বাশার আল-আসাদের পতনের লড়াইয়ের ‘মাস্টারমাইন্ড’ সম্পর্কে যা জানা গেল
- টিডিসি ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ PM , আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:১৪ PM
জনরোষ আর সশস্ত্র বিদ্রোহের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সিরিয়ার দীর্ঘ দুই যুগের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। দীর্ঘ ২৪ বছর শাসন করেও আজ রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া এইচটিএসের পক্ষ থেকে বলা হয়, জালিম শাসক বাশার আল-আসাদ দেশ থেকে পালিয়েছেন। তবে, কোথায় পালিয়ে গেছেন এখন পর্যন্ত এর কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
দেশ ছেড়ে পালানো বাশার আল-আসাদের টানা দুই যুগের সরকারের পতনের দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এইইচটিএস। সরকার পতনের পর এইচটিএসের প্রধান জোলানিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। জেলানিকে এই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এরই মধ্যে তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে।
১৯৮২ সালে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তার আসল নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। সৌদি আরবে জোলানির বাবা পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে সিরিয়ায় ফিরে আসলে দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে তাঁর পরিবার। সিরিয়ার দামেস্কে থাকাকালীন জেলানি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না।
তবে ২০০৩ সালে ইরাকে গিয়ে আল-কায়দায় যোগ দেন জোলানি। সে বছরই ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি সে সময় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ফলে দেশজুড়ে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা জোলানিকে গ্রেফতার করেন এবং ৫ বছর আটক থাকেন তিনি।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ শাসন আমলে ২০১১ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক সহিংসতার আশ্রয় নেয় বাশার। এর জের ধরেই একই বছরে সিরিয়ায় শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এ সময় জোলানি ছাড়া পান। এরপর তাঁর নেতৃত্বে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে, বিশেষত ইদলিবে শক্তিশালী হতে থাকে।
প্রথম দিকের কয়েক বছর জোলানি ইরাকের ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির সঙ্গে কাজ করেন। পরবর্তীতে এই সশস্ত্র গোষ্ঠী আইএসআইএল (আইএসআইএস) নাম ধারণ করে। এর কয়েক বছর পর ২০১৩ সালে আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন বাগদাদি। শুরু করেন সিরিয়ায় নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধির কাজ। একটা পর্যায়ে বেশ ভালোভাবে নিজেদের সঙ্গে আইএসআইএল আল-নুসরা ফ্রন্টকে একীভূত করে ফেলে। এরপরই জন্ম নেয় আইএসআইএলের।
এটি প্রত্যাখ্যান করে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখেন জেলানি। এ অবস্থায় ২০১৪ সালে আল-জাজিরাকে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেন জোলানি। এতে তিনি বলেছিলেন, তাঁর গোষ্ঠী ‘ইসলামিক আইনের’ যে ব্যাখ্যা দেবে, সিরিয়া সেই অনুযায়ী শাসিত হবে।
তবে কয়েক বছর পর জোলানির মধ্যে পরিবর্তন আসে। তিনি আল-কায়েদার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোয় ‘বিশ্বব্যাপী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার প্রকল্প থেকে সরে আসেন। এমন কিছুর পরিবর্তে সিরিয়া সীমান্তের ভেতরে নিজের গোষ্ঠীর তৎপরতা সীমাবদ্ধ করেন জোলানি।
জোলানির এ পরিবর্তনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে জোলানির গোষ্ঠীটি বহুজাতিক বা আন্তঃদেশীয় গোষ্ঠীর বদলে একটি জাতীয় গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেন বাশার সরকার। এই নিয়ন্ত্রণের ফলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। তখনো বিদ্রোহীদের দখলে সিরিয়ার এ অঞ্চল। এবছরই জোলানি প্রকাশ্যে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি আল-নুসরা বিলুপ্ত করে নতুন সংগঠন জাভাত ফাতেহ আল-শাম গঠন করেন।
এরপরের বছর ২০১৭ সালের শুরুর দিকে আলেপ্পো থেকে হাজার হাজার যোদ্ধা ইদলিবে পালিয়ে আসলে এসব গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন জোলানি।
বাশার আল-আসাদের স্বৈরাচারী শাসন থেকে সিরিয়াকে মুক্ত করাই ছিল এইচটিএসের ঘোষিত লক্ষ্য। এইচটিএস আজ এই লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা দিল। সংগঠনটির অন্য লক্ষ্যের মধ্যে আছে—সিরিয়ায় ‘ইরানের সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে বিতাড়িত করা’এবং ‘ইসলামি আইনের’ ব্যাখ্যা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সবচেয়ে কার্যকর’ ভূমিকা পালন করেছে এইচটিএস ও এর প্রধান জোলানি।