‘পোস্টার নিষিদ্ধ করার আইনটি সৎ ও আইনমান্যকারী প্রার্থীদের দমিয়ে রাখার ডিজাইন’

তাসনিম জারা
তাসনিম জারা  © সংগৃহীত

পোস্টার নিষিদ্ধ করার আইনটি সৎ ও আইনমান্যকারী প্রার্থীদের দমিয়ে রাখার ডিজাইন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।  আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ফেসবুক পোস্টে জারা বলেন, ‘নির্বাচনী পোস্টার নিয়ে আমার ছোটবেলার একটা স্মৃতি আছে। আমি বড় হয়েছি খিলগাঁওয়ে, আমার দাদার বাড়িতে। আমরা ছিলাম আর দশটা খিলগাঁওবাসীর মতোই মধ্যবিত্ত পরিবার। তখন আমার বয়স পাঁচ কি ছয়। বাড়ির বাইরের দেয়ালটা বহুদিন ধরে রং করা হয় না। মধ‍্যবিত্ত পরিবারে চাইলেও নিয়মিত বাড়ির যত্ন নেওয়ার সামর্থ্য থাকে না। 

একবার টাকা জমিয়ে বাবা দেয়ালটা রং করালেন। মিস্ত্রিরা যখন কাজ শেষ করল, ঝকঝকে সাদা দেয়ালটা দেখে মনে হলো যে আমাদের পুরনো বাড়িটা নতুন হয়ে গেছে। একটা সাধারণ সাদা দেয়াল যে একটা শিশুর মনে কতটা আনন্দ দিতে পারে, তা বলে বোঝানো মুশকিল। কিন্তু সেই আনন্দ দুদিনও টেকেনি। স্কুল থেকে ফিরে বাসার সামনে নামতেই দেখি, সাদা দেয়াল জুড়ে দুইজন রাজনীতিবিদের পোস্টার। তারা হাস্যোজ্জ্বল মুখে আমাকে সালাম জানাচ্ছেন, আর আমাদের শখের সাদা দেয়ালটা তাদের পোস্টারের নিচে ঢাকা পড়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, "ওরা কি লাগানোর আগে তোমার অনুমতি নিয়েছিল?" বাবা অসহায়ভাবে মাথা নাড়ালেন। আমি বললাম, চলো পোস্টারগুলো তুলে ফেলি। বাবা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, "ছিঁড়িস না। ওরা যদি দেখে তুই পোস্টার ছিঁড়ছিস, তাহলে ঝামেলা হতে পারে।

কিছুদিন পর ধুলা, বৃষ্টি, আর রোদে পোস্টারগুলো ময়লা হয়ে দেয়ালে ঝুলে রইল। নির্বাচনে হার-জিত হলো, কিন্তু কোনো ক্যান্ডিডেট বা তাদের লোকজন আর সেই দেয়াল পরিষ্কার করতে এলো না।’

তিনি আরও বলেন,  ‘ছোটবেলার এই অভিজ্ঞতা থেকে একটা জিনিস বুঝেছি। দেয়াল যারই হোক আর যত শখ করেই রং করা হোক, আমাদের রাজনীতিবিদরা মনে করেন সেই দেয়াল যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করার অধিকার তাদের আছে। তাই এবার যখন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিল যে "নির্বাচনে পোস্টার ব‍্যবহার নিষেধ", আমি সত্যি খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, অন্তত এবার আমাদের দেয়ালগুলো বাঁচবে, শহরটা পরিচ্ছন্ন থাকবে। 

জারা বলেন, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, আমার ধারণা ভুল ছিল। পোস্টার নিষিদ্ধ করার এই আইনটি মূলত সৎ এবং আইন মান্যকারী প্রার্থীদের দমিয়ে রাখার একটা ডিজাইন। নির্বাচন কমিশন এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে বড় দলগুলোকে অলিখিত ইশারা দিয়ে রাখা হয়েছে, তোমরা পোস্টার লাগাও, নিয়ম তোমাদের জন্য না। আজ ঢাকা-৯ এর রাস্তাগুলোতে তাকালে দেখবেন আইন ভেঙে যারা পোস্টার লাগিয়েছে, তাদের দাপট বেশি। আর আমরা যারা নির্বাচন কমিশনের আইন মেনে পোস্টার করি নি, তাদের উপস্থিতি নেই। তবে আইন মেনে, পোস্টার না টাঙিয়ে যে নির্বাচনী কার্যক্রম আমি পরিচালনা করছি, তাতে আমি খুশি। কারণ নিয়ম ভেঙ্গে, আনফেয়ার প্র্যাকটিস করে নির্বাচনে জিতলেও আমি নিজের কাছে হেরে যাব।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!