মানারাতের সমাবর্তনে ২ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েটের সনদ লাভ

বিশ্বের ৪৯ ভাগ গ্র্যাজুয়েটের পড়াশোনার সঙ্গে কর্মজীবনের মিল নেই: শিক্ষামন্ত্রী

মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠান
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তন অনুষ্ঠান  © টিডিসি ছবি

বিশ্বের ৪৯ ভাগ গ্র্যাজুয়েটের পড়াশোনার সঙ্গে কর্মজীবনের মিল নেই বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, এসব গ্র্যাজুয়েটের পড়াশোনা এক বিষয়ে, কর্মজীবন অন্য বিষয়ে। আজ রবিবার রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রী হলে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ২য় সমাবর্তনে এসব কথা বলেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারা অনেকেই বলে থাকেন, আমি পড়েছি বাংলায় কাজ করছি ব্যাংকে, আর পড়েছি মনোবিজ্ঞানে কাজ করছি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সারা বিশ্বের চিত্রও তাই। নিজের বিষয়ে কাজ করে না শতকরা ৪৯ ভাগ গ্র্যাজুয়েট। সবচেয়ে লেটেস্ট গবেষণা এটাই বলে। কিন্তু আমি যাই করি না সেটা করার জন্য প্রস্তুত কিনা সেটা খুব জরুরি।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর এমিরেটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমার ঔপনিবেশিক শিক্ষার কথা বলি। এই ঔপনিবেশিক শিক্ষা নিয়ে জাতির পিতা বলেছিলেন-এটা কেরানি বানানোর শিক্ষাব্যবস্থা। সত্যি সত্যি তাদের সার্ভ করার জন্য কেরানি সম্প্রদায় তৈরি করার জন্য এই শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল। তাই এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় জোর দিতে। সেটি এখন দিচ্ছি। প্রকৌশল, চিকিৎসা ও কৃষি শিক্ষার প্রতি জোর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঝখানে তো বিজ্ঞান-প্রযুক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা। এখন সেটাকেও জোর দেয়া হচ্ছে। 

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া দুই হাজরেরও বেশি গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা জ্ঞান বিজ্ঞানে অগ্রগামী হবে। সততা, মানবিকতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, শরীর মনে সুস্থ এবং কর্মে উদ্যমী মানুষ হয়ে দেশের সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করবে।

তিনি বলেন, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি করে আসছে। এই  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, বাজার চাহিদার সঙ্গে শিক্ষার যোগসূত্রতা, সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধসহ নানা বিষয়ে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছে।

গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে হবে। আমি আশা করি, তোমরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভবিষ্যত জীবনে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করবে। 

সমাবর্তনে অংশ নেওয়া গ্র্যাজুয়েটদেরকে তাদের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানান মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আজকের সমাবর্তনে এমন অনেকেই আছে যারা বেশ আগেই পড়া লেখা শেষ করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আবার অনেকেই আছে সদ্য নিজের শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি টেনে নিজের স্বপ্ন জয়ের পেছনে অবিরাম ছুটে চলেছে। আজকে আমরা যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছি এবং প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য নিরন্তন শ্রম দিয়ে যাচ্ছি তাদের একটা জায়গায় খুব মিল আছে। আর সেটা হল স্বপ্ন। স্বপ্নই আমাদের জীবনের মূল চালিকা শক্তি।

তিনি বলেন, 'যারা সত্যিকারে সাহসী, লড়াকু, যারা ভিন্ন কিছু করতে প্রস্তুত তারাই আউট অব বক্স চিন্তা করে। এখনের যুগ অ ও (artificial intelligence) এর যুগ, তথ্য প্রযুক্তির যুগ। এই সময় Out of Box  চিন্তা করা ছাড়া উপায় নেই। এসময় আতিকুল ইসলাম নিজের একজন উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, বাঙালির সংস্কৃতি হাজার বছরের পুরনো সংস্কৃতি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সম্পদ।  যে চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ৩০ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে যে সংবিধান আমরা পেলাম, যে মানচিত্র আমরা পেলাম জীবনের সবটুকু দিয়ে তা সমুন্নত রাখার চেষ্টা করে যাব। নিজেকে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, আদর্শবান, অসাম্প্রদায়িক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট থাকবো।

তিনি সমাবর্তনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের শুভকামনা জানিয়ে বলেন, তোমাদের জীবন-যাত্রা নিবিঘ্ন হোক। তোমাদের স্বপ্ন সত্যি হোক। স্বপ্ন হোক আকাশ ছোঁয়ার, গন্তব্য হোক বহুদূর।  

সমাবর্তন বক্তা প্রফেসর এমিরেটাস ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, গবেষণাভিত্তিক জ্ঞানসৃষ্টিতেই একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে মনোনিবেশ করতে হয়। আমি মনে করি, তোমরা যারা গ্রাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছো, তোমাদের মধ্যে সেই প্রেরণা কাজ করছে। বিশ্বের যে প্রান্তেই তোমরা কাজ করো না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কাজে লাগিয়ে মানবতার সেবায় নিজেদেরকে নিয়োজিত করবে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।

অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েটদের মাঝে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক বিতরণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এবারের সমাবর্তনে চারটি বিভাগে মোট ২০ জন গ্রাজুয়েটকে পদক প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে পাঁচজন পান চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল, তিনজন চেয়ারম্যানস গোল্ড মেডেল, তিনজন ভাইস-চ্যান্সেলরস গোল্ড মেডেল এবং বিভিন্ন বিভাগ থেকে নয়জন পান ডিনস গোল্ড মেডেল।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সাবেক সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অনারারি অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হক, ঢাকা ১৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. মেখলা সরকার, ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সেলিম মাহমুদ, হাসুমণির পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপি, বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সদস্য ইসরাত জাহান নাসরিন, সোশ্যাল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মিহির কান্তি ঘোষাল এবং মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম।

এছাড়া বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তন শেষে সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান বাউল শিল্পী ভজন ক্ষ্যাপা ও বিজয় ব্যান্ড।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence