পাঁচ লক্ষাধিক সদস্য সংগ্রহের টার্গেট যশোর জেলা বিএনপির

বিএনপি
বিএনপি   © সংগৃহীত

পাঁচ লক্ষাধিক প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়ার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে যশোর জেলা বিএনপি। প্রথম ধাপে দীর্ঘ ১৬ বছরের পরীক্ষিত পুরোনো সদস্যদের নির্ধারিত মাসিক চাঁদা পরিশোধের মাধ্যমে তাদের পদ নবায়ন হবে। নবায়নের কাজ শেষ হলেই দ্বিতীয় ধাপে শুরু হবে নতুন সদস্য সংগ্রহের অভিযান। সেখানে অগ্রাধিকার পাবে তরুণ প্রজন্ম। তবে এবারও দলীয় চাঁদা যাদের বকেয়া থাকবে, তারা আগামী দিনে দলীয় মনোনয়নের জন্য বিবেচিত হবেন না। দলটির একাধিক নেতা আলাপকালে জানিয়েছেন এসব কথা। নতুন ও নবায়নের জন্য মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০ টাকা। সদস্যপদ নবায়নের পর নেতা-কর্মীদের ডেটাবেজ তৈরি করা হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, সদস্যপদ নবায়ন একটি সাংগঠনিক কাজ। দীর্ঘ ১৬ বছর নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত ছিলেন। বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সদস্যপদ নবায়ন করা হবে। এতে নেতা-কর্মীরাও নতুনভাবে উজ্জীবিত হবে। আর নতুন সদস্যদের মধ্যে বৃহৎ অংশ থাকবে তরুণ প্রজন্ম বলে আমরা আশা করছি। কেননা বর্তমান তরুণ প্রজন্মের পছন্দের দল হলো বিএনপি। তারা দলটিকে ভালোবেসে প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করবেন।

দলীয় সূত্রমতে, পুরনোদের নবায়নের জন্য মাসিক ২০ টাকা চাঁদা নেয়া হবে। এ ছাড়া যারা নতুন সদস্য হবেন তাদেরকেও ২০ টাকা বা স্বেচ্ছায় যেকোনো পরিমাণ চাঁদা দিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করবেন। যারা দলের গণতন্ত্র মোতাবেক নির্ধারিত মাসিক চাঁদা পরিশোধ করবেন না, যাদের আগের বকেয়া থাকবে তাদের আগামী দিনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে না। দলীয়ভাবে এটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, সাড়ে সাত বছর পর আবারও সদস্যপদ নবায়নের কার্যক্রম শুরু করছে বিএনপি। ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১৭ সালে ‘প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ’র উদ্যোগ নেন দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১ জুলাই ১০ টাকার বিনিময়ে ফরমে স্বাক্ষর করে নিজের সদস্যপদ নবায়নের মধ্য দিয়ে এ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও তাঁদের সদস্যপদ নবায়ন করেন। জেলা থেকে তৃণমূলে পাঠানো হয় সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের ফরম। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নানা কারণে তা থমকে যায়। সেই সময়ে ৩ মাসে ১০ টাকা করে প্রায় ৭০ লাখ নতুন সদস্য ফরম বিক্রি হয়েছিল।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সদস্যপদ নবায়নের পরই শুরু হবে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজ। বিশেষ করে ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ৫ লাখেরও বেশি নতুন সদস্যের খোঁজে অভিযান শুরু করেছে জেলা বিএনপি। দলের গঠনতন্ত্রের ৫-এর ‘ক’ ধারায় বলা আছে, ১৮ বছর বা ততোধিক বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক বিএনপি দলের প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন। ২০ টাকার বিনিময়ে দলের সদস্য ফরম নিতে পারবেন। তবে নতুন সদস্য সংগ্রহে যাচাই-বাছাইয়ে কঠোরনীতি অবলম্বন করবে বিএনপি। কারণ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সবাই এখন বিএনপিতে যোগ দিতে চাইছেন। বিশেষ করে কোনো দলের পদধারী নেতা ও কর্মী বা তাদের সাথে বিগত সময়ে গা-ভাসিয়ে চলাচলকারীরা বিএনপিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না।

জেলা বিএনপি নেতাদের দাবি, দেশের অধিকাংশ মানুষ বিএনপিকে সমর্থন করেন। বিশেষ করে তরুণ শ্রেণির অনেকেরই রাজনীতিতে আসার আগ্রহ আছে। কিন্তু গত সাত-আট বছর নতুন কোনো সদস্য সংগ্রহ করেনি বিএনপি। আন্দোলন-সংগ্রামে আসা তৃণমূল পর্যায়ের অনেকেই জানেন না তারা বিএনপির কর্মী কি না। এ জন্য সদস্যপদ নবায়নের সঙ্গে নতুন করে দলের প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এবার সদস্যপদ নবায়নের পরই নেতা-কর্মীদের ছবিসহ নাম-পরিচয়, মোবাইল নম্বর, রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডসহ ডেটাবেজ আপডেট করা হবে। এর আগে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে বিএনপির একটি ডেটাবেজ গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করে দলটি। পরে ২০১৯ সালের অক্টোবরে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহের নামে ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয় বিএনপি।

যশোর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ভোটার বিবেচনা না করে যারা আগামী দিনে দেশ ও দলের নেতৃত্ব দেবে তাদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে সুযোগ করে দিতে হবে। সেই লক্ষ্যে দলে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির অভিযানের কাজটা বিএনপি নিয়মিত পরিচালনা করছে। আশা করছি বিএনপির সাথে নতুন করে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ যুক্ত হবেন। যাদের বেশিরভাগই থাকবে তরুণ। পরে সবার ডাটাবেজ তৈরি করা হবে।

বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরে জেলা বিএনপির কমিটি থাকবে ১৫১ সদস্যের। উপজেলা বিএনপি ১০১ সদস্য ও পৌরসভা বিএনপির থাকবে ১৫১ সদস্যের কমিটি। জেলা ৮টি উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা কমিটি রয়েছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, গত ১৬ আগস্ট উৎসবমুখর পরিবেশে যশোর সদর উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে বিএনপির সদস্য নবায়ন এবং নতুন সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা বিএনপি। ওই দিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম এবং দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পর্যায়ের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। আমাদের সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আশা করছি যশোর জেলায় মোট ৫ লক্ষাধিক মানুষ বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হবেন। যাদের বড় অংশই থাকবে তরুণ প্রজন্ম।


সর্বশেষ সংবাদ

X
APPLY
NOW!