ড্যাফোডিলে সাংবাদিক হেনস্তার ঘটনায় তদন্ত কমিটি, তিন সিকিউরিটি কর্মকর্তা প্রত্যাহার

চোর ধরার পর এখানেই শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচারণ করেন সিকিউরিটি কর্মকর্তা
চোর ধরার পর এখানেই শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অসদাচারণ করেন সিকিউরিটি কর্মকর্তা  © টিডিসি সম্পাদিত

চোর ধরার ঘটনা ভিডিও করার সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিক হেনস্তার অভিযোগে তিন সিকিউরিটি কর্মকর্তাকে সাময়িক প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সাথে ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

গতকাল শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি প্রসাশনিক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শেখ মোহাম্মদ আল্লাইয়ার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রক্টর জানান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আতিকুর রহমান বাবুকে সংবাদ সংগ্রহের সময় হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত তিন সিকিউরিটি কর্মকর্তা নকিব, ইমতিয়াজ ও নাসেরকে সাময়িক প্রত্যাহার করেছে। একই সাথে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন থেকে চার দিনের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন স্বাস্থ্য ও জীবন বিজ্ঞান অনুষদের সহকারী ডিন মোহাম্মদ সারওয়ার হোসেন, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বদরুজ্জামান, পুষ্টি ও খাদ্য ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে চুরির ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক হেনস্তার শিকার হন আতিকুর রহমান বাবু। তিনি জানিয়েছেন, ওইদিন ক্যাম্পাসে এক চোরকে হাতে-নাতে ধরেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় আশেপাশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা ওই চোরের ভিডিও ধারন ও ছবি তুলতে থাকলে ঘটনাস্থলে উৎসুক আবহ তৈরি হয়। বিষয়টি নজরে আসলে ক্যাম্পাস সাংবাদিক আতিকুর রহমান বাবুও ওই ঘটনার ভিডিও করতে গেলে নিরাপত্তাকর্মীরা তার ওপর চড়াও হন। তাকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ৩০ মিনিট আটকে রাখেন।

তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ঘটনাটি ভিডিও করছিলাম। তখন তারা বলে, সাংবাদিকতা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি লাগবে। এরপর তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল রুমে নিয়ে যায় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে প্রক্টর স্যারকে ফোন দিতে গেলে কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা নকিব বলেন, প্রক্টর স্যার বলেছেন বেঁধে নিয়ে যেতে।’

ঘটনার দিন আতিকুর রহমান বাবু বলেন, ‘হলের পানির ফোয়ারা চুরির নিউজ করার পর থেকেই সিকিউরিটির লোকজন আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আজ চোরের ভিডিও করতে গেলে সিকিউরিটি পরিচালক শাহ আলম আমাকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে চোরকে গোপন রুমে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনের লোকেরা মারধর শুরু করলে সেখানে যাই; পরে চোরকে টেনে হেছড়ে কন্ট্রোল রুমের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে আমাকে হেনস্তা করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভিডিও করতে গেলে সিকিউরিটির লোকজন আমাকে বলে সাংবাদিকতা করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি লাগবে। এ সময় আমি মোবাইল বের করতে গেলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে কন্ট্রোল রুমে ডুকিয়ে জোর করে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। পরে আমি প্রক্টর ও ভিসিক স্যারকে কল দিতে গেলে তারা বলেন, ‘ভিসিকে কল দে, দেখি কি করে!’ ইমতিয়াজ ও রাসেল আমাকে টেনে নিয়ে যায় এবং মোবাইল কেড়ে নেয়। নকিব শারীরিকভাবে হেনস্তা করে।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ধরা পড়া চোরটি গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাস থেকে সাইকেল, আইফোন ও পানির ফোয়ারাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করেছিলেন। তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে ‘এক্সপ্রেস সিকিউরিটি সার্ভিস’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বারবার চুরির ঘটনা ঘটলেও নিরাপত্তা কোম্পানির কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্ত দিয়ে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী জানান, ক্যাম্পাসে সিকিউরিটি অফিস নামেই, কার্যত তারা শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসে না। আর এ কারণেই প্রায়ই তাদের জিনিসপত্র খোয়া যায়।


সর্বশেষ সংবাদ