বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বহিষ্কারের প্রতিবাদে গাছতলায় ক্লাস শিক্ষার্থীদের
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১১:২৮ AM , আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৫৭ PM
সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় প্রতীকী ক্লাস নিয়েছেন লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাস। শিক্ষার্থীদের অনুরোধে বিভাগের বুধবার (১৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে ৪-৫টা পর্যন্ত তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে তার ক্লাস পরিচালনা করেন। এতে প্রথম বর্ষ থেকে ৫ম বর্ষের ৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ক্যাম্পাসে তাদের প্রিয় শিক্ষককে ক্লাস করতে অবৈধভাবে বাধা দেওয়ার কারণে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি লিডিং ইউনিভার্সিটির সকল বেআইনি কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একটি শান্তিপূর্ণ ও সৃজনশীল প্রতিবাদ বলে তারা উল্লেখ করেন।
শহিদ মিনারের ক্লাসে স্থপতি রাজন দাশ একজন স্থপতির সামাজিক দায়বোধ ও কর্তব্য বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন। ‘কষ্ট এস্টিমেশন’ কোর্সের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরেন তার বিরুদ্ধে আনিত আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ মিথ্যা। সবশেষে স্থাপত্য বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ও লুই আই কানের ভাবনার সাযুজ্য ব্যাখ্যা করেন তিনি।
এর আগে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার লিডিং ইউনিভার্সিটির ক্লাস রুম তালা দিয়ে দিনভর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন মঙ্গলবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক স্থপতি জেরিনা হোসেন এবং রাজন দাশকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্বপদে পুনর্বহালের দাবিতে শহিদ মিনারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে সম্মিলিত নাগরিক সমাজ।
ক্যাম্পাসে অনুমোদনহীনভাবে অনুপস্থিত থেকে কাজে ফাঁকি, পেশাগত অসদাচরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজের বিপরীতে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগ বন্ধের হুমকি প্রদানসহ প্রায় অর্ধ ডজন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাসকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার এ বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষকদের বহিষ্কারাদেশ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। মঙ্গলবার যুব ও ছাত্র ইউনিয়ন বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সোমবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় নাগরিক সমাজ। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ রুমে তালা দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান ও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
স্থপতি রাজন দাশ এক আলোচিত নাম। বিভিন্ন ভাষার অক্ষর খচিত প্রথম শহিদ মিনারের স্রষ্টা তিনি। তার এই শহিদ মিনার দেশে-বিদেশে বহুল আলোচিত। তিনি লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে থাকলেও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত, ভারপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করে। যদিও বিদেশ সফরে থাকা খোদ ভিসি এই আদেশ তাৎক্ষণিক স্থগিত করেছেন।
তারপরও বহিষ্কারাদেশ বলবত রাখার পাশাপাশি গুণী এই স্থপতির বিরুদ্ধে নানা কুৎসা, অপবাদ, অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মহল। যার পরিপ্রেক্ষিতে তার পাশে দাঁড়ায় সিলেটের সর্বস্তরের পেশাজীবী ছাড়াও নাগরিক সমাজ। তাকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, নাগরিক সমাজ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মওলা গত ৪ অক্টোবর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দিতে ১৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে যান। তিনি কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে গেলেও ট্রেজারার বনমালী ভৌমিক ভারপ্রাপ্ত উপচার্যের দায়িত্ব নিয়ে এখতিয়ার বহির্ভূত কর্মকান্ড আবারও শুরু করেন।
এরমধ্যে স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাসকে ১১ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে পরদিনই বহিষ্কার করেন। যদিও যুক্তরাষ্ট থেকে ইমেইলের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা বরখাস্তের চিঠিটি খারিজ করে দেন।
তার বরখাস্তের বিষয়টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা মানতে না পেরে পরদিন থেকে ক্যাম্পাসে ও সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে লিডিং ইউনিভার্সিটির দুর্নীতিবাজদের অপসারণ ও দেশ বরেণ্য দুই স্থপতি রাজন দাশ ও স্থপতি জেরিনা হোসেনকে সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।