বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

জানুয়ারিতে ২ সেমিস্টার চালুর সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীতের শঙ্কা

জানুয়ারিতে ২ সেমিস্টার চালুর সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীতের শঙ্কা
জানুয়ারিতে ২ সেমিস্টার চালুর সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীতের শঙ্কা  © লোগো

২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকেই দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সেমিস্টারের (ট্রাই সেমিস্টার) পরিবর্তে দুই সেমিস্টার (বাই সেমিস্টার) পদ্ধতি চালু হচ্ছে। এরই মধ্যে এই সিদ্ধান্তের কথা সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে জানিয়ে দিয়ে কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছে দেশের উচ্চশিক্ষার তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতে, যেনতেনভাবে কোর্স শেষ করার প্রবণতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসা এবং শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে হাতেকলমে শেখানোর পাশাপাশি দক্ষতা বাড়ানো জন্য এ উদ্যোগ বলে জানিয়েছে ইউজিসি।

তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা ইউজিসির হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন। তাদের মতে, এ সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ব্যয় বাড়বে, এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিকভাবে চাপে পড়বে। তাছাড়া করোনার সময় এই সেক্টরে যে ক্ষতি হয়েছে এখন তা কাটতে শুরু করেছে। এ সময় এমন হস্তক্ষেপ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তি আশঙ্কাজনক হারে কমবে। তাই ইউজিসির এমন সিদ্ধান্তে অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। 

অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্ত মানবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি সংগঠনটি বলছে, ইউজিসি পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হলেও হঠাৎ এ পরিবর্তন মেনে নেওয়া যাবে না। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। তাই আপাতত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংগঠনটির।

দেশে বর্তমানে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে দুই সেমিস্টারে পাঠদান চললেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগেই শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে তিন সেমিস্টারে।

আরও পড়ুন: অপরিকল্পিত উচ্চশিক্ষা: মেধা আর অর্থ দুটোরই অপচয়

যদিও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় বছরে 'স্প্রিং' ও 'ফল' এ দুটি সেমিস্টার মানা হয়। আর আমাদের দেশে বছরে তিনটি- স্প্রিং, ফল ও উইন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। যাতে প্রতি চার মাসে সম্পন্ন করা হয় একটি সেমিস্টার। একটি সেমিস্টারের পাঠ ভালোভাবে রপ্ত করার আগেই শিক্ষার্থীদের সামনে চলে আসে আরেকটি সেমিস্টার। এভাবে  শিক্ষার্থীরা দক্ষতায় পিছিয়ে পড়ে চাকরি বাজারে গিয়ে। আবার প্রতি সেমিস্টারে শিক্ষার্থীকে নতুন করে ভর্তি হতে হয় বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে। তাছাড়া সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাই সেমিস্টার চালু রয়েছে। এ জন্যই একটা স্ট্যান্ডার্ড গাইড লাইন অনুসরণ করতে এবং আইনের বাধ্যবাধকতা মানাতে দুই সেমিস্টারে পড়াতে চায় ইউজিসি।

গত ২৮ নভেম্বর কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি একটি চিঠি বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর রেজিস্ট্রারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। যাতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি (বাই-সেমিস্টার) চালুর সিদ্ধান্ত অনুসরণ করতে হবে। 

ইউজিসির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিশনের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং কিছুসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে সুনামের সঙ্গে বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ২৪(৩) এবং ৩৫(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রোগ্রাম ও কোর্স অনুমোদনের অন্যতম শর্ত হলো ‘প্রোগ্রামটি অবশ্যই ডুয়াল সেমিস্টার ভিত্তিতে পরিচালনা করতে হবে।

মূলত, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চাহিদা অনুযায়ী কমিশন প্রণীত আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) টেমপ্লেট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব প্রোগ্রাম বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনুরূপ বাধ্যবাধকতা রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল আইন, ২০১৭-এর ১৫ ধারার আওতায় প্রণীত বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশনস ফ্রেমওয়ার্কেও (বিএনকিউএফ)।

আরও পড়ুন: পাওয়ার পলিটিক্স নয়, রিসার্চ পলিটিক্সে গুরুত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের

চিঠিতে আরও জানানো হয়, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনুরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করছে। বর্ণিতাবস্থায় দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি (বাই-সেমিস্টার) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও কমিশন প্রণীত নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলো।

তথ্য বলছে, এর আগেও ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েও অনেকটা ব্যর্থ হয়েছে। কমিশন দুই সেমিস্টার পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়ে এর আগে কয়েক দফা সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল। তবে এবার কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার তারা এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর নতুন যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোতে শুরু থেকেই দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশনা আগে থেকেও রয়েছে কমিশনের।

কমিশন দুই সেমিস্টার চালুর জন্য ২০১৩ সাল থেকে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নতুন যেকোনো কোর্স অনুমোদনের ক্ষেত্রে বাই-সেমিস্টার চালুর শর্ত দিয়ে আসছে। যদিও বর্তমানে দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানই তিন সেমিস্টারে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।  
 
এ বিষয়ে বেসরকারি সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির রেজিস্টার কাজী ফখরুদ্দিন আহমেদ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বর্তমানে আমাদের ফার্মেসি ও আইন অনুষদ বাদে বাকীগুলো তিন সেমিস্টারেই চলছে। এটা শুধুমাত্র আমাদের না অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। আমরা এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমিতিকে জানিয়েছি; শিক্ষামন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এখন আমরা চাইলেই মাঝপথে সিদ্ধান্ত বদলানো যাবে না। ইউজিসির নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমাদের আরও সময় লাগবে; সময়ের হিসেবে তা কমপক্ষে তিন-চার বছর লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন: টাইমস হায়ার র‌্যাঙ্কিং: শীর্ষ ৬০০-তে নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়

কাজী ফখরুদ্দিন আহমেদ বলেন, এর পাশাপাশি আমাদের আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ, তিন সেমিস্টারে আমি যদি ৫০ জন করে তিনবারে ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিতে পারি; দুই সেমিস্টারে তার এক তৃতীয়াংশ কমে যাবে। তিনি বলেন, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এতে সমস্যা না হলেও ছোট বা মাঝারি বাজেটের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমস্যার সম্মুখীন হবে। কারণ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের একমাত্র উৎস শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অর্থ। 

ইউজিসির আউটকাম বেজড কারিকুলামের (ওবিই) চিন্তা বা পরিকল্পনা ভালো তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তা আরও বেশি ভালো হতো জানিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, এখন যেসব কোর্সে তিন সেমিস্টার চলমান আছে তা শেষ হতে নূন্যতম সময় লাগবে; সে সময় দেয়া অথবা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন ছিল। এখন তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তা নিয়ে তো আমাদের কিছু করার নেই। তবে এতে শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী কোনো কারণে এক সেমিস্টার বাদ দিলে বা কোনো কারণে করতে না পারলে তারা চার মাসের মধ্যে তা করতে পারতো; নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তা সম্পন্ন করতে ছয় মাস লাগবে। এছাড়াও এটি বর্তমানে চলমান কোর্সের সাথে সমন্বয় করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় সবদেশেই বাই-সেমিস্টার চলমান রয়েছে; এটি ভালো উদ্যোগ। তবে আমাদের যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকে তিন সেমিস্টার চলমান রয়েছে তারা এতে সমন্বয় করতে অসুবিধায় পড়বে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তাদের আরও সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

ইউজিসির এমন সিদ্ধান্তে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কমবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. এম এম শহিদুল হাসান বলেন, যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আসন সংখ্যা নির্ধারণ করা থাকে, আপনি কোন সেমিস্টারে কতজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি নিতে পারবেন; তার সংখ্যা না বাড়ানো হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় কমার পাশাপাশি শিক্ষার্থী সংখ্যাও কমবে। এছাড়াও, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারের কাছ থেকে টাকা পায় যাতে তাদের শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে কোন সমস্যা হয়না; কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী না থাকলে তাদের আয় কমবে বা বন্ধ হয়ে যাবে; যা অদূর ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হিসেবে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

আর ইউজিসির নতুন চিঠির বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির (এপিইউবি) কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি ও ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইউজিসির হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের পেছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে। তিনি বলেন, ইউজিসি দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমিতি, শিক্ষক, কর্মকর্তা কিংবা শিক্ষার্থী কারও সাথে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে; যা উচিৎ হয়নি। 

আরও পড়ুন: কিউএস এশিয়ান ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং: র‍্যাংকিংয়ে ভারত-পাকিস্তানের ধারেকাছেও নেই বাংলাদেশ

ইউজিসির নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর শিক্ষার্থী ভর্তি, আয় কমে যাওয়াসহ নানা ধরণের প্রভাব পড়বে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আজও একটি চিঠি দিয়েছি। আমরা চাই ইউজিসি আমাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তাদের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিৎ এবং আমি আশা করবো এ বিষয়ে ইউজিসির শুভবুদ্ধির উদয় হবে। শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও তিন সেমিস্টার রাখার পক্ষে রয়েছেন-যুক্ত করেন শেখ কবির হোসেন।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখের স্বাক্ষরিত ওই চিঠির বিষয়ে তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম, পাঠ পরিকল্পনা, কোর্স—এর সবই কমিশন অনুমোদিত হতে হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হবে ডুয়াল কিংবা বাই-সেমিস্টারে। বর্তমানে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

মো. ওমর ফারুখ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাই-সেমিস্টারে চলবে আউটকাম বেজড কারিকুলাম (ওবিই) অনুযায়ী। সর্বোপরি এ পদ্ধতির অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে; এরই মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের কার্যক্রম বাই-সেমিস্টারে পরিচালনা করছে। তবে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাই-সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সব প্রোগ্রাম বাই-সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিচালনায় ইউজিসির বাধ্যবাধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমরা চাই দেশের উচ্চশিক্ষাকে একটি ধারায় নিয়ে আসতে কাজ করছি। সেজন্য দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাই সেমিস্টার চালুর জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে আগামী জানুয়ারি থেকে দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাই সেমিস্টার চালু করতে বলা হয়েছে।

আরও পড়ুন: তরুণদের হতাশার বৃত্ত ভাঙ্গবে কী?

এ নির্দেশনা অমান্য করা হলে কমিশনের সিদ্ধান্ত কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আমাদের নির্দেশনা অমান্য করে কোন কোর্স পরিচালনা বা শিক্ষার্থী ভর্তি করলে তা অবৈধ হবে এবং এ বিষয়ে কমিশন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোন অনাপত্তি থাকলে তা গ্রহণ করা হবে। তবে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আপাতত নতুন করে আর সময় বাড়ানো হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

সিদ্ধান্ত মানবে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি
ইউজিসির এই সিদ্ধান্ত মানবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। সংগঠনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টিলগ্ন থেকে ৩ সেমিস্টারে চলে আসছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও চলছে। হঠাৎ করে ইউজিসি আগামী বছর থেকে বাই সেমিস্টারের এমন নির্দেশনা দিয়েছে। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। তাই আপাতত এই সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীতে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

শেখ কবির হোসেন বলেন, আমরা মনে করি যদি বাই সেমিস্টার ভালো হয় তবে তা আমরা অবশ্যই নেব। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবর্তন মেনে নেওয়া যাবে না। একচেটিয়া একটি চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে ইউজিসি। এতে শিক্ষার্থীদের খরচ বাড়বে।

আরও পড়ুন: আইসিপিসি ওয়ার্ল্ড ফাইনালস ঢাকা: বাংলাদেশের প্রত্যাশা-প্রাপ্তির মেলবন্ধন কতদূর?

তিনি বলেন, দেশে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। করোনার সময় এই সেক্টরে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটতে শুরু করেছে। এমন সময় এমন হস্তক্ষেপ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্তিত্ব সংকটে ফেলবে। এই সময়ে এটা টেনে আনা স্যাবোটাজের মতো।


সর্বশেষ সংবাদ