মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তারেক রহমানের কঠোর বার্তা, আশাহত নেতারা
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:২৭ PM , আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪২ PM
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে দফায় দফায় মতবিনিময় করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য নানা দিক বিবেচনায় প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পাশে থেকে সবাইকে কাজ করতে হবে। তা না হলে দেশ ও জাতির ক্ষতি হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আসন্ন নির্বাচনে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। যারা প্রকৃত বিএনপি কর্মী, তারা কখনো বিএনপিকে ভাঙতে দেবেন না।
তিনি আরও বলেন, প্রার্থী ঘোষণার পর প্রত্যেককে নিজ আসনে গিয়ে স্থানীয় সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। কারণ স্থানীয় সহকর্মীদের সাহায্য ছাড়া কোনো নির্বাচনী লড়াই সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: শাকসু বাস্তবায়নে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। আগেরদিনের মতোই এদিন এ অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের প্রবশাধিকার ছিল না। তাছাড়া, মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে কোনো কথা বলতে না পারায় চরম হতাশ ঢাকার বাইরে থেকে আগত মাঠের নেতারা।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ ও দফতরের দায়িত্বে নিয়োজিত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৪টায় বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দিয়ে এ মতবিনিময় শুরু হয়। ওই দুই বিভাগের পর হয় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় খুলনা ও সিলেট বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়। সবশেষে রাত ৮টায় শুরু হয় ঢাকা বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়।
এর আগে গতকাল রবিবার (২৬ অক্টোবর) থেকে ঢাকায় ডেকে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন তারেক রহমান। মতবিনিময়কালে তিনি একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে বঞ্চিতদের নানাভাবে মূল্যায়নের আশ্বাসও দেন। তবে কোন প্রার্থীকেই সবুজ সংকেত দেয়া হয়নি। দলের সিনিয়র নেতারা জানান, মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের দ্বন্দ্ব বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এবার আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি।
ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমাদের শত্রু অদৃশ্য, যাকে আমরা দেখতে পাই না। এতে প্রমাণ হয়েছে- দেশী এবং বিদেশী অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। এজন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: সিটি ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
আগের দিনের মতোই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নীরবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনেন। তাদের কোনো বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ ছিল না। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতবিনিময়ে কোনো ধরণের বক্তব্যের সুযোগ না থাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে এসব নেতারা আক্ষেপ করে বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সামনে নিয়মিততো আসা যায় না। এ ধরণের সুযোগ আমরা সচারাচার পাই না। তাই অনেক প্রত্যাশা ছিল, আজকে সুযোগ পেয়ে নিজ এলাকার সাংগঠনিক অবস্থা ও দলের অভ্যন্তরিন সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানাতে পারব। কিন্তু আমাদের কোনো ধরণের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়নি। তাই আমরা শুধু চুপ-চাপ ওনার কথা শুনে গেলাম।
মনোনয়ন প্রত্যাশী আরেক নেতা বলেন, তারেক রহমান যেহেতু দলের প্রধান তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তার সিদ্ধান্ত আমরা মেনে চলবো। যেহেতু মতবিনিময় সভায় আমাদের কথা বলার সুযোগ ছিল না সেজন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা চায় তার সঙ্গে কথা বলতে। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এবং সুবিধাভোগী ও পরিবারতন্ত্র থেকে দল যদি কাউকে মনোনয়ন দেয় সেটি হবে খুবই খারাপ বিষয়। নির্যাতিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা খুবই কষ্ট পাবে। কিন্তু আমাদের কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না।
সূত্র জানায়, শুরুতেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সূচনা বক্তব্য দেন। এসময় তিনি কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এটি দলের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। তবে আপনারা দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলবেন।
রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মিজানুর রহমান মিনু, মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন, অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা, সৈয়দ শাহীন শওকত, অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, অধ্যাপক কামাল হোসেন এবং আবু সাঈদ চাঁদ। এছাড়া নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: তারেক রহমানের মতবিনিময়ে চমক খুলনার মঞ্জু ও এডভোকেট ফজলুর
বরিশাল বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জহির উদ্দিন স্বপন (বরিশাল-১), রওনাকুল ইসলাম টিপু (বরিশাল-২), রাজীব আহসান (বরিশাল-৪), নজরুল ইসলাম খান (পিরোজপুর-১), গোলাম নবী আলমগীর (ভোলা-১), আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১), নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-২) এবং নাজিম উদ্দীন আলম (ভোলা-১)। এছাড়া পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও বৈঠকে অংশ নেন।
এদিকে বৈঠক ঘিরে গুলশান কার্যালয়ের বাইরে দুপুরের পর থেকেই বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগের কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেন। দলীয়ভাবে জনসমাগম তৈরি না করার বিষয়ে দলীয় নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পক্ষে নেতাকর্মীরা গুলশানে জড়ো হন।