বর্ণের জাদুকর দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী

  © টিডিসি ফটো

জাদুকর একেক সময় একেক জিনিস নিয়ে খেলা দেখান। তিনি কিন্তু খেলাটা শুরু করেন খুব সাধারণ কিছু দিয়ে। আর আস্তে আস্তে দর্শকদের নিয়ে যান রহস্যময় জাদুর দুনিয়ায়। 

দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীও কিন্তু  প্রথমে শুরু করেছিলেন খুব সাধারণভাবেই। লিখতেন একটি দুটি লাইন সেখান থেকে ছোট ছোট গল্প। সেই গল্প গুলোকেই একসাথে করে তিনি লিখেছেন আস্ত একটি উপন্যাস।

উপন্যানটির নাম ‘পতিংবরা’ যে উপন্যাসের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি শব্দ ‘প’ বর্ণ দিয়ে শুরু হয়েছে, যা বাংলা ভাষা সাহিত্যে একেবারেই নতুন। শুধু বাংলা ভাষা সাহিত্য নয় বিশ্বসাহিত্যেও এ ধরনের সৃষ্টকর্ম বিরল।

তার এই সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিসরূপ ‘পতিংবরা’ উপন্যাসটি বাংলা একাডেমি ২০১১ সালে প্রথম প্রকাশ করে। এরপর অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬-তে জনপ্রিয় প্রকাশনি প্রকাশ করে। 

পরীক্ষায় প্রথম প্লেস পেলে পরীক্ষার্থীরা পায় পরমানন্দ, পায় প্রথম পুরস্কার। পিতা-মাতা পান পরম প্রশান্তি, পুলকে পরমানন্দে প্রতিবেশীরা পেতে পারেন পলান্ন, পরমান্ন, পায়েসান্ন প্রভৃতি। প্লেস পাওয়া পড়ুয়ারা প্রতিভার প্রভাবে পয়সা-কড়িও পেতে পারে। পাবলিক পরিক্ষায় প্লেস পাওয়াতে প্রতিষ্ঠানটিও প্রশংসা-পদমর্যাদা পেতে পারে প্রয়োজনানুরূপ।

কথাগুলো দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর পতিংবরা উপস্যাসের। প্রাঞ্জল ভাষায় ফুঁটে ওঠেছে প্রতিটি লাইনের অর্থ আর  প্রতিটি শব্দের পূর্বেই ‘প’ বর্ণের ব্যাবহার লক্ষনীয়। পতিংবরা উপন্যাসটি বাংলা বাংলাভাষা ও সাহিত্যে এক বিষ্ময়কর সৃষ্টি। লেখকের প্রায় পঁচিশ বছর গবেষনার ফসল এই ‘পতিংবরা’ উপন্যাসটি।

জাদুকরের জাদুর ছোঁয়াতে মুগ্ধ হয়না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তবে সেই জাদু যদি হয় ভাষা সাহিত্যে তাহলে তো কথাই নেই। একজন দক্ষ কথাশিল্পী খুব সহজেই তার দর্শকদের সুনিপুণ কথার মাধ্যমে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখতে পারেন। তেমনি একজন বর্ণের জাদুকর সাহিত্যিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী তার প্রতিভা দিয়ে পাঠকের মন জয় করেছেন।

পতিংবরা উপন্যাস ছাড়াও তিনি রচনা করেছেন নাটক ‘পাঠশালা পলায়ন’, কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয়বর্ণেষু’ এবং গল্পগ্রন্থ ‘বর্নবৈভব’। তার ‘বর্ণবৈভব’ রচনাটি বর্ন ও শব্দ বৈচিত্রে অলংকৃত বাংলা ভাষায় প্রথম গল্পগ্রন্থ।

তার এই বর্ণ বৈভব সম্পর্কে নাট্যকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রহমান রাজু বলেন,  বর্ণ- শব্দ ও বাক্য বন্ধনে কারিশমাটিক মানুষ দ্বিজেন বাবু। তিনি তার প্রতিটি গ্রন্থে তার সুণিপন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তার নাটক সূমহ প্রকৃতি পরম্পরায় খচিত- নীতি- আদর্শে জারিত আর ভাষার শৌকর্যের্ শাণিত। কাব্যতত্বের বিচারে সে নাটক কতখানি শিল্পতুল্য সে মানদন্ডে তাঁকে হাজির না করাই সঙ্গত। 

‘বর্ণবৈভব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময় উপমহাদেমের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, এমন গ্রন্থ লেখাও কি মানুষের পক্ষে সম্ভব? সত্যিই দ্বিজেন বাবু বিষ্ময়ের বিত্ত নিমার্ণ করেছেন।   

জানতে চাইলে লেখক দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী বলেন, আমি মূলত একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার সময় বিভিন্ন শব্দ নিয়ে গবেষণা করতে করতে দেখি একই বর্ণ দিয়ে শুরু অক্ষর জোড়া লাগিয়ে একটি বাক্য তৈরি করা যায়। আমি একের পর এক এমন বাক্য দিয়ে ছড়া, কবিতা, চিঠি, গল্প ও উপন্যাসও লিখে ফেললাম। মানুষের কাছে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য্য পৌঁছে দিতেই এ আয়োজন। 

ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বললেন, সম্প্রতি একটি মহাকাব্য নিয়ে কাজ করছি। কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য যেমন রামায়ণ অনরুসরণে, আর আমার কাব্য হবে মহাভারত অনুসরণে। যদিও লেখা শেষ হয়েছে তবে আরেকটু সময় লাগবে। প্রকাশকদের সাড়া পাচ্ছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কোন প্রকাশনির সাথে এ বিষয়ে কথা হয়নি।

লেখক পরিচিত: দ্বিজেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর জন্ম বেড়ে ওঠা দিনাজপুরে। পড়াশোনা করতে তিনি শিক্ষানগরী রাজশাহীতে আসেন। রাজশাহীতে শিক্ষালাভের পর রাজশাহীর শিরোইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

তিনি জাতীয় পযার্য়ে দুই বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী কতৃক স্বর্ণপদক সহ সম্মাননা লাভ করেছেন। ‘বর্ণবৈভব’ লেখার জন্য তিনি বর্ণের জাদুকর এবং ‘প্রিয়বর্ণেষু’ লেখার জন্যে কবিরত্ন উপাধিতে ভূষিত হন।

লেখক: শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ