয়ায় অনেক কিছুই হারাতে করতে হয়েছে সবাইকে। এরমধ্যে ইফতার আয়োজন অন্যতম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ সেমিষ্টারের শিক্ষার্থীদের জন্য এই বেদনা আরো বেশি। এবারই তারা শিক্ষার্থী হিসেবে শেষ বারের মতো ইফতার করছে।

এমনই এক অনুভূতি শেয়ার করলেন ভেটেরিনারি সায়েন্স অনুষদের ফাতেমা আক্তার মনিকা। তিনি বলেন, সময়টা খুব দ্রুতই বিদায় নিচ্ছে। এভাবে আর ইফতার করা হয়ে উঠবে না। সত্যিই মিস করবো সময়টা। ভালো থাকুক ছোটরা।

সত্যিই সৌন্দর্যের আড়ালে অনেক বেদনাও লুকিয়ে থাকো। তাই, সবকিছু ছাপিয়ে এটাই বলবো, থমকে যাওয়া কিছু মূহুর্ত আর শব্দ দিয়েই জীবন সুন্দর। ক্যাম্পাসে ইফতারের যে সৌন্দর্য তৈরী হয়েছে তার বেদনার গল্পগুলোও মধুর এবং স্মৃতিময় হয়ে বেঁচে থাকুক নিস্তব্ধ জীবনের উচ্ছ্বসিত অধ্যায়ে।


সর্বশেষ সংবাদ