বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাজনীতি-ব্যবসা যায় না, এই জ্ঞান আমাদের নেই

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ফটো

‘আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি’ নামে নতুন আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সিলেট সদরের টুলটিকর ইউনিয়নের টিবি গেইটে নির্মিত হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা আহমদ আল কবিরকে চিঠি পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

নতুন এই বিশ্ববিদ্যায়লকে নিয়ে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৭টি। যদিও আবেদনের দৌড়ে আরও অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন।

তিনি লিখেছেন, কল্পনা করা যায়? লিস্ট থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন মিলেছে। এর কয়দিন আগে আরেকটির অনুমোদন মিলেছিল।  ধারণা করা যায় এই ৫০টির লিস্ট থেকে ৫-১০ টিতো অনুমোদন পাবেই।

যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আবেদন করে তারা কারা? তারা কি শিক্ষাবিদ? তারা কি ফিলানথ্রপিস্ট (philanthropist)? তাদের মধ্যে আর যাই থাকুক আর না থাকুক অন্তত ফিলানথ্রপিস্ট মন নেই এইটা নিশ্চিত। ইত্তেফাকের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তারা হয় আওয়ামী লীগের বিত্তবান এবং প্রভাবশালী নেতা অথবা বিত্তবান আওয়ামী ঘরানার। বিএনপির সময় যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন পেয়েছিল তারাও একই ক্যাটাগরিরই ছিল। অর্থাৎ এটি যেন টিভি চ্যানেল, ব্যাংক, ইন্সুরেন্স কোম্পানি ইত্যাদি খোলার অনুমোদনের মত। এতে প্রমাণিত হয় আমরা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ বুঝিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যে রাজনীতি, ব্যবসা ইত্যাদি যায় না এইটুকু জ্ঞানও আমাদের নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় খোলাও যেহেতু একটি বড় ব্যাবসা সেইটা নিজের দলের মানুষ ছাড়া অন্যদের দিব কেন? এটাই আমাদের মানসকিতা। অনুমোদনের সময় কেবল দেখা হয় দলের প্রতি কতটা আস্থাশীল বা কত বড় নেতা।

একই কথা খাটে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে। আমরা গত পরশুদিন দেখলাম সুনামগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল পাশ হয়েছে। গতকাল আবার দেখলাম শিক্ষা মন্ত্রীর এলাকা চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের বিল এনেছেন। অর্থাৎ এখানেও দলীয় এমপি মন্ত্রীর আবদার। আমরা মুড়ি-মুড়কির মত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিচ্ছি। কোন প্রাক সার্ভে নেই, গবেষণা নেই, সাধারণ শিক্ষাবিদদের সাথে আলোচনা নেই। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক যোগান কোথা থেকে আসবে সেই চিন্তা নেই।

আবার শিক্ষক নিয়োগে বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ার বাধ্য বাধকতা আছে। সত্যিই যদি দেশের যুব সমাজকে সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান তাহলে বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ার বাধ্য বাধ্যকতা উঠিয়ে দিন। চীন ভারত কিংবা অন্য দেশের নাগরিকদেরও শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করুন। বিশ্ববিদ্যালয় বলবেন আর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে লোকাল খুঁজবেন তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় হবে কীভাবে? দেখেন চীনে কেন এখন বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয় আছে? কারণ তারা আন্তর্জাতিক জার্নাল বা ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন দিয়ে আন্তর্জাতিক বেতন প্যাকেজ ও গবেষণার সুযোগ দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেয়; যেখানে কোন দেশের নাগরিক বিবেচনায় নেওয়া হয় না।

শিক্ষকদের বেতন আন্তর্জাতিক মানের করুন যেন বিদেশিরা এখানে শিক্ষকতা করতে আসে। আপনাদের যদি দেশের যুব সমাজের প্রতি ন্যূনতম মায়াবোধ থাকতো আপনারা এই কাজটি করতেন। তখন আর আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য চীন, ভারত ও পশ্চিমা দেশে দৌড়াতে হবে না। দেশে শিক্ষার মান বাড়বে। কিন্তু আপনাদের নজরতো দেশের মানুষের উপকার করা নয়। যদি হতো তাহলে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার সময় কেন দলান্ধ অকর্মন্য শিক্ষক খোঁজেন?


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence