ময়মনসিংহের ১১ আসনের ৯ টিতেই বিএনপির ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী, জামায়াতের একটিতে

বিএনপি ও জামায়াতের লোগো
বিএনপি ও জামায়াতের লোগো  © টিডিসি সম্পাদিত

ময়মনসিংহ জেলায় ১১টি সংসদীয় আসন। একটি সিটি করপোরেশন, ১৩টি উপজেলা, ১০টি পৌরসভা, ১৪টি থানা, ১৪৫টি ইউনিয়ন এবং একটি ক্যান্টনমেন্ট নিয়ে গঠিত এই আসনগুলো। মোট ভোটার ৪৭ লাখ ১৩ হাজার ৬২২ জন। অতীতে এ আসনগুলোতে অধিকাংশ সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয় পেয়েছেন। তবে এবার ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকলেও জয়ের ব্যাপারে বিএনপিকে পড়তে হবে চ্যালেঞ্জের মুখে। দলীয় কোন্দলে ৯টি আসনেই ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে বিএনপি নেতারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

ময়মনসিংহ-১ 
হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১ সংসদীয় আসন। এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও দলের দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এখানে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সদস্য সালমান ওমর রুবেল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘দুই উপজেলার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিগত সময়েও তাদের পাশে ছিলাম, এখনো আছি। মানুষ আমাকে মন থেকে ভালোবাসে, তাই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

এছাড়াও আরেক ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ। এই আসনে জামায়াতের ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান মুক্তাও মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

ময়মনসিংহ-২
ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন ময়মনসিংহ-২। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তারাকান্দা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহ শহীদ সারোয়ার।

ময়মনসিংহ-৩
গৌরীপুর উপজেলা নিয়ে ময়মনসিংহ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরন। তবে শেষ পর্যন্ত দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসাইন বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান।

এরপর থেকে পুরো উপজেলায় ব্যাপক বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অবরোধ করে হিরনের অনুসারীরা। সংঘর্ষের ঘটনার পর সেদিন রাতেই হিরনসহ ৫ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে আহম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গৌরীপুরে উপজেলা শাখার আমির মাওলানা বদরুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।

ময়মনসিংহ-৪
ময়মনসিংহ মহানগর এবং সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৪ আসনে ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ৫০ হাজার ২৮৪ জন। এই আসনটি জেলার রাজনীতিতে খুবই গুরুত্ব বহন করে। ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ’র নাম প্রাথমিকভাবে তালিকায় থাকলেও পরবর্তীতে তা স্থগিত করে দলের নীতিনির্ধারকরা।

তারপরও আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার এবং ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের পক্ষে এ আসনটিতে মিছিল-সমাবেশ করছে সর্মথকরা। এই আসনে দাঁড়ি—পাল্লার প্রার্থী মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ময়মনসিংহ-৫
মুক্তাগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী একে এম মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই জাকির হোসেন বাবলু। তিনি নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ প্রার্থী হওয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস রয়েছে।

ময়মনসিংহ-৬
কৃষিনির্ভর ফুলবাড়ীয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুক।
 
তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের স্ত্রী আখতার সুলতানা এবং তাদের ছেলে তানভীর আহম্মেদ রানা। এছাড়াও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল করিম।

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির কামরুল হাসান মিলন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়াও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক জসিম উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

ময়মনসিংহ-৭ 
ময়মনসিংহ-৭ আসনটি ত্রিশাল উপজেলা নিয়ে গঠিত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন মনোনয়ন পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিদ্রোহী হিসেবে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেকের ছেলে মুহাম্মদ আনোয়ার সাদাত মনোনয়ন দাখিল করেছেন।

জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আসাদুজ্জামান সোহেল।

ময়মনসিংহ-৮
ময়মনসিংহ-৮ ঈশ্বরগঞ্জ আসনে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক প্রকৌশলী লুৎফুল্লাহেল মাজেদ বাবু। এদিকে গত শনিবার দল থেকে পদত্যাগ করে সাবেক এমপি শাহ নূরুল কবীর শাহীন স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে উপজেলা জামায়াতের আমির মঞ্জুরুল হক হাসান এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

ময়মনসিংহ-৯ 
নান্দাইল উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৯ আসন। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা খান চৌধুরী। এছাড়াও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মামুন বিন আব্দুল মান্নানও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ময়মনসিংহ-১০
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু। তাকে ঠেকাতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান এবং পাগলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আল-ফাতাহ মো. আব্দুল হান্নান খান।

ময়মনসিংহ-১১
শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত ভালুকা উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-১১ আসন। উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ফখরুদ্দিন আহম্মেদ বাচ্চু দলীয় মনোনয়ন দাখিল করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ মুর্শেদ আলম।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!