রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন আহমদ
- টিডিসি রিপোর্ট:
- প্রকাশ: ১২ জুন ২০১৮, ০৬:২১ PM , আপডেট: ১৩ জুন ২০১৮, ০২:৫৩ PM
অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। দেশের একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ এবং একাডেমিক ব্যক্তিত্ব। এমাজউদ্দীন আহমদ একজন প্রখ্যাত গবেষক-পর্যালোচক। মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ১৯৫২ এর পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এমাজউদ্দিন আহমদ ১৯৯২ সালে একুশে পদক লাভ করেন। বর্নঢ্য এ দীর্ঘজীবনে দেশে-বিদেশে পেয়েছেন আরো অসংখ্য স্বীকৃতি, সম্মাননা ও পুরষ্কার।
জন্ম : প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমদ ১৯৩২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন মালদাহ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ভারতের কিছু অংশ) জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের ‘গোহাল বাড়ি’ এলাকায় পরিবারসহ দীর্ঘদিন বসবাস করেন প্রফেসর এমাজউদ্দিন। তিনি শিবগঞ্জের আদিনা সরকারি ফজলুল হক কলেজ ও রাজশাহী কলেজের প্রাক্তণ ছাত্র।
সাংগঠনিক তৎপরতা : মহান ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে, ১৯৫২ এর পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ছাত্রনেতা হিসেবে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ কারাবরণও করেন। যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রিক নব্বই দশকের সর্বাপেক্ষা ‘প্রশংসিত বাঙালি ব্যক্তিত’ ছিলেন।
কর্ম জীবন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং উপাচার্য [নভেম্বর ১,১৯৯২-আগস্ট ৩১,১৯৯৬] হিসেবে দীর্ঘদিন সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রকাশনা : দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে তুলনামূলক রাজনীতি, প্রশাসন-ব্যবস্থা, বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, দক্ষিণ এশিয়ার সামরিক বাহিনী সম্পর্কে গবেষণা করে চলেছেন। এসব ক্ষেত্রে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও প্রখ্যাত। তাঁর লিখিত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। দেশ বিদেশের খ্যাতনামা জার্নালে তাঁর প্রকাশিত গবেষণামূলক প্রবন্ধের সংখ্যা শতাধিক।
তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের কথা(১৯৬৬), মধ্যযুগের রাষ্ট্র চিন্তা (১৯৪৫), তুলানামূলক রাজনীতি: রাজনৈতিক বিশ্লেষণ (১৯৮২), বাংলাদেশে গণতন্ত্র সংকট (১৯৯২), সমাজ ও রাজনীতি (১৯৯৩), গণতন্ত্রের ভবিষৎ ( ১৯৯৪), শান্তি চুক্তি ও অন্যান্য প্রবন্ধ (১৯৯৮), আঞ্চলিক সহযোগিতা, জাতীয় নিরাপত্তা (১৯৯৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রবন্ধ (২০০০)।এছাড়াও ইংরেজিতে অনেক মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি।
সন্মাননা : শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান এবং সৃজনশীল লেখার জন্যে তিনি দেশ ও বিদেশে বিশেষভাবে সম্মানিত হয়েছেন। সৃষ্টিশীল গবেষণা ও আলেখ্য রচনার জন্য ‘মহাকাল কৃষ্টি চিন্তা সংঘ স্বর্ণপদক’, জাতীয় সাহিত্য সংসদ স্বর্ণপদক, জিয়া সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক অর্জন করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৯২ সালে একুশে পদক, মাইকেল মধুসুদন দত্ত গোল্ড মডেল, শেরে বাংলা স্মৃতি স্বর্ণপদক, ঢাকা সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ যুব ফ্রন্ট গোল্ড মেডেল, রাজশাহী বিভাগীয় উন্নয়ন ফোরাম স্বর্ণপদকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বহু পুরস্কার-সম্মাননা অর্জন করেন।
বই বিতর্ক : ২০০৯ সালের একুশে বইমেলাতে প্রকাশিত "মুক্তিযুদ্ধে নারী" নামের বইটি নিয়ে এমাজউদ্দিন আহমেদ বিতর্কিত হয়ে পড়েন। বইটির লেখক হিসাবে মেহেদী হাসান পলাশের নাম থাকলেও সম্পাদক হিসাবে এমাজউদ্দিন আহমেদ ও জসীমউদ্দিন আহমদের নাম প্রকাশ পায়। ডেইলি স্টার পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে বইটি ২০০৬ সালে ইন্সটিটিউট অফ এনভায়রমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত এবং রোকেয়া কবীর ও মুজিব মেহেদী রচিত "মুক্তিযুদ্ধ ও নারী" বইয়ের হুবুহু নকল। এমাজউদ্দিন আহমেদ ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, বইটি যে নকল, তা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না।