হরতাল-অবরোধ
অনলাইন ক্লাসে ফিরেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ PM , আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ PM
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের কারণে অনলাইন ক্লাসে ফিরেছে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন-অফলাইন দুই মাধ্যমেই ক্লাস চলমান রেখেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অধিকাংশ অভিভাবক সন্তানদের সশরীরে ক্লাসে যেতে মানা করছেন। বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন, যানবাহন সংকট, প্রতিকূল পরিবেশসহ নানা কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
এসব কারণে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে অনলাইনে ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এছাড়া এ ধরনের কর্মসূচিতে শিক্ষা কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাসে ফিরেছেন তারা।
তাদের মতে, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আরও আসতে পারে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া যেন থেমে না যায় সেজন্য অনলাইন ক্লাসে ফিরেছেন তারা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীরা যেন স্বাভাবিক নিয়মেই পরীক্ষায় বসতে পারেন সেজন্য তাদের এমন আয়োজন।
জানা গেছে, আজ রোববার থেকে বিএনপি-জামায়াতের ঘোষিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনলাইনে ক্লাস নিতে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বিষয়টি জানিয়ে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভদের (সিআর) মাধ্যমে অনলাইন ক্লাসের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর এবং ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একই প্রক্রিয়ায় অনলাইন ক্লাস নিয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি আরও আসতে পারে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের শিখন প্রক্রিয়া যেন থেমে না যায় সেজন্য অনলাইন ক্লাসে ফিরেছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, আইইউবিএটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
অনলাইনে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হলেও পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে অফলাইনে। পরীক্ষার জন্য শুক্র এবং শনিবারকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্র এবং শনিবার হরতাল কিংবা অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকে না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা সশরীরে পরীক্ষা দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ কারণে পরীক্ষাগুলো অফলাইনে নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমাদের অধিকাংশ ক্লাস অনলাইনে হচ্ছে। তবে কিছু কিছু ক্লাস অফলাইনেও আয়োজন করা হচ্ছে। সব ক্লাস অনলাইনে আয়োজন করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে ব্যবহারিক ক্লাসগুলো। কোন ক্লাসগুলো অফলাইনে আয়োজন করা হবে সেগুলো শিক্ষকরা জানিয়ে দিচ্ছেন।’
ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাটা সবার আগে দেখতে হবে। অবরোধে কেউ ক্লাসে আসতে গিয়ে হামলার শিকার হলে তখন বিষয়টি গুরুতর হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে ক্লাসগুলো অনলাইনে আয়োজন করা হবে। তবে অফিস খোলা থাকবে।’
আরো পড়ুন: প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দুবাইয়ে শাখা খোলার অনুমতি পাচ্ছে ড্যাফোডিল
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার ড. আহমেদ তাজমীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি। কিছু পরীক্ষাও অনলাইনে আয়োজন করা হচ্ছে। অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি না থাকলে অফলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি’।
এর আগে গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। একইদিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ ডাকে জামায়াত। জামায়াত সমাবেশ করতে পারলেও বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। কর্মসূচি পালন করতে না পেরে ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
হরতালের প্রথম দিনে বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হামলা-মামলাসহ একাধিক অভিযোগ এনে গত ৩১ অক্টোবর এবং ১ ও ২ নভেম্বর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল রোববার এবং আগামী সোমবার পুনরায় অবরোধ ডেকেছে দলটি।
তাদের সে কর্মসূচিতে সমর্থন জানিয়েছে জামায়াত। বিএনপি-জামায়াতের এমন টানা কর্মসূচিতে অনলাইন ক্লাসে ফিরেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।