ভারতে উৎপাদিত অ্যাপলে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ ট্রাম্পের
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে ৫০ শতাংশ
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ০৭:৩২ PM , আপডেট: ২৪ মে ২০২৫, ০২:১৮ PM
প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাপল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাণিজ্য হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার (২৩ মে) তিনি এ ঘোষণা দেন। যা বিশ্ব বাণিজ্যকে আবারও অস্থির করার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া আইফোন যদি যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হয়, তাহলে তার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৬০ মিলিয়নেরও বেশি ফোন বিক্রি হলেও দেশে কোনো স্মার্টফোন উৎপাদন হয় না।
তাছাড়া ১ জুন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপের সুপারিশ করেছেন ট্রাম্প। এই শুল্ক বিলাসবহুল সামগ্রী, ঔষধ এবং ইউরোপীয় প্রস্তুতকারকদের অন্যান্য পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।
ঘোষণার পর মার্কেট দ্রুত পতনের মুখে পড়েছে। S&P ৫০০ ও Eurostoxx 600 সূচক যথাক্রমে ১.৫% ও ২% কমেছে। অ্যাপলের শেয়ার প্রি-মার্কেটে ৩.৫% পতিত হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষক ফাওয়াদ রাজারাজাদা বলেন, “বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সবার আশা কয়েক মিনিটেই — এমনকি কয়েক সেকেন্ডেই ধ্বংস হয়ে গেছে।”
এপ্রিলের শুরুর দিকে ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব স্থানের ওপর শুল্ক আরোপ করলে মার্কেট অস্থির হয়। চীনের আমদানিতে প্রায় ১৪৫% কর আরোপ করা হয়েছিল, যার ফলে মার্কেট ব্যাপকভাবে পড়ে গিয়েছিল এবং ব্যবসায়িক ও ভোক্তা আত্মবিশ্বাস হ্রাস পায়।
এরপর হোয়াইট হাউস বেশিরভাগ শুল্ক স্থগিত রাখে, যেখানে অন্যান্য দেশের আমদানিতে ১০% কর বজায় রাখা হয়। তবে ট্রাম্প শুল্ক পুনরায় চালুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি। শুক্রবারের এই ঘোষণা সেই স্বস্তি শেষ করে।
ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “আমি অ্যাপলের টিম কুককে আগে থেকেই জানিয়েছি, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া আইফোনগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হতে হবে, ভারত বা অন্য কোথাও নয়। তা না হলে অ্যাপলকে অন্তত ২৫% শুল্ক দিতে হবে।”
হোয়াইট হাউস অনেক দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় নিয়োজিত, কিন্তু অগ্রগতি ধীর। সাতটি শিল্পায়িত দেশের অর্থমন্ত্রী কানাডার রকি মাউন্টেইনস ফোরামে শুল্ক বিতর্ক কমানোর চেষ্টা করেছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশন শুক্রবার ট্রাম্পের ১ জুন থেকে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক আরোপের সুপারিশ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করে এবং ইউরোপীয় বাণিজ্য প্রধান মারোস সেফকোভিচ ও তার মার্কিন সমকক্ষের সঙ্গে ফোন আলাপের অপেক্ষা করছে।
জার্মানির গাড়ি প্রস্তুতকারক এবং বিলাসবহুল পণ্যের কোম্পানিগুলোর শেয়ার এ খবরের প্রভাবে ৪% এর বেশি পড়ে গেছে। পোরশে, মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউসহ অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। সানগ্লাস প্রস্তুতকারী এসিলর লুক্সোটিকা ৫.৫% কমেছে।
অ্যাপলকে ব্যক্তিগতভাবে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা ট্রাম্পের আছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। অ্যাপল এখনও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এপ্রিলের শুরুর দিকে চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক ১০০% এর বেশি বাড়ানো হয়েছিল, তবে মার্কেট অস্থিরতার কারণে হোয়াইট হাউস কিছু শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল, বিশেষ করে স্মার্টফোন এবং কিছু ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ক্ষেত্রে, যা অ্যাপলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিয়েছিল।
অ্যাপল ২০২৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ আইফোন ভারতের কারখানায় তৈরি করার পরিকল্পনা দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে, যাতে চীনের উচ্চ শুল্ক থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। সূত্র জানিয়েছে, ট্রাম্পের চীন-বিরোধী শুল্কের কারণে অ্যাপল ভারতকে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করছে।
ট্রাম্প এবং বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লাটনিক অ্যাপলকে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে অ্যাপল জানিয়েছিল, তারা আগামী চার বছরে নয়টি মার্কিন রাজ্যে ৫০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, তবে স্পষ্ট করেনি এটি আইফোন উৎপাদন বাড়ানোর জন্য হবে কিনা।
অ্যাপল জানিয়েছে, জুন ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ স্মার্টফোন ভারতে তৈরি হবে।