করোনাকালেও থেমে নেই ডিআইইউ শিক্ষার্থীদের রক্তদান

  © টিডিসি ফটো

উন্নত দেশে বেশিরভাগ রক্তদাতাই হলেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতা, যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রক্তদান করেন। পূর্বে আমাদের দেশে রক্তদাতার সংকট থাকলেও বর্তমানে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা বেড়েছে। গড়ে উঠেছে বেশকিছু ব্লাড ডোনেশন সংস্থাও। করোনাকালে এমনিভাবে মানবতার সেবায় স্বেচ্ছায় রক্তদান করে চলেছে ঢাকা ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইই্উ) শিক্ষার্থীরা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ডিআইই্উর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আজহার মুবিন, মোহাইমিনুল সার্জিল, মাসুদ পারভেজ ও মাহাদী হাসানের উদ্যোগে শুরু হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি। এছাড়া এলিটি ইংলিশ ক্লাবের ওমর ফারুক, ইসরাত জাহান, সজীব হাসান, মোফাজ আহমেদ, ফারিয়া ইসলাম, সিভিল ক্লাবের রনি চৗেধুরী, সাওরোর হোসেন রাফি, ইউসুফ আল রাকিব, ফার্মেসি বিভাগের টিপু সুলতান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আব্দুর রাজ্জাক সবুজ, ইংলিশ আলুমনি ক্লাবের সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের প্রায় দুইশ শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে এই রক্তদান কর্মসূচি। করোনাকালেও থেমে নেই ডিআইইউ এর রক্তদাতারা।

ডিআইইউ ছাত্র মোহাইমিনুল সার্জিল দ্যা‌ ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমাদের সামান্য সাহায্যের জন্য কারও প্রাণ বেঁচে যেতে পারে। পূর্বে আমাদের দেশে রক্তদাতার অভাব ছিল তার কারণ সঠিক তথ্য ও অভিজ্ঞতার অভাব। কিন্তু বর্তমানে আমরা খুব সহজেই রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় রক্তের সন্ধান পেতে পারি। বেশিরভাগ রক্তদাতাই কেবল তাদের পরিচিতজনদের প্রয়োজনে রক্তদান করে থাকেন। অনেক রক্তদাতা সমাজসেবামূলক কাজ হিসেবে রক্তদান করেন, তবে কিছু মানুষ পেশাদার রক্তদাতা, তারা অর্থ বা কোন ভাতার বিনিময়ে রক্তদান করে থাকেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেকেই রয়েছেন যারা রক্ত কেনার মতো সামর্থ্য রাখেন না। সঠিক সময়ে রক্তের অভাবে প্রাণনাশের ঘটনাও ঘটে থাকে। আমাদের রক্তে যদি একজন মুমূর্ষ রোগীর আয়ু বর্ধিত হয় তাতে ক্ষতি কি! রক্ত কমে গেলে পুষ্টিকর খাদ্য খেলে শরীরে পুনরায় রক্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব কিন্তু রক্তের অভাবে প্রিয়জন হারানোর কষ্ট হয়তো বোঝানোর মতো নয়। কোন একটা বিষয়ে কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ, বাস্তবায়ন আর সফলতা।

সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কাজ এর উদ্যোগ নিলে, সবাই মিলে সেই কাজটি সম্পন্ন করলে, সফলতা আসবেই। আজকে ডিআইইউ‌ এর প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী তাদের নিজের ইচ্ছায় এমনকি নিজের খরচে প্রায় প্রতিদিন রক্তদান করে চলেছেন। আমরা আজ এই জায়গা পর্যন্ত আসতে পেরেছি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার কারনেই। আমি আশা করি সকলে যদি এভাবে মানব সেবায় কাজ করে দেশের কোনো মানুষ রক্তের অভাবে তাদের প্রিয়জনকে হারাবেনা-যোগ করেন এই ছাত্র।

ডিআইইউ শিক্ষার্থী মাহাদী হাসান জানান, আমাদের সকলের উচিত রক্ত দেওয়া। আমাদের সামান্য রক্তে কারও মূল্যবান প্রাণ বাঁচানো সম্ভব। আমাদের দেওয়া রক্তের কারণে কেউবা নতুন জীবন পেতে। প্রয়োজনের সময় এক ব্যাগ রক্ত জীবন-মরণের সেতু হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোন ম্যারো নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এ ঘাটতি পূরণ করে। আর বছরে তিনবার রক্তদান রক্তদাতার লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে দেয়। আমরা সবসময় চেষ্টা করি যেকারো প্রয়োজনে রক্ত দিতে।

তিনি বলেন, আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী আছেন যারা প্রতিদিন রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাদের ইচ্ছে থাকলেও রক্ত দিতে ভয় পান। আমি বলবো একবার সাহস করে রক্ত দিয়ে দেখুন মনে এক প্রকার শান্তি অনুভব করবেন যা সত্যি বলে বোঝানোর মতো নয়। সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি স্রষ্টাসহ সকলের কাছে সম্মানিত হয়।


সর্বশেষ সংবাদ