ঝিনাইদহ-৪ আসন
বিএনপির মনোনয়ন বিতর্ক: তৃণমূলে ক্ষোভ, শীর্ষ পর্যায় মেলাচ্ছে সমীকরণ
- ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০৫ AM
ঝিনাইদহ-৪ (কালিগঞ্জ উপজেলা ও আংশিক সদর) আসন দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ আসন থেকে একাধিকবার দলটিরে মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ফলে কালিগঞ্জ রাজনৈতিকভাবে বিএনপির হৃদস্পন্দন হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এ আসনে এখনও কাউজে মনোনয়ন দেয়নি দলটি। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তবে শীর্ষ পর্যায়ে আসনটি নিয়ে বিএনপি জোট সমীকরণসহ নানান হিসেব মেলাচ্ছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
মনোনয়নের দৌড়ে তিন হেভিওয়েট নেতা
এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ে শীর্ষে আছেন তিনজন। তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হামিদুল ইসলাম হামিদ এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা সদস্য মুর্শিদা জামান বেল্টু। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি শহিদুজ্জামান বেল্টুর সহধর্মিণী।
ঝিনাইদহ-৪ কি ছাড়ছে বিএনপি?
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তবে ঝিনাইদহ-১, ঝিনাইদহ-২ ও ঝিনাইদহ-৪ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেনি। এতে জোরালো গুঞ্জন উঠেছে—ঝিনাইদহ-৪ হয়তো শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এ খবরে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, এ আসনে বিএনপির শক্তি তৈরি হয়েছে ত্যাগ, আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বাবরা গ্রামের বিএনপি নেতা আশরাফ হোসেন বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে হামলা-গ্রেপ্তার সহ্য করে আমরা দলকে আগলে রেখেছি। যদি আমাদেরই বঞ্চিত করা হয়, ভবিষ্যতে সংগঠন সংকটে পড়বে।’
তার ভাষ্য, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনায় সাইফুল ইসলাম ফিরোজ মনোনয়ন পেলে শুধু এই আসন নয়, পুরো জেলায় বিএনপি নতুন গতি পাবে।
আরও পড়ুন: তিন দাবি নিয়ে আজ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা
উপজেলা শহরের তরুণ কর্মী আরিফ বলেন, হামিদুল ইসলাম হামিদ ছাত্র রাজনীতি থেকে মাঠে আছেন। তাঁর মতো ত্যাগী নেতাকে মূল্যায়ন করলে দলে নতুন শক্তি যোগ হবে।
ছাত্রনেতা ইকরামুলের ভাষ্য, সমঝোতার রাজনীতি যদি মাঠের লোকদের বাদ দেয়, তবে ঝিনাইদহ-৪ শুধু হারানো আসন হবে না, এটি পুরো জেলার হতাশার প্রতীক হয়ে দাঁড়াবে।
প্রবীণ বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, এ আসনের রাজনীতিতে বহু পরিবার ঘর হারিয়েছে, মামলা খেয়েছে, জেল খেটেছে। কিন্তু দল ছাড়েনি। সে ত্যাগের মূল্য যদি দল না দেয়, তবে তা হবে নিজের ক্ষতি ডেকে আনা।
একই ধরনের কথা বলছেন ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুজ্জামান মনা। তিনি বলেন, ‘ঝিনাইদহ-৪ শুধু একটি আসনের প্রশ্ন নয়, এটি দলীয় অস্তিত্ব। তৃণমূলের সম্মান ও দীর্ঘ আন্দোলনের উত্তরাধিকার রক্ষার প্রশ্ন। এখন প্রয়োজন দ্রুত ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত।’