ভারত কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে বাধ্য? কী বলে দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি

শেখ হাসিনা
শেখ হাসিনা  © ফাইল ছবি

বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। রায় ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে—ভারতের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যর্পণ অনুরোধের ভবিষ্যৎ কী?

বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণ অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে দিল্লিকে নোট ভার্বাল পাঠিয়েছিল। ভারত মাত্র দুদিনের মধ্যে প্রাপ্তি স্বীকার করলেও এরপর থেকে তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে নীরব থাকে। এখন যেহেতু শেখ হাসিনা বাংলাদেশে দণ্ডিত অপরাধী হিসেবে ঘোষিত, তাই ভারতের ওপর অবস্থান ব্যাখ্যা করার চাপ আরও বাড়তে পারে।

পূর্বে ভারতীয় কর্মকর্তারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বলতেন—বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হচ্ছে ও আদালতপাড়ায় যেসব হামলা-হেনস্তার ঘটনা ঘটছে, তার প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠালে তিনি রাজনৈতিক নিপীড়নের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তাই প্রত্যর্পণের পক্ষে সেদিন দিল্লির অবস্থান ইতিবাচক হওয়া কঠিন ছিল।

এখন পরিস্থিতি আগের মতো নেই। শেখ হাসিনা শুধু অভিযুক্ত নন—তিনি এখন দণ্ডপ্রাপ্ত। ফলে ভারত এমন একজন দণ্ডিত বিদেশি নাগরিককে কেন আশ্রয় দিয়ে রেখেছে, তা ব্যাখ্যা করার চাপ অবশ্যই বাড়বে। তবে দিল্লির মৌলিক অবস্থান যে তেমন বদলাবে না—সেটি ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকেই ইঙ্গিত মেলে। মুখে ব্যাখ্যা দিতে হতে পারে, কিন্তু হস্তান্তর—তা খুবই অসম্ভাব্য।

বাংলাদেশ–ভারত প্রত্যর্পণ চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারা হলো ‘রাজনৈতিক প্রকৃতির’ অভিযোগ খারিজের সুযোগ। যদিও হত্যা, গুম, সন্ত্রাসবাদ, বোমা হামলার মতো গুরুতর অপরাধগুলোকে রাজনৈতিক বলা যায় না—এমন ব্যাখ্যাও চুক্তিতেই আছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আছে, তার অনেকগুলিই এই তালিকার মধ্যে পড়ে।

২০১৬ সালের সংশোধনী অনুযায়ী, বাংলাদেশ শুধু গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠালেই অনুরোধ বৈধ ধরা হবে—এটিও চুক্তিকে আরও সহজ করেছে। তবুও চুক্তির মধ্যে এমন কিছু বিধান রয়েছে, যা ব্যবহার করে ভারত খুব সহজেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। যেমন:

অনুরোধকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কি না—সেটি নিয়ে অনুরোধ-প্রাপক দেশের সন্দেহ থাকলে অনুরোধ নাকচ করার অধিকার আছে। অভিযোগ যদি সামরিক অপরাধের অন্তর্ভুক্ত হয়—সেটিও প্রত্যাখানের ভিত্তি হতে পারে। ভারত সহজেই বলতে পারে—বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিচার নিরপেক্ষ হয়নি বা ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নেই। এই যুক্তিই দিল্লির জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

ভারতকে এখন বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হলেও প্রকাশ্যে অবস্থান জানাতে হতে পারে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে—এমন সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। প্রত্যর্পণ চুক্তির যেসব ধারা ভারতকে ‘সন্দেহ’ দেখানোর সুযোগ দেয়, সেগুলোই ভবিষ্যতেও দিল্লির প্রধান ভরসা হয়ে থাকবে।


সর্বশেষ সংবাদ