যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে ফ্রান্সের আকাশসীমা এড়িয়ে গেলেন নেতানিয়াহু
- টিডিসি ওয়ার্ল্ড
- প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৫ AM
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বহনকারী উড়োজাহাজ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে ফ্রান্স ও স্পেনের আকাশসীমা এড়িয়ে গেছে। ফ্লাইট ট্র্যাকার থেকে দেখা গেছে, উড়োজাহাজটি গ্রীস ও ইতালির আকাশসীমা দিয়ে উড়ে নিউইয়র্কের পথে গেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে এই সফরে যান নেতানিয়াহু।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। একইসঙ্গে পরোয়ানা জারি করা হয় তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধেও। আইসিসির সদস্য দেশ হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত সব দেশ—যেমন ফ্রান্স, ইতালি ও গ্রিস—এই পরোয়ানা কার্যকর করতে আইনত বাধ্য। তবে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হাঙ্গেরি ইতোমধ্যে আইসিসি থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
পরোয়ানা জারির পর ইউরোপের আকাশপথ ব্যবহার নিয়ে বাড়তি সতর্কতা দেখা যাচ্ছে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে। আগে নেতানিয়াহু ইউরোপের এই দেশগুলোর ওপর দিয়েই যাতায়াত করলেও, এবার প্রথমবারের মতো তিনি ফ্রান্সের আকাশসীমা এড়িয়ে গেছেন। জেরুজালেম পোস্টের বরাতে জানা গেছে, তাঁর ‘উইং অব জায়ন’ উড়োজাহাজটি পূর্বনির্ধারিত রুটের তুলনায় দীর্ঘপথে উড়েছে। কারণ ইউরোপের কোনো দেশ যদি আকাশসীমা ব্যবহারে বাধা দেয়, কিংবা জরুরি অবতরণের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে গ্রেপ্তারের ঝুঁকি থাকত।
ইসরায়েলের যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লিটার জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় নেতানিয়াহুর প্রতিটি বিদেশ সফরেই বাড়তি নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক হিসাব-নিকাশ রাখতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রোস্টেট অপসারণের অস্ত্রোপচারের পর নেতানিয়াহুর স্বাস্থ্যগত কারণে মাঝপথে যেকোনো সময় জরুরি অবতরণের প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে ইউরোপের কোনো দেশে অবতরণ করলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারত। তাই ফেব্রুয়ারির যুক্তরাষ্ট্র সফরেও তাঁর উড়োজাহাজ মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর দিয়েই উড়েছে।
তবে এর আগেও ফ্রান্স, ইতালি ও গ্রিস নেতানিয়াহুর ফ্লাইটকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তখন তারা বলেছিল, একজন বর্তমান সরকারপ্রধান হিসেবে নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক আইনে দায়মুক্তি পেতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক সফরে এই অনুমতি না থাকায় ফ্রান্স ও স্পেনের আকাশ এড়িয়ে চলেছে তাঁর উড়োজাহাজ।
নেতানিয়াহুর ফ্লাইটপথ ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, আইসিসির পরোয়ানাভুক্ত কোনো ব্যক্তিকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া ‘রোম সংবিধি’ লঙ্ঘনের শামিল। এই বিষয়ে গত এপ্রিলে ফ্রান্সের এক কূটনীতিক মিডল ইস্ট আইকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নেতানিয়াহুকে বহনকারী ফ্লাইটটিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল ফ্রান্সের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত হিসেবে এবং তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী নয় বলেই তারা মনে করে।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিরোধিতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ একাধিক পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ইউরোপের অনেক দেশই নেতানিয়াহুর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখছে, যার প্রভাব পড়ছে তাঁর কূটনৈতিক সফরের রুট ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার ওপর।