গাজা পরিচালনার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি জনগণেরই; কাতারের প্রধানমন্ত্রী
- টিডিসি ওয়ার্ল্ড
- প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪৬ AM
কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান বিন জাসিম আল থানী বলেছেন,‘সবাই একমত যে যুদ্ধ থামাতে হবে, বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করতে হবে এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি গাজা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। এই তিনটি প্রধান ও কেন্দ্রীয় বিষয়। গাজা পরিচালনার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি সরাসরি জনগণের। গাজাবাসীকে কিভাবে নিরাপত্তা দেওয়া যায় সেটাই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার।‘ আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
আল জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শেখ মোহাম্মদ জানান, ‘গাজা যুদ্ধবিরতির যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, সেটি মধ্যস্থতাকারীদের মূল লক্ষ্য পূরণে সহায়ক; যেমন, ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করা বন্ধ করা। তাই এখনই সময় এই গতিকে কাজে লাগিয়ে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর। তিনি আরও জানান, 'পরিকল্পনাটি হামাসের আলোচক দলের কাছে হস্তান্তর করেছে দোহা এবং এর মূল বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে।
তিনি স্বীকার করেছেন, প্রস্তাব বাস্তবায়নে কিছু ‘বাস্তবিক ও প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জ’ রয়েছে, তবে সর্বাধিক জরুরি বিষয় হচ্ছে রক্তপাত বন্ধ করা, কার্যকর সমাধানে পৌচ্ছানো। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘মূল ফোকাস হলো, কীভাবে গাজার মানুষকে রক্ষা করা যায়।’
ট্রাম্পের দেওয়া এই ২০-দফার পরিকল্পনাটি সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, মিসর, তুরস্ক ও ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন আরব ও মুসলিম দেশের সমর্থন পেয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, একবার এটি চূড়ান্ত হলে গাজায় হামলা তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ হবে এবং ‘সম্পূর্ণ মানবিক সহায়তা’ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।
এদিকে সোমবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বৈঠকের সময়, এক যৌথ ফোন কলে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ কাছে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান নেতানিয়াহু। গত মাসে দোহায় হামাস নেতাদের ওপর এক নজিরবিহীন ইসরায়েলি হামলায় এক কাতারি নাগরিক নিহত হন, যা বিশ্বব্যাপী নিন্দিত হয়।
গাজা ইস্যুতে কাতারে মধ্যস্থতাকারী দলের বৈঠকে এখন তুরস্কও অংশ নিচ্ছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি জানান, ‘তুরস্ক এখন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।’
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এটি গৃহীত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা সকল ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং তার বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। হামাস নিজে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াবে ও নিজেদের নিরস্ত্র করবে, এবং সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে।
একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী অস্থায়ীভাবে নিরাপত্তা তদারক করবে এবং স্থানীয় ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেবে। একইসঙ্গে একটি ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসন পরিচালনা করবে।
তবে পরিকল্পনায় ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নির্দিষ্ট সময়সূচি উল্লেখ নেই। বরং বলা হয়েছে, ‘সঠিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত’ ইসরায়েল একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ ধরে রাখতে পারবে।
হামাস এখনো প্রস্তাবের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি, যদিও কাতার বলছে হামাস ‘দায়িত্বশীলভাবে’ প্রস্তাবটি বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেন, হামাসের হাতে ৩ থেকে ৪ দিন সময় রয়েছে। তিনি সতর্ক করেন, ‘যদি তারা স্বাক্ষর না করে, তবে তারা নরকে মূল্য চুকাবে।‘
আল জাজিরার ওয়াশিংটন প্রতিনিধি মাইক হ্যানা বলেন,‘এই পরিকল্পনা কোনো প্রস্তাব নয়, এটি একটি আলটিমেটাম।' কিছু বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, পরিকল্পনাটিতে ফিলিস্তিনিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বা স্বশাসনের পথ নেই। ফিলিস্তিনি আইনজীবী ও বিশ্লেষক ডায়ানা বুত্তু বলেন,‘চুক্তিটি পড়লে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি গ্যারান্টিও নেই।সব গ্যারান্টিই ইসরায়েলিদের জন্য।‘ ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের প্রোগ্রাম পরিচালক ফিলিস বেনিস বলেন, ‘সবকিছুই ইঙ্গিত করে যে, যদি ইসরায়েল যেকোনো সময় আবার যুদ্ধ শুরু করতে চায়, তবে তারা তা করতে পারবে।‘
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৬,০৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ১,৬৮,৫৩৬ জন আহত। সহায়তা বন্ধ থাকায় ৪৫৩ জন অপুষ্টিতে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।