ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

মিসাইল
মিসাইল  © সংগৃহীত

ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পাল্টা হামলার প্রেক্ষাপটে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতা ও অস্ত্রভান্ডার নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। শুক্রবার (১৪ জুন) ভোরে ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ব্যাপক হামলা চালায়।

এর আগে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর ইরান ইসরায়েলের বড় শহরগুলোর দিকে অন্তত ১৮০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। পাল্টা জবাবে ২৫ অক্টোবর ইসরায়েল ইরানে প্রায় ২০টি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। তবে সর্বশেষ হামলাটি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এতে করে দুই দেশের সামরিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ সংঘাত কতটা বিস্তৃত হতে পারে, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের সক্রিয় সেনা রয়েছে ৬ লাখ ১০ হাজার এবং রিজার্ভ সদস্য রয়েছে ৩ লাখ ৫০ হাজার। ১৮ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক সেবায় অংশ নিতে হয়। ২০২৩ সালে ইরান সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ১০ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ০.৬ শতাংশ বেশি।

ইরানের সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার ৫১৩টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, ৬ হাজার ৭৯৮টি আর্টিলারি গান, ৬৪০টির বেশি সাঁজোয়া যান, ৫০টি সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার এবং আইআরজিসির ৫টি হেলিকপ্টার। বিমানবাহিনীর কাছে আছে ৩১২টি যুদ্ধ বিমান এবং আইআরজিসির রয়েছে ২৩টি। ইরানের নৌবাহিনীর আছে ১৭টি সাবমেরিন, ৬৮টি উপকূলীয় টহল ও যুদ্ধজাহাজ, ৭টি করভেট, ১২টি ল্যান্ডিং শিপ এবং ১৮টি সহায়ক জাহাজ।

ইরান সম্প্রতি ‘আজারাখশ’ নামের স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করেছে, যা ইনফ্রারেড, রাডার এবং ইলেকট্রো-অপটিক প্রযুক্তির মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়া, ইরানের কাছে অন্তত ১২ ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র নেই বলেই আন্তর্জাতিক মহলের বিশ্বাস, তবে তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক কর্মসূচি রয়েছে এবং একাধিক স্থাপনায় গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েলের সক্রিয় সেনা রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ এবং রিজার্ভ বাহিনীর সদস্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার। দেশটিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক হলেও কিছু ব্যতিক্রম আছে। ২০২৩ সালে ইসরায়েল সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ সালের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। গাজা যুদ্ধের পর এই ব্যয় দ্রুতগতিতে বেড়েছে।

ইসরায়েলের সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৪০০টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, ৫৩০টি আর্টিলারি গান, ১ হাজার ১৯০টির বেশি সাঁজোয়া যান, ৩৪৫টি যুদ্ধ বিমান, ৪৩টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৫টি সাবমেরিন এবং ৪৯টি উপকূলীয় যুদ্ধজাহাজ। তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মূল ভিত্তি আয়রন ডোম, যা রাডার ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সমন্বয়ে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত ও প্রতিহত করতে পারে।

ইসরায়েলের হাতে রয়েছে অন্তত চার ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যার মধ্যে LORA-এর পাল্লা ২৮০ কিলোমিটার এবং জেরিকো-৩-এর পাল্লা ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পারমাণবিক বোমা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

এমন প্রেক্ষাপটে দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সংঘাতের মাত্রা আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের আশঙ্কা।

(তথ্যসূত্র: বিবিসি, IISS, SIPRI, CSIS, Arms Control Association)


সর্বশেষ সংবাদ