জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর চলে যাওয়ার দুই বছর
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০৩:১১ PM , আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০৩:২৩ PM
জাতীয় অধ্যাপক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল)। ২০২০ সালের এই দিনে ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী যত বড় বড় অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে, প্রতিটির সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ১৯৪২ সালে সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি রাজধানীর সেন্ট গ্রেগরিজ স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তৎকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তথা এখনকার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৬৩ সালে তিনি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন।
২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বুয়েটে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর পর থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সাল থেকে আমৃত্যু তিনি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের (ইউএপি) উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।
মৃত্যুর পর বুয়েটের পুরকৌশল ভবনের নাম পরিবর্তন করে তার নামে নামকরণ করেছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এখন ভবনটির নামকরণ করা হয়েছে ‘ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী পুরকৌশল ভবন’।
একনজরে জামিলুর রেজা চৌধুরী
জন্ম: ১৫ নভেম্বর ১৯৪৩
মৃত্যু: ২৮ এপ্রিল ২০২০
জন্মস্থান: সিলেট
বাবা: আবিদ রেজা চৌধুরী
মা: হায়াতুন নেছা চৌধুরী
স্ত্রী: সেলিনা নওরোজ চৌধুরী
সন্তান: কারিশমা ফারহীন চৌধুরী ও কাশিফ রেজা চৌধুরী
শিক্ষাজীবন: ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে শুরু হয়েছিল শিক্ষাজীবন। ঢাকায় আসার পর তিনি শুরুতে নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছেন। পরে সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা (এসএসসি) দেন ১৯৫৭ সালে। ১৯৫৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট (এইচএসসি) পাস করেন। ১৯৬৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি) প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে পুরকৌশলে স্নাতক শেষ করেন। বৃত্তি নিয়ে ১৯৬৪ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনে অ্যাডভান্সড স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর করতে যান। ১৯৬৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৫ সালে তাঁকে কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ দেওয়া হয়।
পেশাজীবন: স্নাতক শেষ করার পরপরই প্রভাষক হিসেবে বুয়েটে যোগ দিয়েছিলেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। যুক্তরাজ্য থেকে স্নাতকোত্তর শেষে আবার তিনি বুয়েটে ফিরে আসেন। ১৯৭৬ সালে অধ্যাপক হন। দীর্ঘদিন তিনি বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। পরে এই বিভাগের ডিন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সময়ে ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এই ১০ বছর তিনি বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারের (বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি) পরিচালক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ছিলেন। ২০১০ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এছাড়া অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আর্থকোয়েক সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির মতো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।
গবেষণা ও প্রকাশনা: দেশি–বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে জামিলুর রেজা চৌধুরীর ৭০টির বেশি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। পিএইচডি গবেষণার সময় তিনি বহুতল ভবনের ‘শিয়ার ওয়াল’ বিশ্লেষণের একটি সহজ পদ্ধতি বের করেছিলেন, যা পরে কোল অ্যান্ড চৌধুরীস মেথড হিসেবে পরিচিতি পায়। দেশ–বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে এটি পাঠ্য। বহুতল ভবন, কম খরচে ভবন নির্মাণ, ভূমিকম্পরোধী ভবনের নকশা, ঘূর্ণিঝড়রোধী বাড়ি নির্মাণসহ নানা বিষয়ে তার গবেষণা আছে।
স্বীকৃতি: বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট স্বর্ণপদক, আছে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে পাওয়া সম্মানসূচক ডক্টর অব ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি। ২০১৭ সালে তিনি একুশে পদক পান। ২০১৮ সালে পান জাপান সরকারের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পদক-অর্ডার অব দ্য রাইজিং সান (গোল্ড রে ও নেক রিবন)।
উল্লেখযোগ্য কাজ: স্বাধীনতার পর এ দেশে যত বড় বড় ভৌত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটির সঙ্গেই জামিলুর রেজা চৌধুরী কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। যুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা সাবওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলেও ছিলেন তিনি।