তুরস্কে সহায়তা পাঠাবে উত্তর সিটি কর্পোরেশন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৩ PM , আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৩ PM
ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত তুরস্কে মানবিক সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গুলশানে ডিএনসিসির প্রধান কার্যালয় নগরভবনে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পরিষদের ২০তম কর্পোরেশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন কর্পোরেশনের সভার শুরুতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের জন্য ডিএনসিসি মেয়র মানবিক সহায়তার বিষয়টি উল্লেখ করা হলে উপস্থিত সব কাউন্সিলরা এতে সমর্থন জানান এবং কাউন্সিলররা নিজেদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকেও সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস জানান।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, তুরস্ক মানবিক সহায়তা চেয়েছে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কে মানুষের খাবারের ও ওষুধের অভাব। তীব্র শীতে সেখানে শীতের পোশাক খুব প্রয়োজন। এই কঠিন সময়ে তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য আমরা ডিএনসিসি থেকে মানবিক সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াবো। আমরা শীতের কাপড়, খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ পাঠাব। এছাড়াও কাউন্সিলরদের তাদের ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহায়তার আহ্বান করছি। ডিএনসিসি থেকে দ্রুতই ঢাকার টার্কিশ কো–অপারেশন অ্যান্ড কো–অর্ডিনেশন এজেন্সি-টিকা অফিসে পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
মেয়র বলেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য ও তার নামে একটি পার্ক রয়েছে। আবার তুরস্কের জাতির পিতা কামাল আতাতুর্কের নামে ঢাকার বনানীতে একটি সড়ক রয়েছে। এছাড়াও বনানীর সড়কটির সংলগ্ন একটি পার্কও কামাল আতাতুর্কের নামে নামকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনেক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তুরস্কের এই কঠিন সময়ে তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের মানবিক দায়িত্ব।
সভায় ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকের সঞ্চালনায় আরও ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জোবায়দুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহা. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসের ঘটনায় তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী ঐ এলাকায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৯ হাজার ১১৭ জন মানুষের। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তুরস্কে মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৬১৭ জনের। একই ঘটনায় সিরিয়ায় এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৫০০ জনের।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গাজিয়ানতেপের কাছে এ ভূমিকম্প হয়। কম্পন অনুভূত হয়েছে প্রতিবেশী সিরিয়া, লেবানন ও সাইপ্রাসেও।
এএফএডির কর্মকর্তা ওরহান তাতার জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ৫৭৭৫টি ভবন ধ্বংস হয়েছে, এ পর্যন্ত ২৮৫টি পরাঘাত হয়েছে এবং সব-মিলিয়ে ৪০ হাজান জন আহত হয়েছেন।
আর তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত মোতায়েন করা হয়েছে ১৩৭৪০ জন উদ্ধারকর্মী এবং ৪১ হাজারেরও বেশি তাঁবু, এক লাখ বিছানা ও তিন লাখ কম্বল পাঠানো হয়েছে দুর্গত এলাকাগুলোতে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) বলছে, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি শুরু হয়ে প্রায় এক মিনিট স্থায়ী হয়। এর উৎপত্তি গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে।
অন্যদিকে জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্স (জিএফজেড) বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কাহরামানমারাসের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার (৬ মাইল) গভীরে। সুনামির সম্ভাবনা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে বলে ইএমএসসি মনিটরিং সার্ভিস জানিয়েছে।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। সংস্থার কর্মকর্তাদের অনুমান, নিহতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে। এই ভূমিকম্পে মোট দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। বিভিন্ন দেশকে দ্রুত দুর্যোগ অঞ্চলে সাহায্য পাঠানোর আহ্বানও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়েছে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা ও দেশটির অন্যান্য শহরের পাশাপাশি পুরো অঞ্চল-জুড়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলেছে, স্থানীয় বাসিন্দারা প্রচণ্ড শীতের মধ্যে তুষারে ঢাকা রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হয়েছেন ভূমিকম্পের তীব্রতায়। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে আর এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপে বহু মানুষ আটকা পড়েছে বলেও খবর আসছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোইলু জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হতাই, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাটিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস-এই ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ভূমিকম্পে আলেপ্পো প্রদেশে বহু ভবন ধসে পড়েছে। আর দেশটির হামা প্রদেশের বেসামরিক পরিষেবার একটি সূত্র রয়টার্সকে বলছে, সেখানেও বেশকিছু ভবন ধসে পড়েছে।