সান্ধ্যকালীনে আগ্রহী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, দ্বিতীয়বার ভর্তিতে না কেন?

ভর্তি পরীক্ষার্থী
ভর্তি পরীক্ষার্থী  © সংগৃহীত

দেশের বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু রয়েছে বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে কোর্সগুলো উপকারী। তবে অভিযোগ আছে আর্থিকভাবে লাভবান হতে সান্ধ্যকোর্স পরিচালনা করে শিক্ষকরা। সান্ধ্যকোর্সে শিক্ষকরা মনোযোগ বেশি দেয়ায় বঞ্চিত হন নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে রাষ্ট্রপতির আহ্বান ও ইউজিসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সান্ধ্যকোর্স চালু রাখলেও বন্ধ করে দিয়েছে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বাণিজ্যিক মনোভাব প্রকাশ করেছে।

বর্তমানে দেশে বেশ কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ বন্ধ রেখেছে।

আরও পড়ুন- বেরোবির চিঠিতে ‘রোকেয়া’ বানান ভুল

দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করার পেছনে তিনটি কারণের কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কারণগুলো হলো- প্রথম, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগের কারণে বিভাগ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আসন ফাঁকা থাকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। দেশের অর্থের অপচয় হয়। দ্বিতীয়, প্রথম বছরের পরীক্ষার্থী ও দ্বিতীয় বছরের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তৃতীয়, দ্বিতীয়বারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সুযোগ বেশি নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুযোগ বন্ধের পরপরই বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে।

করোনা মাহামারির কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ধারাবাহিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আবার আটোপাশের কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা শতভাগ পাশ করে। ফলে অন্য বছরের তুলনায় এবছর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে প্রতিযোগিতাও বেশি হয়। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি। শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ পুনরায় চালু করার জন্য।

আরও পড়ুন- ৬ বছর ধরে সমাবর্তনের অপেক্ষায় বাকৃবি শিক্ষার্থীরা

ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ২০২০ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী বোরহান শেখ বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ চাই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি টাকা দিয়ে সান্ধ্যকোর্স করাতে পারে তাহলে আমাদের সুযোগ দিতে অসুবিধা কোথায়?

চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী আনোয়ারুল হক বলেন, শিক্ষা তো বাণিজ্য হতে পারে না। এটা আমাদের অধিকার। অধিকার ফিরে পেতে চাই আমরা।

এদিকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের একজন নিয়মিত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি সেমিস্টারে বেতন বাবদ নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা। মাস্টার্স সম্পন্ন করতে তাদের দুটি সেমিস্টার পড়তে হয়। এর বাইরে পরিবহন ফি, হল ভাড়া, ইউনিয়ন ফি, পরীক্ষা ফি ও অন্যান্য খরচসহ দুই সেমিস্টারে একজন শিক্ষার্থীর খরচ হয় সাড়ে আট হাজার টাকা। তবে বিভাগভেদে এই খরচে কিছু্টা হেরফেরও হয়।

সান্ধ্যকোর্সের খরচ সম্পর্কে জানা গেছে, মাস্টার্স সমমান সান্ধ্যকোর্সের একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি সেমিস্টারে ভর্তি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া প্রতি সেমিস্টারে চারটি কোর্স পড়তে তার খরচ পড়ে ৪২ হাজার টাকা। এর বাইরেও ল্যাব ফি বাবদ দিতে হয় আরও পাঁচ হাজার টাকা। এ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুসঙ্গিক খরচ মিলিয়ে এক বছরে তিন সেমিস্টারে সান্ধ্যকোর্সের একজন শিক্ষার্থীর মোট খরচ হয় প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এ হিসাব অনুযায়ী দুই বছরের সান্ধ্যকোর্স সম্পন্ন করতে একজন শিক্ষার্থীকে মোট ২২টি কোর্স ও ৬টি সেমিস্টারে গুনতে হয় তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা। কোনো কোনো বিভাগে এই খরচ আরও বেশি। ফলে আর্থিক লাভের কথা বিবেচনা করে বেশির ভাগ শিক্ষকরা সান্ধ্যকোর্সের পক্ষেই মত দেন। 

আরও পড়ুন- গুচ্ছের ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি পাঁচ হাজার দুইশত আসন

এসব বিষয়ে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বাণিজ্যিক কোর্স চলা কিছুতেই উচিত নয়। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি মনে করে তারা দ্বিতীয় শিফট চালু করবে তবে একই মানের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একই ভর্তি ফি ও সমমানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তা চালু করতে পারে। একই ভাবে কারো উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পথ সংকুচিত করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence