৩০০ বছর ধরে জ্ঞানচর্চায় যে মাদ্রাসা ভূমিকা রাখছে

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ছবি

শাহ আব্দুর রহিম (রা.) এর নাম অনুসারে মাদ্রাসায়ে রাহিমিয়া ভারতে তিন শতাব্দী ধরে ইসলামী শিক্ষা বিস্তার করে আসছে। শাহ আব্দুর রহিম (রহ.) ছিলেন ‘ফাতাওয়াতে আলমগিরি’ এর প্রণয়ন কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এই মাদ্রাসাটি থেকেই ইংরেজবিরোধী যাবতীয় আন্দোলন পরিচালিত হতো।

সিপাহী বিদ্রোহের পর মাদ্রাসায়ে রহিমিয়াকে সব ইংরেজ বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র ধরা হত। মাদ্রাসাটির প্রতি ছিল ইংরেজদের প্রচন্ড রোষ।

হানাফি ফিকাহ অনুসারে এবং নকশবন্দি সুফি চিন্তাধারায় মাদ্রাসাটি পরিচালিত হলেও শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-কে ভারতের সব মতধারার আলেম-ওলামাদের পথপ্রদর্শক বলে ধরা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে মাদ্রাসাটির প্রভাব ছিল সর্বজনস্বীকৃত।

আরও পড়ুন:সান্ধ্যকালীনে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, দ্বিতীয়বার ভর্তিতে না কেন?

এই মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন সৈয়দ আহমদ শহীদ বালাকোটি (রহ.)। তিনি পাঁচ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে পডাশোনা করেন। বলা যেতে পারে, শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) যে আধ্যাত্মিক শিক্ষা শুরু করেন, তার প্রয়োগ শুরু করেন শাহ আব্দুল আজিজ। তাই দেখা যায়, প্রথম থেকেই এই মাদ্রাসাটির প্রতি ইংরেজদের রোষ ছিল। ধারণা করা হতো, এখান থেকে ইংরেজবিরোধী যাবতীয় আন্দোলন দানা বাঁধত।

১৮৫৭-এর মহাবিদ্রোহের পর দিল্লিতে অবস্থিত মাদ্রাসায়ে রহিমিয়াকে সব বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র ধরে নিয়ে ইংরেজরা রামজি দাসের কাছে বিক্রি করে দেয়। পরে সে প্রতিষ্ঠানটিকে গুদামঘর বানায়।

ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিল মাদ্রাসা রহিমিয়ার মতো মাদ্রাসাগুলো থেকে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক জ্ঞান নিয়ে ইংরেজবিরোধী যাবতীয় আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। কিন্তু তারা সাহস পায়নি মাদ্রাসায়ে রহিমিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিতে।

মহাবিদ্রোহের পর অনাথ ভারতীয়দের শেষ বাধাটুকুও হটে গেলে ইংরেজরা তাদের বিরোধিতার ন্যূনতম চিহ্নগুলো ধ্বংস করে দেয়। ইংরেজরা বুঝতে পেরেছিল মুসলিমরা যত দিন শক্তিশালী আছে, তাদের সিংহাসন নিষ্কণ্টক হবে না। দৈহিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বলে বলীয়ান করে তাদের মাদ্রাসাগুলো ও এর থেকে গড়া  আলেমরা।

তাই ইংরেজরা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর প্রথম যে কাজটিতে হাত দেয়, তা হলো আলেমদের নির্মূল করা এবং মাদরাসাগুলোকে নির্মূল করা।

১৮৫৭-এর ১০ মে উত্তর প্রদেশের শামলির থানা ভবন এলাকায় হাজি ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি (রহ.)-এর নেতৃত্বে রশিদ আহমেদ গাঙ্গোহি, কাশেম নানুতুবি, ইয়াকুব নানুতুবি ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি বিরোধী ভয়ংকর আন্দোলন গড়ে তোলেন, স্বাধীন এলাকা হিসেবে শামলিকে ঘোষণা করেন।

মহাবিদ্রোহের পর মাদ্রাসায়ে রাহিমিয়া এবং ছোটখাটো মাদরাসাগুলো ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর ও সংশ্লিষ্ট আলেমদের হত্যার ফলে ভারবর্ষের বুকে সামগ্রিক ইসলামচর্চা স্তব্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের টিকার শর্ত শিথিল

মাদ্রাসায়ে রহিমিয়া ভারতবর্ষের বুকে সংঘটিত উপায়ে কোরআন-হাদিস চর্চা শুরু করলেও এবং তার ফলাফল পাওয়া গেলেও ইংরেজ কর্তৃক ভারতীয় মুসলিমদের আধ্যাত্মিক চেতনা ধ্বংসের প্রয়াসের পর ১৮৬৩-তে প্রতিষ্ঠিত দেওবন্দ মাদরাসা আরো সুসংহত উপায়ে কোরআন-হাদিস, ফিকাহচর্চা শুরু করে।

শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও প্রায় দেড় শ বছরের বেশি সময় ধরে দেওবন্দ মাদ্রাসা তার লক্ষ্যে অটল। মানুষের স্বাধীন আচরণ, মুক্তি ও আল্লাহর জমিনে আল্লাহকে সার্বভৌম জেনে মানুষকে মুক্তির আস্বাদ দেওয়ার যে প্রচেষ্টা শেখ আহমদ সরহিন্দি (রহ.) আকবর ও জাহাঙ্গীরের দরবার থেকে শুরু করেছিলেন, সেই বাটন ধরে রেখেছে দেওবন্দ মাদ্রাসা।

তাই দেখা য়ায়, প্রাক্তন সোভিয়েত দখলদারত্বে থাকা কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান থেকে খোরাসান ও আফগান তালিবান সবাই মুক্তি ও স্বাধীনতার শিক্ষায় শিক্ষিত।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence