‘কারিগরি শিক্ষাই শিল্পোন্নয়নের মূল চাবিকাঠি’

মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার
মোঃ শাহ্ নেওয়াজ মজুমদার  © সংগৃহীত

কারিগরি শিক্ষাই হাতে কলমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে। একটি দেশের শিল্পোন্নয়নে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হলো সে দেশের শ্রমিক শ্রেণী বা কারিগরগণ। কারিগরি শিক্ষাই শ্রমিককে সনাতনধর্মী কাজ বাদ দিয়ে প্রযুক্তি নির্ভর কাজ করার হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকে। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনশক্তিই পারবে দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে অপ্রতিরোধ্য গতিতে উন্নত দেশের সারিতে বাংলাদেশের স্থান দখল করে নিতে। একজন কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি তার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার সম্পর্কে অনেকাংশেই নিশ্চিত থাকেন। যে কারনে তার চিন্তা,চেতনা,মনন,মেধা,সকল ক্ষেত্রেই তার দেশ শিল্প উন্নয়ন করার ভাবনা থাকে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের শিল্পায়নে ঈর্ষনীয় সাফল্য এসেছে। অর্থনৈতিক,সামাজিক,উন্নয়নের সূচক গুলোতে বাংলাদেশ সামনের সারিতে চলে এসেছে। এই সাফল্যের মুল চাবিকাঠি হলো নিম্নের তিনটি খাত:

রপ্তানি খাত
বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২০৩টি দেশে বাংলাদেশ তার পণ্য রপ্তানি করে, নি:সন্দেহে এটি একটি অনন্য সফলতা। বাংলাদেশ এখন বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল,হিমায়িত মাছ, চামড়া,চা, পাট, ঔষধ,কাঁকড়া, কৃষিজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, জাহাজসহ প্রায় ৭৫১টি পণ্য রপ্তানি করে থাকে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৬৯৯ কোটি ডলার যা জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৩৭.৫৬ শতাংশ। বর্তমান আধুনিক শিল্প কল কারখানায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত লোকবল কাজ করার কাড়নে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা দেশের শিল্প উন্নয়নকে তরান্বিত করে।

রেমিট্যান্স খাত
রেমিট্যান্স আমাদের জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস এবং রিজার্ভের একটি প্রধান অংশ। বাজেটের প্রায় এক তৃতীয়াংশই যোগান দেয় এই রেমিট্যান্স। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এই রেমিট্যান্সের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান পৃথিবীর ১৫৭টি দেশে প্রায় ৮০লাখ বাংলাদেশী কর্মরত আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থ বছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ২১৬১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ। প্রবাসী আয় আমাদের জিডিপিতে অবদান রাখছে ৪.৬ শতাংশ হারে। দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকজনই এই রেমিটেন্সের সুবিধাভোগী। বর্তমান সরকারের সঠিক পরিকল্পনায় কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে উত্তরোত্তর রেমিটেন্স আয় বাড়ানোর কাজ করছে শ্রম ও জনশক্তি মন্ত্রণালয় ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।

কৃষি ও কৃষিজাত খাত
কৃষির আধুনিকীকরণ ও বাণিজ্যিক চাষাবাদের পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরিতে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ করে উদ্বৃত্ত খাদ্য রপ্তানি হচ্ছে। কৃষি আমাদের জাতীয় অর্থনীতির জীবনী শক্তি। মোট শ্রমশক্তির ৪২.৬২ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ কৃষির সাথে জড়িত। মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান ১১.৬১ শতাংশ। আমাদের জাতীয় জিডিপির একটা বড় অংশ আসে কৃষি খাত থেকে। কৃষির উন্নয়নে রাষ্ট্র দ্বৈত সুবিধা ভোগ করে থাকে একদিকে আমদানি ব্যয় কমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয় অন্যদিকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায় রিজার্ভ বাড়ে। কৃষি ও কৃষিজাত অর্থাৎ প্রক্রিয়াজাত পণ্য তৈরিতে কারিগরি শিক্ষাই বড় ধরনের অবদান রাখছে। কারিগরি শিক্ষার ইতিবাচক ফলাফলের কারনে দেশজ কৃষি ও কৃষিজাত উৎপাদন সনাতন থেকে যন্ত্রভিত্তিক আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থায় নির্ভরশীল হয়েছে দেশ এবং উত্তরোত্তর দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরিশেষে, আমাদের ২০২২-২৩ অর্থ বছরে জিডিপি এর প্রবৃদ্ধি ৬.০৩ শতাংশে পৌঁছেছে। মাথাপিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার এবং ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি একমাত্র কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই তৈরি করা সম্ভব। এতে করেও দেশে দ্রুত শিল্পায়ন হবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, পণ্যের গুনগত মান বৃদ্ধি পাবে, কর্মসংস্থান ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাবে, দক্ষ শ্রমিক হিসেবে প্রবাস থেকে অধিকতর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। আর এভাবেই কারিগরি শিক্ষা আমাদের শিল্পোন্নয়নের মুল চাবিকাঠি হয়ে উঠছে।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি, চট্টগ্রাম


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence