লাল তালিকায় নর্থ সাউথসহ ১৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়  © লোগে

সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য না থাকা, অনুমোদনহীন ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা,  অনুমোদন নেই এমন প্রোগ্রাম রাখাসহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আছে- এ রকম ১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ (আপডেট) করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

বছরের বিভিন্ন সময় এই হালনাগাত করে ইউজিসি। শিক্ষার্থী, অভিভাবক বা জনসাধারণের সচেতনতার্থে ইউজিসির ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়। সর্বশেষ এ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। আর নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে গত জুনে তালিকায় ১৬ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছিল। 

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের তালিকা আগে থেকে করে আসছে ইউজিসি। সম্প্রতি সেখানে একটি শর্ত সংযোজন করা হয়েছে। যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের অধিক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলেও ওয়েবসাইটে স্টার মার্ক দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এই তালিকা ইউজিসির ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট করা হয়। এখন থেকে ৬টি কারণে স্টার মার্ক দেওয়া হবে। পরবর্তীতে যাদের এসব শর্ত পূরণ হয় তাদের স্টার মার্ক উঠে যাবে। সম্প্রতি এরকম ২-৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার মার্ক উঠে গেছে। ইউজিসির ওয়েবসাইটে গেলে এসব তালিকা পাওয়া যাবে বলেও তিনি জানান।

তথ্যমতে, ইউজিসির মানদণ্ডে ত্রুটি রয়েছে এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করে সংস্থাটি। একই সাথে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রেও দেয় সতর্কতা। মোট ৬ কারণে ইউজিসির ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়।  

এবার নতুন একটি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। শর্তগুলো উল্লেখ করে সম্প্রতি একটি স্মারক প্রকাশ করে তার অনুলিপি সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে ইউজিসি।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, দেশে অনুমোদিত মোট ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪টির পাশে লাল তারকা চিহ্নিত করা আছে।

যেসব কারণে লাল তালিকাভুক্ত হবে: কমিশন অননুমোদিত প্রোগ্রাম/কোর্স পরিচালনা করলে; কমিশন অননুমোদিত ভবন/ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে; ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মালিকানা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে মামলা থাকলে; কমিশন অনুমোদিত আসন সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলে; যেসকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ মাসের অধিক সময়ের জন্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ না থাকলে; সর্বশেষ ২ বছর আইনের ৪৫ ধারা মোতাবেক পরবর্তী আর্থিক বৎসরের ৩১ মার্চের মধ্যে সরকার কর্তৃক মনোনীত অডিট ফার্ম কর্তৃক নিরীক্ষিত প্রতিবেদন কমিশনে প্রেরণ না করলে।

৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ভবন/ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম
ইউজিসির দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, অবৈধ ভবনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি,  ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং নর্দান ইউনিভার্সিটি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে একটি লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে।

৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে অননুমোদিত প্রোগ্রাম
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় একটি প্রোগ্রামের অনুমোদন নিয়ে সেই প্রোগ্রামের অন্তরালে আরও ১০টি প্রোগ্রাম পরিচালনা করছে। যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ বলে জানিয়েছে ইউজিসি। অননুমোদিত প্রোগ্রামগুলো হলো বিবিএ ইন জেনারেল, বিবিএ ইন ফিন্যান্স, বিবিএ ইন এইচআরএম, বিবিএ ইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস, বিবিএ ইন মার্কেটিং, বিবিএ ইন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, বিবিএ ইন অ্যাকাউন্টিং, বিবিএ ইন ইকোনমিক্স, বিবিএ ইন এন্টারপ্রেনিউরশিপ এবং বিবিএ ইন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট।

গণবিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিতভাবে বিবিএ, পরিবেশ বিজ্ঞান, এমবিবিএস, বিডিএস এবং স্কাইকোথেরাপি প্রোগ্রামগুলো হাইকোর্ট ডিভিশন ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয়টি এসব প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

তাছাড়া জেড এইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, পুণ্ড ইউনিভার্সিটি অননুমোদিতভাবে প্রোগ্রাম চালু করেছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশেও একটি লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে। তবে মালিকানা দ্বন্দ্ব থাকায় সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পাশে দুটি লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে। 

৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে মালিকানা দ্বন্দ্ব
ব্রিটেনিয়া ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে মালিকানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে দুটি লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই ইবাইসে 
ইবাইস ইউনিভার্সিটির দুইজন মালিক একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে একটি গ্রুপ ধানমন্ডি অন্য গ্রুপউত্তরা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করছে। এক সময় কোর্টের রায়ে ধানমন্ডি বাড়ি নম্বর-২১/এ, সড়ক নম্বর-১৬ (পুরাতন-২৭), ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯ ঠিকানাটি হাইকোর্ট ডিভিশনের ১ বছরের স্থগিতাদেশ থাকায় কমিশনের ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়েছিল। বর্তমানে ওই স্থগিতাদেশের কার্যকারিতা ভ্যাকেট হয়ে যাওয়ায় ইবাইস ইউনিভার্সিটির ওই ঠিকানা কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে বাতিল করা হলো। তাই বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত কোনো ঠিকানা নেই। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে তিনটি লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে।

দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লায় শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরুর অনুমতি দেয়া হয়নি
মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের Civil Petition for Leave to Appeal No. 1967/2018 (out of Writ petition no. 4263/2018) এর আদেশ বলে দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এর ঠিকানা এবং প্রোগ্রামসমূহ ইউজিসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশনা চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কমিশন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরুর অনুমতি অদ্যাবধি প্রদান করা হয়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশেও তিনটি লাল তারকা চিহ্ন প্রদান করা হয়েছে।

শর্ত পূরণ করায় বাদ ৪ বিশ্ববিদ্যালয়
অননুমোদিত ভবন/ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করায় উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এক সময় লাল তালিকা ছিল। তবে শর্ত পূরণ ইউজিসির ওয়েবসাইটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন উঠে গেছে।

এছাড়া চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ইন কুরআনিক সায়েন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ প্রোগ্রামটি অননুমোদিতভাবে পরিচালনা করায় লাল তালিকায় ছিল। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির নামের পাশেও লাল তারকা চিহ্নটি উঠে গেছে।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রদীপ্ত মোবারক বলেন, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে লাল তারকা চিহ্ন উঠে গেছে। বর্তমানে উত্তরার স্থায়ী ক্যাম্পাসে ‍বিশ্ববিদ্যালয়টির সকল কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

তালিকায় নতুন দুই বিশ্ববিদ্যালয়
অননুমোদিত প্রোগ্রাম পরিচালনা করায় পুণ্ড এবং জেড এইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয় তালিকায় নতুনভাবে অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। এরমধ্যে জেড এইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয় এমএ ইংরেজি প্রোগ্রামটি এবং পুণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় এলএলবি অনার্স প্রোগ্রামটি ইউজিসির অননুমোদিতভাবে পরিচালনা করছে।


সর্বশেষ সংবাদ