বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে জামায়াতে যুক্ত হচ্ছেন ফয়জুল হক?

জামায়াতের আমিরের সাথে ড. ফয়জুল হক
জামায়াতের আমিরের সাথে ড. ফয়জুল হক  © টিডিসি সম্পাদিত

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচিত হয়েছে দলটি। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত দলটির বিভিন্ন সংগঠনের পাঁচজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকায় ইতিমধ্যে যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন নেতাকে আজীবন বহিষ্কার করেছে সংগঠনগুলো। কেউ কেউ আবার এ হত্যাকাণ্ডে মর্মাহত হয়ে নিজ থেকেই পদত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন মালয়েশিয়া বিএনপির সাবেক নেতা ও আলোচিত অ্যাক্টিভিস্ট ড. ফয়জুল হক।

আজ শনিবার (১২ জুলাই) নিজের ফেসবুক আইডিতে মালয়েশিয়া বিএনপির সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের দাবি করে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ফয়জুল হক। তার এই ঘোষণা নিজ জেলা ঝালকাঠিসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। তবে দল বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৯ জুন তাকে সব পদ থেকে বহিষ্কার করার কথা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন মালয়েশিয়া বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম রতন।

এদিকে, ফয়জুল হকের বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির নেতাকর্মীদের কেউ কেউ। তাদের দাবি, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে তার ছবি, জামায়াত নেতাদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর মুহূর্তসহ একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে।

আরও পড়ুন: এবার বিএনপি থেকে বহিষ্কার হলেন ড. ফয়জুল হক

এ বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘৩০ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করি। কিন্তু ফয়জুল হক যে বিএনপি করেন, তা জানতাম না। সবাই তাকে কায়েদ সাহেব হুজুরের নাতি হিসেবেই চেনে। হঠাৎ তার পদত্যাগের ঘোষণা শুনে আমরা বিস্মিত।’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি দলের কেউ হলে চিনতাম। তার কোনো রাজনৈতিক ভূমিকা আমরা দেখিনি। জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে তার সখ্যতা রয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি জেলা জামায়াতের শীর্ষ এক নেতার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে, ফয়জুল হক ঝালকাঠি-১ আসনের জন্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। তবে সাম্প্রতিক যেসব পোস্টার তিনি প্রকাশ করেছেন, সেখানে কোনো রাজনৈতিক দলের নাম, প্রতীক কিংবা শীর্ষ নেতাদের ছবি দেখা যায়নি।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী দাবি করেছেন, ফয়জুল হক মূলত জামায়াত থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং দলটির সর্বশেষ সমাবেশেও উপস্থিত ছিলেন। তবে বিএনপির কোনো বড় কর্মসূচিতে তার সক্রিয় উপস্থিতির তথ্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন: বিএনপির পদে থাকার প্রমাণ দিলেন ড. ফয়জুল হক

এ বিষয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপে ড. ফয়জুল হক বলেন, ‘২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত মালয়েশিয়া বিএনপির প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, আমি সহ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলাম। ওই তালিকায় ৪০ নম্বরে আমার নাম রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে করোনার সময় তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এলাকায় করোনা প্রতিরোধক সামগ্রী বিতরণের ছবিও তার কাছে রয়েছে।

ভবিষ্যতে জামায়াতে যোগ দেওয়া কিংবা তাদের প্রতীক ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। তবে এই মুহূর্তে জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো চিন্তা নেই। আমি এখন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছি। তবে ভবিষ্যৎ কী হবে, তা আমি নিজেও জানি না। কারণ এই পদত্যাগের সিদ্ধান্তটিও আমি গতকাল পর্যন্ত ভাবিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নৈতিকতার জায়গা থেকে যদি ভবিষ্যতে নতুন কোনো দলে যোগ দিই, তবে তা আদর্শের ভিত্তিতেই হবে। আমি আদর্শিক কোনো সংগঠনে যুক্ত হতে চাই।’


সর্বশেষ সংবাদ