শব্দের ভেতর গড়া শিল্পী: ‘কথাবন্ধু লগ্ন’র গল্প

আতিক মেসবাহ লগ্ন
আতিক মেসবাহ লগ্ন   © সংগৃহীত

ছেলেবেলায় মুখের আড়ষ্টতায় কথাই বলতে পারতেন না, তোতলাতেন। স্কুলে পড়ার সময় মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়াতে গিয়েই কপালে ঘাম জমে যেত। অথচ এখন, সেই ছেলেটিই কাজ করছেন জনপ্রিয় গেম ফ্রি ফায়ারের ডাবিং আর্টিস্ট হিসেবে। ‘তাতসুয়া’ চরিত্রে তাঁর ভয়েস এখন হাজারো গেমারের কানে চেনা।

এই গল্পটি শুধুই একটি কিশোরের নয়; এটি শব্দের প্রেমে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা এক শিল্পীর যাত্রা। বলছিলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিক মেসবাহ লগ্নর কথা। রেডিও শ্রোতাদের কাছে তিনি ‘কথাবন্ধু লগ্ন’। মধ্যরাতের নির্জনতায় যখন শহর নিঃশব্দ হয়ে আসে, তখনই ঢাকার কোনো এক রেডিও স্টেশনে তাঁর কণ্ঠে ভেসে ওঠে গান, কবিতা, গল্প আর জীবনজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র মানুষের স্বপ্ন।

রেডিওর প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্ম নেয় খুব ছোটবেলায়। বাড়ির পুরোনো হ্যান্ডেল ঘোরানো রেডিওর ভেতর যেন তিনি নিজের ভবিষ্যতের আওয়াজ শুনতেন। শব্দ, আবৃত্তি আর সাহিত্যের সঙ্গে জড়িয়ে গড়ে উঠতে থাকে তাঁর স্বপ্নভবন। তখন তিনি জানতেন না, এ ভালোবাসাই একদিন তাঁকে নিয়ে যাবে মাইক্রোফোনের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে।

জানা গেছে, লগ্ন পড়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। একদিকে পাঠ্যসাহিত্য, অন্যদিকে কণ্ঠসাহিত্য—এই দুইয়ের মিলনেই তিনি তৈরি করেছেন তার স্বকীয়তা। রাতের রেডিও অনুষ্ঠান ‘বুক পকেট’, ‘অজানা মলাট’, ‘ক্যাফেইনেটেড উইথ লগ্ন’এর মাধ্যমে হাজারো মানুষকে শোনান তাঁদের নিজের কথা—তার চোখে দেখা, হৃদয়ে গাঁথা। দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি সংসদের সভাপতি হিসেবেও। নিজ উদ্যোগেই সংকলন করেছেন প্রায় অর্ধশত আবৃত্তি প্রযোজনা। তরুণদের মাঝে শুদ্ধপাঠ ও বাচিক দক্ষতা উন্নয়নে সংগঠন থেকে নিয়েছেন বহুমুখী উদ্যোগ।

শুধু রেডিও কিংবা ডাবিং আর্টিস্ট নয়, লগ্ন কাজ করছেন দেশের জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক গণমাধ্যম ডিবিসি নিউজ-এও। পাশাপাশি দেদারসে করেন লেখালেখি। অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এ প্রকাশিত হয়েছে লগ্নের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মেঘবদল’। গল্প বলার তাড়না থেকেই নিজের বহুমাত্রিকতার কথা জানান লগ্ন। বললেন, ‘গল্প বলতে ভালোবাসি। ছান্দসিক উচ্চারণ বা শব্দগাঁথা—কোনোটাতেই আপত্তি নেই। আমার শব্দে অন্যরা মুগ্ধ হলে প্রশান্তি।’

লগ্নের শুরুটা ছিল একটি কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে। সেখানে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও প্রযোজনা করতেন। এরপর ঢাকায় এসে টেসল রেডিও, দৈনিক বাংলাদেশের খবরের মতো অসংখ্য প্রতিষ্ঠান লগ্নের স্বপ্নকে তাড়িত করেছে। যুক্ত হয়েছেন দেশের জনপ্রিয় রেডিও স্টেশন রেডিও ধ্বনি ৯১.২ এফএম এর সঙ্গে। এরপরই অডিশন দেন ভয়েসওভার ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস ফ্যাক্টরি বাংলাদেশ’-এ। নির্বাচিত হন ‘তাতসুয়া’ চরিত্রে।

নিজের এ যাত্রা সম্পর্কে লগ্নের স্বীকারোক্তি— ‘শিল্পের সাথে থাকতে চাই। বন্ধু-স্বজনদের শব্দে বুননে আগলে রাখলেই বোধহয় আত্মতৃপ্তি। আমার অনুপ্রেরণায় আবৃত্তি সংসদ থেকেও অনেকেই এই কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছেন, অনেকেই সফলতার দ্বারপ্রান্তে। এটাও আমাকে প্রশান্তি দেয়।’


সর্বশেষ সংবাদ