এক কাপ চা, কিছু নিঃশব্দ ভালোবাসা

আজকে বিশ্ব চা দিবস
আজকে বিশ্ব চা দিবস  © টিডিসি সম্পাদিত

সন্ধ্যার নরম আলোটা যখন জানালার কাচ বেয়ে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, তখনই হয়তো কোথাও একটা টেবিলে ধোঁয়া উঠতে থাকে এক কাপ চা থেকে। পাশে বসে থাকে প্রিয় কেউ। চুপচাপ। চোখে-মুখে জমে থাকা হাজার কথা নিয়ে। আজকের দিনটা ঠিক তেমনই এক অনুভূতির দিন আন্তর্জাতিক চা দিবস।

আজ বুধবার, ২১ মে। বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক চা দিবস। ২০২০ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা দিনটিকে চা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। উদ্দেশ্য, বিশ্বব্যাপী চা উৎপাদক ও ভোক্তাদের অবদানকে সম্মান জানানো এবং টেকসই চা উৎপাদনের গুরুত্ব তুলে ধরা।

তবে আমাদের মতো চা ভক্ত জাতির কাছে এই দিনটির তাৎপর্য কেবল আনুষ্ঠানিকতাই নয়। চা আমাদের সংস্কৃতির, সম্পর্কের, দৈনন্দিন জীবনের গভীর এক অংশ। ক্লান্ত দুপুরে কিংবা জেগে থাকা রাতে, তর্কে-আড্ডায় কিংবা নিঃসঙ্গ একাকিত্বে এক কাপ চা যেন হয়ে ওঠে আশ্রয়, সহচর, কখনোবা বোঝার ভাষা।

শহরের ব্যস্ত ক্যাফে থেকে শুরু করে রাস্তার টঙ দোকান কিংবা গ্রামের বাঁশের বেঞ্চ চা তার ঠিকানা খুঁজে নেয় নিখুঁতভাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ‘চায়ের আড্ডা’ হয়ে ওঠে সম্পর্কের জন্মক্ষেত্র। অফিসপাড়ায় চা-পার্টির ফাঁকে বাঁধে বন্ধুত্ব কিংবা নীরব প্রতিযোগিতা। আবার ভেজা জানালার পাশে এক কাপ চা নিয়ে বসে থাকা একজন একা মানুষও খুঁজে পান একটু উষ্ণতার পরশ।

চায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রথম প্রেমের বুক ধড়ফড়ানো, বন্ধুর সঙ্গে শেষ দেখা, কিংবা প্রিয়জনের দীর্ঘ অপেক্ষার গল্প। তারুণ্যের ব্যস্ততায় কিংবা বার্ধক্যের নিস্তব্ধতায় চা একই রকম আপন।

এক কাপ চা যখন হাতে আসে, তখন শুধু এক চুমুক দিয়ে পান করাই হয় না, সেখানে চুমুক পড়ে জীবনের অভিজ্ঞতায়, আবেগে, স্মৃতিতে। দুই বান্ধবীর দেখা হওয়ার মুহূর্তে, বাবা-মেয়ের চুপচাপ বারান্দা ভাগ করে নেওয়ার বিকেলে, কিংবা কোনো ভিন্নমত প্রকাশের মধ্যেও একটি বিষয় ঠিক মিলেই যায় চা।

আজকের এ দিনে তাই ফিরে দেখা যায় সেইসব মুহূর্ত, যখন চায়ের কাপেই আটকে ছিল জীবন। এক কাপ চা কেবল পানীয় নয়, সেটা হয়ে ওঠে সময়ের সাথে এক অলিখিত বন্ধন।

প্রিয় মানুষটির সঙ্গে চুপিচুপি ভাগ করে নেওয়া চায়ের কাপ সে এক নিঃশব্দ সঙ্গীত। আর তাতেই গড়া হয় অনুভবের এক গোপন জগৎ, যেখানে হৃদয়ের ভাষা বলে ওঠে, আরও এক কাপ চা হবে?

লেখক: আমান উল্যাহ আলভী


সর্বশেষ সংবাদ