দরখাস্ত করে পাওয়া পুরস্কার আমার দরকার নেই

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি

আমি একজন ছোট মানুষ। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে ইমেইল পেয়েছিলাম যে শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন বোর্ডে সদস্য করার জন্য আমার কয়েকজনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে তাই মন্ত্রণালয়ে নাকি আমার ঠিকানা, মোবাইল নম্বর এবং এনআইডির ফটোকপি পাঠাতে হবে। আমি পাঠাইনি।

তার বেশ কদিন পর একদিন ফোন আসলো। আমি দেইনি এবং দেব না বলে দিয়েছি। যেখানে আমার নিজেকেই আমার ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিতে হয় তার অর্থ আমার নাম ঠিকানাই তারা জানেনা বা না জানার ভান করে। আমার নাম ঠিকানাতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবপেজেই আছে। ওইটুকু তথ্য পাঠালেই চলে।

আরও পড়ুন: শিক্ষাব্যবস্থার একটি মডেল প্রস্তাব

আমাকে কেন দিতে হবে? আর এই কাজে এনআইডি নম্বর কার্ডের ফটো কপি লাগবে কেন? এই ধরনের কাজে এটা লাগে জীবনে এই প্রথম শুনলাম। একাডেমিয়ার কোথাও এনআইডি কার্ড? যাহোক বিনীতভাবে বললাম এইসব পদে আমার ন্যূনতম আগ্রহ নাই।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরেক পীড়ার নাম অ্যাওয়ার্ডের জন্য দরখাস্ত করা। আমাকে অনেকেই ডিন, ইউজিসিসহ অনেক জায়গাতেই অ্যাওয়ার্ডের জন্য দরখাস্ত করতে অনুরোধ করেছে। যেই পুরস্কার নিজে দরখাস্ত করে পেতে হয় সেই পুরস্কারের আমার দরকার নাই।

দরখাস্ত করা মানে কি? মানে হলো আমি মনে করি আমি পুরস্কারের যোগ্য। এই ভাবনাটাই অসুস্থ। তাছাড়া বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পুরস্কারগুলো রাজনৈতিক। যখন যেই দল ক্ষমতায় সেই দলের শিক্ষকরাই এইসব পুরস্কার মুরস্কার পায়। আমি দরখাস্ত করব তার মানে হলো আমার ভাগ্য নিয়ে খেলার বলটা তাদের কোর্টে দিয়ে দেওয়া।

পুরস্কার বা অ্যাওয়ার্ড হবে এমন আমার অগোচরে আমার সমস্ত গবেষণাপত্র ঘেটে দেখে একদিন আমাকে চিঠির মাধ্যমে জানাবে যে আমি পুরস্কার পেতে যাচ্ছি। দেশটা এমন যে পুরস্কার কিভাবে দিতে হয় সেটাই আমরা এখনো শিখিনি।

তাছাড়া দুইয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বোর্ডে থেকে বুঝতে পেরেছি এইসবে থেকে ভালো কিছু করা যায় না। শুধু শুধু এইগুলোতে থেকে মনের কষ্ট বাড়ে। তাছাড়া আরেক বিড়ম্বনা হলো এর জন্য পারিশ্রমিক দেওয়া। শিক্ষকতা ও গবেষণা পেশা এমন এক পেশা যেখানে অনেক কাজ করতে হয় বিনা পারিশ্রমিকে।

আরও পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজনীতি-ব্যবসা যায় না, এই জ্ঞান আমাদের নেই

গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশনার জন্য পিয়ার রিভিউ প্রসেস হচ্ছে একটা কষ্টিপাথরের মত। এই সিস্টেমটা আছে বলেই বিজ্ঞান এত রিগোরাস। এইটা আছে বলেই যে কেউ যা ইচ্ছে তাই বিজ্ঞান বলে চালিয়ে দিতে পারে না। এর মধ্যে flaw থাকতে পারে তবুও এইটাই চলবে যতদিন না এর চেয়ে বেটার পদ্ধতি তৈরী হয়।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এটি টোটাললি আনপেইড একটা জব। টাকা নেই, স্বীকৃতি নেই; কেবলমাত্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, সভ্যতা ও বিজ্ঞানের স্বার্থে নৈতিকভাবে সৎ থেকে অন্যের কাজে কন্ট্রিবিউট যাওয়ার নাম পিয়ার রিভিউ। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন পদ্ধতির অংশ হতে পারাটাও একটা unpaid জব হওয়া উচিত। এনভেলপ মানির যন্ত্রনায় কয়েকদিন আগে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবোর্ড থেকে নিজেকে বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ